শোলাকিয়া হামলায় অভিযুক্ত হচ্ছে পাঁচ জঙ্গি
2018.07.27
ঢাকা
হোলি আর্টিজান হামলার ছয় দিনের মাথায় কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে চালানো জঙ্গি হামলার দায়ে পাঁচ জঙ্গিকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট প্রস্তত করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে এই দুটি হামলা ছিল একই সূত্রে গাঁথা।
কিশোরগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল ইসলাম শুক্রবার বেনারকে বলেন, “শোলাকিয়া হামলার চার্জশিট আগামী রোববার জেলা আদালতে জমা দেওয়া হতে পারে। চার্জশিট আদালতে জমা দেওয়ার জন্য সরকারের অনুমোদন পাওয়া গেছে।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বেনারকে বলেন, “আমরা শোলাকিয়া হামলার চার্জশিট অনুমোদন দিয়েছি। পুলিশ শিগগিরই সেটি আদালতে জমা দেবে।”
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল ইসলাম বলেন, “আমাদের তদন্তে শোলাকিয়া হামলায় মোট ২৩ জনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ১৮ জন বিভিন্ন অপারেশনে মারা গেছে। আর পাঁচজন জীবিত আছে। তারা কারাগারে আছে।”
তিনি বলেন, “জীবিত পাঁচজনের মধ্যে তিনজন হোলি আর্টিজান হামলার চার্জশিটেও অভিযুক্ত। এরা হচ্ছে; জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, সোহেল মাহফুজ ও মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান। জীবিত অন্য দুজন হচ্ছে; জাহিদুল হক তানিম ও আনোয়ার হোসেন।”
নাজমুল বলেন, রাজীব গান্ধী ও সোহেল মাহফুজ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তারা বলেছে, সরকারকে চাপে ফেলতে ও বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র হিসাবে তুলে ধরতে হোলি আর্টিজান ও শোলাকিয়া ঈদগাহে হামলা পরিচালনা করে নিও জেএমবি।
এই দুই আক্রমণের আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করা।
তিনি জানান, “তদন্তে আমরা দেখেছি হোলি আর্টিজান হামলার মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরী শোলাকিয়া হামলারও মাস্টারমাইন্ড।”
ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, শোলাকিয়া হামলার সঙ্গে হোলি আর্টিজান হামলায় অংশ নেওয়া ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলের ছাত্র রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম ও মীর সামেহ মোবাশ্বেরের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তারা ২০১৬ সালের ২ জুলাই কমান্ডো অপারেশনে হলি আর্টিজান ক্যাফের ভিতর নিহত হয়।
২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জে পুলিশের জঙ্গি বিরোধী অভিযানে তামিম চৌধুরী নিহত হয়। যেহেতু তারা মারা গেছে, তাই তাদের নাম মামলার প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়বে বলে জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
দুই বছরের বেশি সময় ধরে তদন্ত শেষে গত ২৩ জুলাই ঢাকার মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হোলি আর্টিজান হামলার চার্জশিট জমা দেয় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।
২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকার গুলশানের ৭৯ নম্বর রোডের হোলি আর্টিজান বেকারি ও ক্যাফেতে হামলার রেশ না কাটতেই ৭ জুলাই ঈদের দিনে দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাতের স্থান কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় হামলা চালায় সিরিয়া-ভিত্তিক ইসলামিক স্টেটের সমর্থক এ দেশীয় জঙ্গি সংগঠন নিও জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)।
শোলাকিয়া হামলায় জঙ্গি আবির রহমান, দুই পুলিশ সদস্য এবং এক নারী নিহত হন। পুলিশি তৎপরতায় শোলাকিয়ায় জঙ্গিদের বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
দুই আক্রমণের পর পুলিশ-র্যাব বিভিন্ন আস্তানায় একের পর এক হামলা চালিয়ে জঙ্গিদের দমন করে। পুলিশি অভিযানে শতাধিক জঙ্গি নিহত হয়।
কাউন্টার টেরোরিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সাহয়তায় শোলাকিয়া হামলার তদন্ত করে কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশ।
পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম ২৩ জুলাই বেনারকে বলেন, জঙ্গিরা ঢাকায় বড় ধরনের হামলার জন্য ঢাকায় বেড়ে ওঠা চার জঙ্গি রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম, মীর সামেহ মোবাশ্বেরের ও আবির রহমানকে গাইবান্ধার চরে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেয়। এদের তিনজন গুলশানে হোলি আর্টিজান হামলায় অংশ নেয়। আবির রহমানকে পাঠানো হয় শোলাকিয়া ময়দানে হামলার জন্য।
পরপর ওই দুটি হামলা একই সুত্রে গাঁথা ছিল বলে মত দেন মনিরুল ইসলাম।