বগুড়ায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ জেএমবির শীর্ষস্থানীয় নেতা নিহত

শরীফ খিয়াম
2018.11.06
ঢাকা
181106_JMB_story-620.jpg মুন্সীগঞ্জে ব্লগার ও প্রকাশক শাহজাহান বাচ্চুকে হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন। ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮।
[নিউজরুম ফটো]

বগুড়ায় পুলিশের কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ খোরশেদ আলম মাস্টার নামের এক জঙ্গি নিহত হয়েছেন।

শামিল, সাগর, আতিক এবং উদয় নামে পরিচিত এই জঙ্গি নেতা গত জুনে ব্লগার শাজাহান বাচ্চু হত্যা এবং ২০১৪ সালে ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যান থেকে জেএমবি নেতাদের ছিনতাইয়ের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

সোমবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার পীরব-নামুজা সড়কের তাতিপুকুর এলাকায় পুলিশ-জঙ্গি বন্দুকযুদ্ধে তিনি নিহত হন। পুলিশের ধারণা, তাঁর বয়স আনুমানিক ৩৬ থেকে ৩৮ বছর।

বগুড়া জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী বেনারকে জানান, নিহত খোরশেদ নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন পুরাতন জেএমবির (জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ) সুরা সদস্য এবং বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত আমির ছিলেন।

“মুন্সিগঞ্জের সিরাজদীখানের মুক্তমনা লেখক ও ব্লগার শাজাহান বাচ্চু হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী এই খোরশেদ অনেক গভীর জলের মাছ। ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যান থেকে জেএমবি নেতা সালাউদ্দীন সালেহীন, মিজান ওরফে বোমা মিজান ও রাকিব হাসান ওরফে হাফেজ মাহমুদকে ছিনতাইয়ের পরিকল্পনাকারীও তিনি,” যোগ করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

এছাড়া পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, খোরশেদ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে জঙ্গি হামলার প্রধান পরিকল্পনাকারী। নির্বাচনে জঙ্গি হামলার জন্য তাঁর নেতৃত্বে গত ৩ সেপ্টেম্বরও গাজীপুরের মাওনায় গোপন বৈঠক হয়।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশিদ বেনারকে বলেন, “নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক কারণেই জঙ্গি তৎপরতা বাড়ে। কারণ এদের দিয়ে রাজনীতি প্রভাবিত করা সম্ভব হয়। এখন জঙ্গিরা এমন টার্গেড নির্ধারণ করবে, যাতে নির্বাচনের ফল প্রভাবিত হয়।”

পুলিশের ভাষ্যে ‘বন্দুকযুদ্ধ’

বগুড়া জেলা পুলিশের মুখপাত্রের ভাষ্য অনুযায়ী, জঙ্গিরা শিবগঞ্জ উপজেলার নামুজা-পীরব সড়কের তাতিপুকুর এলাকায় ওৎ পেতে ছিল। শিবগঞ্জ থানা পুলিশের একটি টহল দল সেখানে পৌঁছালে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে জঙ্গিরা।

পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছোঁড়ে। কিছুক্ষণ পর অন্যরা পালিয়ে গেলেও ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় একজনকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি নিজেকে জঙ্গি নেতা খোরশেদ আলম মাস্টার নামে পরিচয় দেন।

পরে তাঁকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎকেরা মৃত ঘোষণা করেন। জরুরি বিভাগের চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, দূরত্বের কারণে পথিমধ্যে রক্তক্ষরণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে। বন্দুকযুদ্ধে হামলায় আহত এসআই আহসান ও কনস্টেবল সাব্বিরকেও পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শিবগঞ্জ থানার ওসি মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, এ ঘটনায় হত্যা ও অস্ত্র আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে।

ঘটনাস্থলে এক রাউন্ড গুলিভর্তি ৭.৬২ ক্যালিবারের একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটার গান, দুই রাউন্ড গুলি, একটি চাপাতি, একটি বার্মিজ চাকু, কিছু পাউরুটি ও কলার অংশ পাওয়া গেছে।

ব্লগার শাজাহান বাচ্চু হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী

মঙ্গলবার দুপুরে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঁঞাও জানান, খোরশেদ শাজাহান বাচ্চু হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী। এছাড়া তিনি ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যান থেকে ছিনতাইয়েরও অন্যতম হোতা।

তবে বিচারের আওতায় না নিয়ে বাবা হত্যার আসামির এভাবে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হওয়ার বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে দেখছেন না বাচ্চুর মেয়ে দুর্বা জাহান।

তিনি বেনারকে বলেন, “মূলত গণমাধ্যমে জানতে পারছি যে বাবার হত্যাকাণ্ডে জড়িত জঙ্গিরা পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে মারা যাচ্ছে। পুলিশ তাঁদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারলে, আমি জিজ্ঞাসা করতাম, তারা কেন আমার বাবাকে হত্যা করেছে?”

“আমার এই ইচ্ছা অপূর্ণই থেকে যাবে,” বলেন তিনি।

এর আগে গত সেপ্টেম্বরে দুইজন এবং জুনে আরো এক জঙ্গি বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর মুন্সিগঞ্জ জেলা পুলিশ বলেছিল, তারা তিনজন বাচ্চু হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন।

খোরদেশকে খুঁজছিল পুলিশ

গাজীপুরের মাওনার উল্লেখিত বৈঠক থেকে ফেরার পথে ৫ সেপ্টেম্বর বগুড়ার শেরপুর উপজেলার মির্জাপুর এলাকা থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, চাকুসহ শীর্ষ পর্যায়ের পাঁচ জেএমবি নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার হওয়া জেএমবি নেতারা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে নির্বাচনকে সামনে রেখে নাশকতার পরিকল্পনা বৈঠকের কথা ফাঁস করে দেন। এরপর থেকেই পুলিশ হন্যে হয়ে জেএমবির প্রধান সমন্বয়ক খোরশেদ আলম মাস্টারকে খুঁজছিল।

মেজর জেনারেল (অব.) রশিদ বেনারকে বলেন, “মূলত আন্তর্জাতিকভাবে জঙ্গি পৃষ্ঠপোষকতায় ছেদ পড়েছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে যেসব দেশ তাদের সমর্থন দিত, তারা পিছিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। যে কারণে জঙ্গিরা অর্থ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের সঙ্কটে রয়েছে।”

“আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা সম্ভবত এই অবস্থা থেকে মুক্ত হতে চাচ্ছে,” যোগ করেন সাবেক এই সামরিক কর্মকর্তা।

ঢাকা থেকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন কামরান রেজা চৌধুরী

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।