দুই কোটি টাকাসহ জঙ্গি অর্থায়নকারী আটক
2017.08.08
ঢাকা

জঙ্গিবাদে অর্থায়নের অভিযোগে সিলেটের হবিগঞ্জ থেকে প্রায় দুই কোটি টাকাসহ এক ব্যক্তিকে আটক করেছে বাংলাদেশের পুলিশ। দীর্ঘদিন তুরস্কে বসবাস করা মোস্তাক আহমেদ খাঁ নামের এই ব্যক্তি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ এনে দেশের জঙ্গি সংগঠনকে সহায়তা করতেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে।
এদিকে এক যুগ আগে সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় ১৪ জেএমবি সদস্যকে মঙ্গলবার ২০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছে টাঙ্গাইলের আদালত। পাশাপাশি তাদের প্রত্যেককে ৩০ হাজার করে জরিমানা করা হয়েছে। এ অর্থ অনাদায়ে আরও ৩ বছর করে বিনাশ্রম কারাবাস করতে হবে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে হলে এর পেছনে অর্থায়ন বন্ধ করা জরুরি। এর জন্য সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা পাশাপাশি অর্থায়নকারীদেরও সূত্রও খুঁজে বের করা দরকার।
“শুধু জঙ্গি গ্রেপ্তার এবং বন্দুকযুদ্ধের মাধ্যমে জঙ্গিবাদ মোকাবিলা সম্ভব নয়। জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা করতে হলে এর পেছনে অর্থায়ন বন্ধ করতে হবে। বিদেশি প্রতিষ্ঠান জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে তথ্য বিনিময়ও করা যেতে পারে,” বেনারকে বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহফুজুল হক মারজান।
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মতে, “দেশে জঙ্গিবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে এমন সকল প্রতিষ্ঠানকে নিষিদ্ধ করতে হবে। অন্যথায় আইনগতভাবে বৈধ থাকায় তাঁরা বিভিন্ন সূত্র থেকে অর্থ সংগ্রহ করে শক্তিশালী হতে থাকবে। এর আগেও বিভিন্ন মাদ্রাসা বিদেশি অর্থ নিয়ে অস্ত্র কারখানা গড়েছে।”
তিনি বেনারকে বলেন, “তুরস্ক, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের অনেক এনজিও বাংলাদেশের জঙ্গিবাদের পেছনে বিনিয়োগ করে থাকে। এ বিষয়ে সরকারের নজরদারি আরও বাড়াতে হবে।”
গত মে মাসে সৌদি আরবের রিয়াদে অনুষ্ঠিত আরব-ইসলামিক-আমেরিকান সম্মেলনে অংশ নিয়ে জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় অস্ত্র ও অর্থ জোগান বন্ধে বৈশ্বিক উদ্যোগের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।
মানি লন্ডারিং মামলার আসামি মোস্তাক
২৬ বছর বয়সী মোস্তাককে সোমবার গভীর রাতে হবিগঞ্জ সদর থানাধীন তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি)। এ সময় তাঁর কাছ থেকে প্রায় দুই কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়।
মঙ্গলবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি’র স্পেশাল এসপি (অর্গানাইজড ক্রাইম) মোল্লা নজরুল ইসলাম জানান, “জঙ্গি অর্থায়নের অন্যতম ‘হোতা’ মোস্তাক সাত থেকে আটটি প্রতিষ্ঠান ও একাধিক ব্যক্তির মাধ্যমে প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা লেনদেন করেছে।
তিনি জানান, ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ অর্থের উৎস ও ব্যবহারের বিষয়ে সদুত্তর দিতে না পারায় মুদ্রা পাচার মামলায় মোস্তাককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিআইডি এ মামলার তদন্ত করছে।
এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক, বিশেষ ক্ষমতা আইন ও মারামারিসহ পাঁচটি মামলার সন্ধান পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মোস্তাক আহমেদ ১০-১১ বছর আগে অবৈধভাবে তুরস্কে যায়। এর আগে সে জামায়াতে ইসলামের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল।
জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার শাহরিয়ার কবির অবশ্য দেশের সকল জঙ্গিবাদের ‘মূল’ হিসেবে জামায়াত ইসলামকে দায়ী করে এই দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানান।
এদিকে সিআইডি জানায়, তুরস্কে থাকা অবস্থায় দেশটির সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ে মোস্তাক। পাঁচ বছর আগে দেশে ফিরে বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে জঙ্গি তৎপরতা ত্বরান্বিত করতে বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেন করে সে।
বিদেশে থেকেই সে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, এনজিও, গার্মেন্টস ও ব্যক্তির নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেন করেছে বলেও জানায় সিআইডি।
এর আগে গত জুন মাসে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে জঙ্গিবাদে অর্থায়ন ও পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগে জিম টেক্স গার্মেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমরান আহমেদকে (৩৭) গ্রেপ্তার করে র্যাব।
১৪ জেএমবির ২০ বছর করে জেল
২০০৫ সালে সারা দেশে একযোগে বোমা বিস্ফোরণের মামলায় ১৪ জন জেএমবি সদস্যকে ২০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত।
এদের মধ্যে ১০ জন কারাগারে রয়েছে। বাকিরা পলাতক। এসব আসামিদের বাড়ি দেশের বিভিন্ন স্থানে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম খান বেনারকে বলেন, “সশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেক আসামিকে ৩০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছেন আদালত। যা অনাদায়ে আরও তিন বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।”
প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৪টি জেলায় একত্রে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় জেএমবি সদস্যরা। সেদিন টাঙ্গাইলের কোর্ট চত্বর, বেবিস্ট্যান্ড ও শহীদ জগলু রোড এলাকায় বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় তারা। পরে ওই ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা হয়।
“২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর ১৭ জনকে আসামি করে এ মামলার অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। এদের মধ্যে তিনজন আসামি মারা গেছেন,” বেনারকে জানান আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শামীম চৌধুরী দয়াল।