বাংলাদেশে কাশ্মীরের ‘গজওয়াতুল হিন্দ’ গঠনের চেষ্টা, দুই জঙ্গি গ্রেফতার
2019.09.27
ঢাকা

বাংলাদেশে ভারতীয় আল-কায়েদার কাশ্মীর শাখা ‘গজওয়াতুল হিন্দ’ প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকা ও নোয়াখালী থেকে দুই সন্দেহভাজন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)।
পৃথক ঘটনায় পুলিশের কাউন্টার টেররজিম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ঢাকায় গ্রেফতার করেছে আরও দুই জঙ্গিকে। এই চার জনই আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সদস্য বলে জানায় পুলিশ।
গজওয়াতুল হিন্দ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা
নোয়াখালী ও ঢাকা থেকে দুই জঙ্গিকে গ্রেপ্তারের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সদর দপ্তরের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান।
তিনি বলেন, গত বুধবার রাতে নোয়াখালী জেলার চাটখিল থেকে মেহেদী হাসান জয় (২১) নামে এক সন্দেহভাজন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁর দেয়া তথ্য মতে, ঢাকার শ্যামলী থেকে আরেক সন্দেহভাজন জঙ্গি শাহজাহান হোসেন ওরফে ইমনকে (১৯) গ্রেপ্তার করে এটিইউ।
তাঁদের বিরুদ্ধে চাটখিল থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দায়েরের কথা বেনারকে জানিয়েছেন নোয়াখালী জেলার পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন।
পুলিশ ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে গজওয়াতুল হিন্দ প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় গ্রেপ্তারের ঘটনা এই প্রথম।
পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন বেনারকে বলেন, “আসামিদের দেওয়া তথ্য মতে, এবিটি এবং গজওয়াতুল হিন্দের সদস্য সংগ্রহের জন্য তারা কাজ করত। নোয়াখালী জেলায় গজওয়াতুল হিন্দে যোগ দিতে আর কেউ উদ্বুদ্ধ হয়েছে কি না সে ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কিছু জানা যায়নি।”
উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক মনিরুজ্জামান বেনারকে বলেন, “গজওয়াতুল হিন্দের কোনো শাখা বাংলাদেশে নেই। তাদের বাংলাদেশে শাখা স্থাপন করতে দেয়ার সুযোগও নেই। আটক জয় এবং ইমন এবিটির সদস্য সংগ্রহের পাশাপাশি গজওয়াতুল হিন্দের সদস্য সংগ্রহের কাজ করছিল।”
“গজওয়াতুল হিন্দ আফগানিস্তানের খোরাসান থেকে মিয়ানমারের আরাকান পর্যন্ত খিলাফত প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখে,” মন্তব্য করে মনিরুজ্জামান বলেন, “গজওয়াতুল হিন্দ অনলাইনে খুবই সক্রিয়। ২০১৪ সাল থেকে তারা অনলাইনে প্রচার চালাচ্ছে।”
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) সাখাওয়াত হোসেন বেনারকে বলেন, “ভারতে আল-কায়েদার কাশ্মীর রাজ্যের শাখা হচ্ছে গজওয়াতুল হিন্দি। এর প্রতিষ্ঠাতা জাকির রশিদ ভাট, জাকির মূসা নামেও তিনি পরিচিত। সংগঠনটি কাশ্মীরে ভারতের শাসন বিরোধী।”
গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে প্রচার করা এক ভিডিও বার্তায় ভারতীয় সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা চৌকিতে হামলা চালাতে ভারতীয় মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানান জাকির মূসা। ভারতে বিনিয়োগকারী কোম্পানিগুলোর ওপরও হামলার আহ্বান জানান তিনি।
গত ২৪ মে ভারত শাসিত কাশ্মীরে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারান জাকির মূসা।
ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত বলেন, “বাংলাদেশে গজওয়াতুল হিন্দের কোনো শাখা নেই। গজওয়াতুল হিন্দ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করতে গিয়ে গ্রেপ্তারের ঘটনা আমার জানা মতে এটাই প্রথম।”
তিনি বলেন, “গত ৫ আগস্ট কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা বাতিল করে ভারত সরকার। সেখানে প্রায় আট লাখ সেনা সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ভারতের এই সিদ্ধান্ত জঙ্গিদের উদ্বুদ্ধ করেছে।”
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠনগুলোও মুসলমি সেন্টিমেন্ট কাজে লাগিয়ে গজওয়াতুল হিন্দের সদস্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করবে। আমার মনে হয় বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠনগুলো কাশ্মীর ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে একত্রিত হওয়ার চেষ্টা করবে।”
অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের বৃহস্পতিবার দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেফতারের সময় মেহেদী ও ইমনের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের বিপুল পরিমান জঙ্গিবাদি বই, পুস্তিকা, ল্যাপটপ ও একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করে এটিইউ সদস্যরা।
এতে বলা হয়, “গ্রেফতারের পরে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের ব্যবহৃত ফেইক ফেসবুক আইডি ও এনক্রিপ্টেড চ্যাটগ্রুপে তারা রাষ্ট্রবিরোধী জঙ্গি মতবাদ প্রচারের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে।”
“জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায় গাজওয়াতুল হিন্দ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি অর্থ ও সদস্য সংগ্রহের জন্য তারা নোয়াখালীর বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত সমবেত হতো,” বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
যাত্রাবাড়ি থেকে গ্রেপ্তার দুই
ঢাকার যাত্রাবাড়ি থানায় এবিটির দুই জঙ্গির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাঁরা হলেন, আউয়াল নেওয়াজ (৩৮) এবং ফজলে রাব্বী চৌধূরী (১৮)।
সিটিটিসির অতিরিক্ত উপ কমিশনার আহমেদুল ইসলামের বরাত দিয়ে ইংরেজি দৈনিক ডেইল স্টার অনলাইন শুক্রবার জানায়, ওই দুজন যাত্রাবাড়িতে গিয়েছিল এবিটি সদস্যদের একটি গোপন সভায় অংশ নিতে। গত বুধবার তাদের গ্রেপ্তার করা হয়, সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা হয় বৃহস্পতিবার।