ঢাকায় পুলিশি অভিযানের মুখে এক জঙ্গি আত্মঘাতী
2017.08.15
ঢাকা

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে এক যুবক নিহত হয়েছে। রাজধানীর পান্থপথের একটি আবাসিক হোটেলে পুলিশ অভিযান শুরু করলে সে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়।
“নিহত ওই যুবক নব্য জেএমবির সদস্য। আত্মসমর্পণের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে সে ‘সুইসাইড ভেস্টে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী’ হয়েছে,” ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের জানান পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক।
পুলিশ এই অভিযানের নাম দিয়েছে ‘অপারেশন অগাস্ট বাইট’। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও সোয়াট সদস্যরা অভিযানে অংশ নেয়।
নিহত যুবকের নাম সাইফুল ইসলাম। খুলনার ডুমুরিয়ার ছেলে সাইফুল খুলনা বিএল কলেজে রাষ্ট্র বিজ্ঞানের ছাত্র ছিল। ওই ঘটনায় একজন সাধারণ নাগরিক ও একজন পুলিশ সদস্য আহত হন।
একেএম শহীদুল হক ঘটনাস্থলে আয়োজিত এক তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস লক্ষ্য করে শক্তিশালী বোমাসহ সাইফুল হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে এসে ওঠেন।
উল্লেখ্য, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের নিজস্ব বাসভবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনাল ওই বাসভবন থেকে র্সবোচ্চ ৩০০ গজ দূরে অবস্থিত।
প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি ভোর সাড়ে ছয়টার দিকে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ফুল দিতে যান বলে বেনারকে জানান পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের ফোকাল পয়েন্ট মনিরুজ্জামান।
আগের রাত থেকে ওই এলাকা ঘিরে রাখা হলেও প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি এলাকা ছাড়ার পর সকাল সাড়ে নয়টার দিকে অভিযান শুরু হয়। ঘটনার সময় তাঁরা উভয়েই গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ছিলেন বলেও জানান মনিরুজ্জামান।
আগে থেকে সতর্ক থাকায় ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান আইজিপি।
“ধারণা করছি, ৩২ নম্বরে যারা শ্রদ্ধা জানাতে যায়, তাদের ওপর হামলার পরিকল্পনা ছিল এই জঙ্গির,” শহীদুল হক বলেন।
আইজিপি আরও বলেন, ওই যুবককে কাল রাত থেকে আত্মসমর্পণের অনুরোধ করতে শুরু করে পুলিশ। সকালে পুলিশ অভিযান শুরু করলে সে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। হোটেলের ওই কক্ষের দরজা জানালা ও দেওয়াল উড়ে যায়।
এদিকে পুলিশ সদর দপ্তরের কাউন্টার টেররিজম ফোকাল পয়েন্ট মনিরুজ্জামান বলেন, “সুস্পষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়। ছেলেটি গতকাল রাত ৯টার দিকে হোটেলে ওঠে। হোটেলের চার তলায় সে অবস্থান করছিল।”
যেভাবে অভিযান
হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালের উল্টো দিকের একটি দোকানের কর্মচারী সালাউদ্দীন। তিনি বলছিলেন, রাত সাড়ে ১২টা ১টার দিকে তাঁরা এলাকায় পুলিশের উপস্থিতি বাড়তে দেখেন। তাঁরা ধারণা করছিলেন, ১৫ আগস্ট বলে হয়ত পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। রাত সাড়ে ৩টার দিকে তাঁরা বুঝতে পারেন বিশেষ কিছু ঘটতে পারে।
“আমরা এখানে কাজ করি। এখানেই ঘুমাই। ভোরবেলা যখন দোকানের ঝাঁপ খুলতে গেছি, তখন আমাদের বাইরে বের হতে নিষেধ করা হয়। একটু পর দেখি বিভিন্ন বাহিনীর লোকজনে এলাকা ছেয়ে গেছে,” সালাউদ্দীন বেনারকে বলেন।
দিবাগত রাত থেকে তৎপরতা শুরু হলেও সকাল ৮টার আগে সংবাদমাধ্যমও জানতে পারেনি কী হতে যাচ্ছে। জনবহুল এলাকাটির চারদিক পুলিশ সকালে ঘিরে ফেলে। যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সকাল ৯ টা ৪৪ এ প্রথম হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালের দিকে পুলিশ গুলি ছোড়ে। তারপরই বিকট শব্দে হোটেলের দেয়াল ধসে পড়তে দেখা যায়। এরপর আরও দুই রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা যায়। সকাল ১০টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের লোকজন আহত অবস্থায় একজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
একজনই ছিল, বিস্ফোরক ছিল শক্তিশালী
অভিযানে অংশগ্রহণকারী এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, অভিযানের শুরুতেই তাঁরা জানতে পেরেছিলেন ভেতরে একজন রয়েছে। তবে তার কাছে শক্তিশালী বোমা ছিল।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অভিযানের প্রথম পর্ব শেষ হলে, বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। ওই দলের অতিরিক্ত উপকমিশনার ছানোয়ার হোসেন কথা বলছিলেন বেনারের সঙ্গে।
“যুবক বোমা বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। যে কক্ষে সে উঠেছিল সেখানে একটি চামড়ার ব্যাগেও বোমা রয়েছে। আমরা কাজ করছি। বোমাটি কী ধরনের সে সর্ম্পকে জানতে কিছুটা সময় লাগবে,” ছানোয়ার বলেন।
জঙ্গিবাদ পুরোপুরি নির্মূল হয়নি
সোমবার কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইমের প্রধান মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, জঙ্গি সংগঠনগুলো খণ্ড বিখণ্ড হয়ে গেছে। তাদের পক্ষে সংগঠিত হওয়া কঠিন। কিন্তু যে ‘অপ আদর্শ’ তাদের জঙ্গি হামলায় উজ্জীবিত করছে, সেটি নির্মূল করা না গেলে জঙ্গিবাদ দমন করা যাবে না।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটিজ স্টাডিসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো শাফকাত মুনীর বলছিলেন, এই ঘটনা প্রমাণ করে জঙ্গিবাদ শেষ হয়ে যায়নি।
“দেখুন, জঙ্গিবাদ ছিল, আছে। এটিকে পুরোপুরি নির্মূল করা যায়নি। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রশংসনীয় কাজ করছে। তাদের সব সময়ই সতর্ক থাকতে হবে,” শাফকাত বলেন।
তবে পান্থপথের স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলেন, গত দু সপ্তাহ ধরে রাতে বাড়ি ফেরার সময় তাঁকে পুলিশ পরীক্ষা করেছে। পেশায় নাট্যনির্মাতা ওই ব্যক্তির প্রশ্ন, "হোটেল ওলিওতে পৌঁছানোর আগে তিনটি চেকপোস্ট পার হয়ে বোমা নিয়ে ওই যুবক কী করে পৌঁছাল?"