যশোরে জঙ্গি আস্তানা থেকে নারী গ্রেপ্তার
2017.10.09
ঢাকা

জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে পুলিশের সাথে কথিত বন্দুক যুদ্ধে নিহত গুলশান হামলার ‘অপারেশন কমান্ডার’ নুরুল ইসলাম মারজানের বোন খাদিজা যশোরে একটি সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানায় প্রায় ১৫ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর সোমবার আত্মসমর্পণ করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নিজের বাবা-মা ও দুই থেকে পাঁচ বছর বয়েসী তিনটি শিশু সন্তানসহ খাদিজা বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম আজমল হুদা।
“বাড়িটিতে জঙ্গিরা অবস্থান করছে—ঢাকা থেকে এমন তথ্য পাওয়ার পর বাড়িটি ঘিরে রাখা হয়,” বেনারকে বলেন আজমল হুদা।
খাদিজা সোমবার বেলা ৩টার দিকে বাবা-মায়ের অনুরোধে আত্মসমর্পণ করেন বলে জানান তিনি।
এদিকে বাড়িটি থেকে তিনটি সুইসাইড ভেস্ট উদ্ধারের পর সেগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে বলে বেনারকে জানিয়েছেন যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান।
১৫ ঘণ্টার অভিযান
রোববার রাত ১০টার পর থেকে যশোর পৌর এলাকায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে খাদিজার বাড়িটি ঘিরে রেখেছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। চারতলা বাড়ির দ্বিতীয় তলায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন খাদিজা।
খাদিজার স্বামী মশিউর রহমানের বাড়ি কুষ্টিয়ায়। তিনি একটি হারবাল কোম্পানিতে চাকরি করেন।
মশিউর ও খাদিজা নামে এক জঙ্গি দম্পতি ওই বাড়িতে আস্তানা গেড়েছে বলে পুলিশের ধারণা ছিল। তবে সেখানে আর কোনো জঙ্গির অবস্থান শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।
এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে “অপারেশন মেলটেড আইস”।
“পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একটি দল, স্পেশাল উইপন্স অ্যান্ড ট্যাক্টিকস (সোয়াট), বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল ও যশোর পুলিশের একটি দল সম্মিলিতভাবে অভিযানে অংশ নিয়েছে,” জানিয়েছেন এসপি আনিসুর রহমান।
ওই বাড়ির মালিক যশোর জেলা স্কুলের সহকারী শিক্ষক হায়দার আলীর স্ত্রী ইসমত আরা। নিজের বাড়ির সব ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়ে তিনি সপরিবার জেলা স্কুলের স্টাফ কোয়ার্টারে থাকেন।
অভিযানের প্রাক্কালে বাড়ির মালিকের স্বামী হায়দার আলী বেনারকে জানান, “বাড়ির দ্বিতীয় তলার পশ্চিম অংশে মশিউর রহমান নামের এক ব্যক্তি এক বছর ধরে ভাড়া রয়েছেন। তার স্ত্রী এবং তিন সন্তান।”
মা-বাবার সহায়তায় আত্মসমর্পণ
অভিযান চলাকালে সন্দেহভাজন জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ করার জন্য কিছুক্ষণ পরপর পুলিশ মাইকে আহ্বান জানাচ্ছিল। শেষে খাদিজাকে আত্মসমর্পণে রাজি করানোর জন্য তার বাবা মো. নিজাম উদ্দিন ও মা সালমা খাতুনকে পাবনা থেকে যশোরে নিয়ে যায় পুলিশ।
“খাদিজাকে বারবার বের হতে অনুরোধ করা হলেও তিনি আত্মসমর্পণে রাজি হননি। পরে তার অনুরোধে তার মা-বাবাকে নিয়ে আসা হয়,” জানিয়েছেন এসপি আনিসুর।
প্রসঙ্গত খাদিজা ও নুরুল ইসলাম মারজানের বাড়ি পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের আফুরিয়া গ্রামে। তাঁর বাবা নিজাম উদ্দিন পেশায় গেঞ্জির কারিগর।
“দোতালার ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে খাদিজা কথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন যে তার মা-বাবা এসে পৌঁছালে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন আত্মসমর্পণ করবেন কিনা,” বেনারকে জানান হায়দার আলী।
“বাবা-মা আসার পর বেলা ৩টা ৫ মিনিটে খাদিজা তার তিন শিশু সন্তানকে নিয়ে আত্মসমর্পণ করে। তবে খাদিজার স্বামী মশিউরকে সেখানে পাওয়া যায়নি,” সন্ধ্যায় এক ব্রিফিং জানান খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি একরামুল হাবিব।
তিনি বলেন, “খাদিজা ও তার সন্তানরা পুলিশ হেফাজতে আছে। তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ অভিযান প্রাথমিকভাবে সমাপ্ত ঘোষণা করা হচ্ছে। ওই বাড়িতে প্রয়োজনে আরও তল্লাশি চালানো হবে।”
প্রসঙ্গত, গত বছর জুলাই মাসে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২২ জনকে হত্যার ঘটনার তদন্তে পুলিশ এই হামলার ‘অপারেশন কমান্ডার’ হিসেবে নুরুল ইসলাম মারজানের নাম প্রকাশ করে।
মারজান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। লেখাপড়া শেষ না করে তিনি জঙ্গি তৎপরতায় লিপ্ত হন।
চলতি বছর ৬ জানুয়ারি ঢাকার মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় কাউন্টার টেরোরিজম পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারজান নিহত হন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
তার আগে, গত বছর ১০ সেপ্টেম্বর আজিমপুরের এক জঙ্গি আস্তানা থেকে তিন জঙ্গির স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে মারজানের স্ত্রী আফরিন ওরফে প্রিয়তিও ছিলেন।