খাগড়াগড় বিস্ফোরণ: পুরস্কার ঘোষিত জেএমবি জঙ্গি গ্রেপ্তার
2017.09.15
কলকাতা

বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলার অন্যতম আসামী বুরহান শেখকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দশ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে ভারতের আদালত।
তিন বছর ধরে পালিয়ে থাকার পর বৃহস্পতিবার রাতে তাকে বউবাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
শুক্রবার অভিযুক্তকে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএ-র হাতে তুলে দেওয়ার পর আদালতে পেশ করা হলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত তার দশ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার খাগড়াগড়ের একটি দোতলা বাড়িতে গোপনে বোমা তৈরির সময়ে আচমকা বিস্ফোরণে দুই জঙ্গি শাকিল গাজি ও করিম শেখ নিহত হয়।
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুই শিশুসহ গুলসোনা বিবি এবং আলিমা বিবি নামে দুই মহিলাকে গ্রেপ্তার করে। তদন্তে বেরিয়ে আসে, বিস্ফোরণে নিহত দুজনই ছিল বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবির সদস্য।
বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জামাআতুল মুজাহিদীন (জেএমবি) ভারতের তিন রাজ্যে কীভাবে নেটওয়ার্ক তৈরি করে জিহাদি কার্যক্রম চালাচ্ছিল, তা পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার খাগড়াগড় বিস্ফোরণের তদন্তেই প্রথম প্রকাশ পায় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এনআইএ-র আইনজীবিী শ্যামল ঘোষ বেনারকে বলেন, “অভিযুক্ত বুরহান শেখকে ধরিয়ে দেবার জন্য ৩ লক্ষ রুপির পুরস্কার ঘোষণা করেছিল এনআইএ।”
“অভিযুক্তদের সকলের বিরুদ্ধেই অবৈধ কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন (ইউএপিএ), সন্ত্রাস আইন, অস্ত্র আইন, বিস্ফোরক আইন ও বিদেশি আইনে অভিযোগ আনা হয়েছে,” বেনারকে বলেন ঘোষ।
তদন্ত শেষে আদালতে পেশ করা এনআইএ’র অভিযোগপত্রে বলা হয়, খাগড়াগড় বিস্ফোরণের সূত্রে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে যায়। জেএমবি প্রথমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ঝাড়খন্ডে ঘাঁটি তৈরি করে এবং পরে তা অন্য আরও কয়েকটি রাজ্যে ছড়িয়ে দিয়েছিল।
আদালতে পেশ করা নথিতে বলা হয়েছে, তদন্তে উঠে এসেছে যে, পরিকল্পনা মাফিক ও অত্যন্ত সংগঠিতভাবে কিছু যুবককে সংগঠনে নিয়োগ করে তাদের জিহাদি কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ করতে মগজধোলাই ও জঙ্গি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিল জেএমবি।
এনআইএ জানিয়েছে, “জঙ্গিদের বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল সন্ত্রাসের মাধ্যমে বাংলাদেশের বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করা এবং সেখানে শরিয়তি শাসন চালু করা।”
খাগড়াখড় বিস্ফোরণ মামলা
খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলায় এনআইএ-র আদালতে মোট ৩৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। বুরহানকে ধরে ২৬ জন বর্তমানে ভারতের জেলে এবং একজন বাংলাদেশের পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। ৭ জন এখনো পলাতক।
আদালত মোট ২৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জ ফ্রেম করে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। গত ১৩ জুলাই থেকে এই বিচার চলছে।
গত বৃহস্পতিবারই এক সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের পর আদালত জানিয়েছে, পরর্বতী সাক্ষ্যগ্রহণ হবে ২০ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর।
মাদ্রাসার আড়ালে জেহাদি প্রশিক্ষণ
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ মাদ্রাসার আড়ালে জেহাদি প্রশিক্ষণ শিবিরও চালাত জেএমবি। বিস্ফোরণের তদন্তে গিয়ে এমন বেশ কিছু মাদ্রাসার সন্ধান পেয়েছে গোয়েন্দারা। এনআইএ-র এক কর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে একথা জানান।
“এই সব মাদ্রাসা ও গোপন ঘাঁটিতে জেহাদিদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ যেমন দেওয়া হতো তেমনি গ্রেনেড ও আইইডি তৈরির কাজ হতো। ধৃতদের জেরা করে এই তথ্য জানা গেছে”, বলেন তিনি।
তিনি বলেন, বর্ধমানের মঙ্গলকোটের শিমুলিয়ার যে মাদ্রাসাকে জেএমবির জঙ্গী ও জেহাদি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বলে চিহ্নিত করেছে সেটি বুরহানের জমির উপরই তৈরি। সে নিজেও এর সঙ্গে যুক্ত ছিল।
বুরহানের গ্রেপ্তারকে বড় সাফল্য বলে পুলিশ দাবি করলেও সাবেক গোয়েন্দা কর্তা তীর্থ ব্যানার্জি বলেন, “এতে আত্মসন্তুষ্টির কোনও কারণ নেই। এখনও যে কজন পলাতক রয়েছে, তারা যে কোনও সময় নাশকতা চালাতে পারে। একইভাবে গোপনে জেহাদি তৈরির কাজও চালিয়ে যেতে পারে। বরং সতর্ক থাকাট জরুরি।”