জেএমবির ‘বোমা মিজান’ ভারতে গ্রেপ্তার
2018.08.07
কলকাতা
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের খাগড়াগড় বিস্ফোরণের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত ও বিহারের বুদ্ধগয়ায় বিস্ফোরণের মূল চক্রী জামাআতুল মুজাহিদীন (জেএমবি) জঙ্গি মহম্মদ জাহিদুল ইসলাম ওরফে কওসরকে দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের বেঙ্গালুরুর কাছেরামানগর থেকে মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করেছে ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনআইএ)।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এনআইএ এই গ্রেপ্তারের খবর জানায়। বিবৃতিতে বলা হয়, সে ভারতে জেএমবির একজন শীর্ষ নেতা। খাগড়াগড় বিস্ফোরণ এবং বাংলাদেশের একাধিক মামলায় কওসর ওয়ান্টেড ছিল।
এনআইএ আরও জানিয়েছে, বিহারের বুদ্ধগয়ায় বিস্ফোরণ ঘটনাতে কওসর মূল চক্রী। জঙ্গিদের মধ্যে জাহিদুল ও কওসর নাম ছাড়াও সে মুন্না, মিজান, বোমা মিজান নামেও পরিচিত।
ঢাকায় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের কর্মকর্তারা বলছেন, জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের মজলিশে শুরার সদস্য কওসর ওরফে বোমা মিজান যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। ২০০৯ সালে সে ময়মনসিংহের একটি থানায় হামলার ঘটনায় সাজা পায়।
ছিনিয়ে নেওয়া ওই জঙ্গিদের মধ্যে পুরোনো জেএমবির প্রধান সালেহীন ওরফে সানি (৩৮) এবং রাকিবুল হাসান ওরফে হাফেজ মাহমুদ (৩৫) মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। অন্যজন জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজান (৩৫)।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র মাসুদুর রহমান বলেছেন, ভারত তাঁদেরকে বোমা মিজান গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানিয়েছে।
“বোমা মিজান মোস্ট ওয়ান্টেড আসামিদের একজন। গ্রেপ্তারের পর ভারত তাঁর ব্যাপারে বাংলাদেশের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ করেছে,” মাসুদুর রহমান বলেন।
যেভাবে গ্রেপ্তার
বিহারের বুদ্ধগয়ায় বিস্ফোরণের ঘটনায় জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ মোট ১০ জনকে চিহ্নিত করেছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে মোট ৫ জনকে।
গত ৩ আগস্ট কেরালা থেকে এনআইএ গ্রেপ্তার করে আরও দুই জেএমবি জঙ্গিকে। তাঁরা হলেন মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে তুহিন ওরফে শাহিন এবং আবদুল করিম ওরফে ছোটা।
প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে, ছোটার বাড়ি মুর্শিদাবাদে। আর তুহিনের বাড়ি বীরভূমে। এরা সত্যি মুর্শিদাবাদ বা বীরভূমের কি না, এখন তা যাচাই করে দেখছে এনআইএর গোয়েন্দারা।
এই দুজনও খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলার আসামি। এই দুই জঙ্গিও গত জানুয়ারিতে দালাই লামার বুদ্ধগয়া সফরের প্রাক্কালে বোমা বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত ছিল বলে এনআইএ জানিয়েছে। তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার হলেন কওসর ওরফে বোমা মিজান।
গত ১৯ জানুয়ারি বিহারের বুদ্ধগয়ায় কালচক্র ময়দানের কাছে একটি বিস্ফোরণ ঘটে। এই বিস্ফোরণে কেউ হতাহত হয়নি। তবে পুলিশ আশপাশ থেকে বেশ কিছু আইইডি উদ্ধার করে।
এনআইএ জানায়, সোমবারই কওসরকে বেঙ্গালুরুতে এনআইএর বিশেষ আদালতে তোলা হয়। বিচারক তাঁর পাঁচ দিনের ট্রানজিট রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এবার তাকে বুদ্ধগয়ায় বিস্ফোরণের মামলায় পাটনার আদালতে হাজির করা হবে।
কলকাতায় এনআইএ আদালতে খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলায় ২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার প্রক্রিয়া চলছে। এই মামলায় পাঁচ পর্বে মোট ৩৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। এই তালিকায় থাকা পলাতকদের মধ্যে বুরহান শেখকে গ্রেপ্তার করা হয় গত বছরের সেপ্টেম্বরে। আর এবার গ্রেপ্তার হলো কওসর।
এনআইয়ের আইনজীবী শ্যামল ঘোষ বেনারকে বলেন, “কওসরকে বর্তমানে বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণের ঘটনায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাই এখন তাকে খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলায় যুক্ত করা হচ্ছে না।”
ভারতে জেএমবির মউিউল
২০১৪ সালের ২ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার খাগড়াগড়ের একটি দোতলা বাড়িতে গোপনে বোমা তৈরির সময়ে আচমকা বিস্ফোরণে দুই জঙ্গি শাকিল গাজি ও করিম শেখ নিহত হয়। তদন্তে বেরিয়ে আসে, বিস্ফোরণে নিহত দুজনই ছিল বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবির সদস্য।
আদালতে পেশ করা এনআইএয়ের অভিযোগপত্রে বলা হয়, বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জামাআতুল মুজাহিদীন (জেএমবি) ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, অসম ও ঝাড়খন্ডে নেটওয়ার্ক তৈরি করে জিহাদি কার্যক্রম চালায়। পরে তা আরও কয়েকটি রাজ্যে ছড়িয়ে দেয়।
এনআইয়ের এক কর্মকর্তা বেনারকে বলেন, “বিস্ফোরণের ঘটনার অনেক আগে থেকেই জেএমবির নেতারা পশ্চিমবঙ্গে মডিউল তৈরির কাজ শুরু করেছিল। এ জন্য বিভিন্ন মাদ্রাসাকে গোপন কার্যক্রমের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল।”
সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা নীলয় ঘোষাল বেনারকে বলেন, “খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পর জেএমবি জঙ্গিরা কিছুদিন আত্মগোপন করে থাকলেও তারা ভারতের দক্ষিণের রাজ্যগুলোতে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা যে করে এসেছে তা কেরল ও কর্ণাটক থেকে জেএমবির জঙ্গিদের গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনায় প্রমাণিত।”
প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন ঢাকা থেকে প্রাপ্তি রহমান।