যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার দেলোয়ার সম্পর্কে তথ্য চেয়েছে বাংলাদেশ
2019.07.30
ঢাকা

আফগানিস্তান পৌঁছে তালেবানে যোগ দিয়ে আমেরিকান সৈন্যদের হত্যার উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়ার সময় নিউ ইয়র্কে গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে দেশটিকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ।
তবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এখনো এ সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি বলে মঙ্গলবার বেনারকে জানান বাংলাদেশ পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) এর উপ কমিশনার সাইফুল ইসলাম।
বাংলাদেশি বংশদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক দেলোয়ার মোহাম্মদ হোসেনকে (৩৩) গত শুক্রবার সকালে নিউ ইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই।
দেলোয়ার তালেবানে যোগ দিয়ে মার্কিন সেনাদের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য আফগানিস্তান যাবার উদ্দেশ্যে থাইল্যান্ডগামী একটি ফ্লাইটে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়ার চেষ্টা করছিলেন বলে জানায় এফবিআই।
“আমরা তাঁর গ্রেপ্তারের কথা পত্রপত্রিকা থেকে জেনেছি,” জানিয়ে সাইফুল ইসলাম বলেন, “আমরা তাঁর সম্পর্কে তথ্য চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে চিঠি দিয়েছি। তবে এখনো উত্তর পাইনি।”
“আশা করি তারা আমাদেরকে দেলোয়ার সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবে,” মন্তব্য করে সাইফুল বলেন, “তথ্য পেলে আমরা তাঁর বিষয়ে তদন্ত শুরু করব।”
গ্রেপ্তারের পর ২৬ জুলাই নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনের আদালতে তোলা হলে বিচারক জামিন না দিয়ে দেলোয়ারকে কারাগারে পাঠান।
দেলোয়ারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে সহযোগিতা, বিশেষ করে বিদেশে অবস্থানরত আমেরিকান সৈন্যদের হত্যায় সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে বলে মামলার নথিতে জানান নিউ ইয়র্ক সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট এর অ্যাটর্নি জিওফ্রে বারম্যান।
“সন্দেহ করা হচ্ছে যে হোসেন আমেরিকানদের হত্যা করতে চেয়েছিলেন, বিশেষত, বিদেশে অবস্থানকারী আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের হত্যা করাই তাঁর মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল,” জানান জিওফ্রে বারম্যান।
আদালতে জিওফ্রে বারম্যান এর দাখিল করা নথি থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকেই দেলোয়ার তালেবানে যোগ দেবার পরিকল্পনা করছিলেন।
তবে বারম্যানের মতে, নিউ ইয়র্ক পুলিশ ও এফবিআইর দুর্দান্ত পদক্ষেপের কারণে দেলোয়ারের ধংসাত্মক পরিকল্পনা ভণ্ডুল হয়ে যায়।
আদালতের বিবরণ থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে পাকিস্তান হয়ে আফগানিস্তানে যাবার পরিকল্পনা ছিল দেলোয়ারের। আফগানিস্তানে লড়াইর প্রস্তুতি হিসেবে ট্রাকিং গিয়ার এবং ওয়াকিটরি মতো সরঞ্জামও সংগ্রহ করেন দেলোয়ার। এছাড়া আফগানিস্তান পৌঁছানোর পর অস্ত্র কেনারও পরিকল্পনা ছিল তাঁর।
জিওফ্রে বারম্যান জানান, ২০১৮ থেকেই দেলোয়ার এফবিআইর নজদারিতে ছিলেন। ওই সময় এফবিআইর এক ছদ্মেবেশী এজেন্টের সাথে তালেবানে যোগ দেবার পরিকল্পনা সম্পর্কে আলোচনা করেন দেলোয়ার।
বারম্যান জানান, “আমেরিকান বাহিনীর ওপর আক্রমণ বৈধ,” বলেও ওই এজেন্টের কাছে মন্তব্য করেছিলেন দেলোয়ার। সে উদ্দেশ্যে প্রথমে থাইল্যান্ড ও পরে পাকিস্তান হয়ে আফগানিস্তানে প্রবেশ করার পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি এফবিআইর ছন্দবেশি এজেন্টেকে জানিয়েছিলেন।
বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের পর নাগরিকত্ব পাওয়া দেলোয়ার মোহাম্মদ হোসেন নিউ ইয়র্কের ব্রঙ্কসের বাসিন্দা। আদালতের বিবরণ অনুযায়ী, অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ ১৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে তাঁর।
এর আগে নিউ ইয়র্কের পোর্ট অথরিটি বাস টার্মিনালের ভূগর্ভস্থ পথে বিস্ফোরণ ঘটানোর অভিযোগে ২০১৭ সালের ১১ ডিসেম্বর আকায়েদ উল্লাহ নামে এক বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছিল।
মধ্যপ্রাচ্যের উগ্রবাদী জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) এর মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়ে এই বিষ্ফোরণ ঘটানোর চেষ্টা করছিলেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানান আকায়েদ।
এছাড়া চলতি বছরের ৬ জুন নিউ ইয়র্কের কুইন্স এলাকার বাসিন্দা আশিকুল আলম নামের আরেক বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করে দেশটির পুলিশ।
আশিকুল নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে গ্রেনেড নিক্ষেপের পরিকল্পনা করেছিলেন বলে অভিযোগপত্রে জানানো হয়। আদালতের নথি অনুয়ায়ী, আশিকুল ওসামা বিন লাদেনের সমর্থক ছিলেন।
আশিকুলও এফবিআইর নজরদাতে ছিলেন এবং এফবিআইর এক ছদ্মবেশি এজেন্টের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র কেনার পর তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।