ভারতে বাংলাদেশি জঙ্গি গ্রেপ্তার
2017.11.28
কলকাতা ও গৌহাটি, ভারত

ভারতে বাংলাদেশি জঙ্গিদের ঘাঁটি রয়েছে এমন দাবি ওঠার মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই মঙ্গলবার বাংলাদেশি মুক্তমনা লেখক হত্যায় সম্পৃক্ত জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্য সন্দেহে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ।
এর আগে গত সপ্তায় এক ভারতীয় দালালের সাথে বাংলাদেশি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারউল্লা বাংলা টিম (এবিটি) এর তিন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিশ।
২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলাদেশ অন্তত ১০ জন মুক্তমনা লেখক, ব্লগার ও প্রকাশক এবিটির জঙ্গিদের চাপাতির কোপে নিহত হন। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার মতে এবিটি চরমপন্থী ইসলামি সংগঠন আল কায়েদার সাথে সম্পৃক্ত।
বাংলাদেশে নতুন করে ব্লগার ও মুক্ত চিন্তার লেখকদের হত্যা পরিকল্পনায় জড়িত সন্দেহে আরো দুজন বাংলাদেশিকে খুঁজছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় পুলিশ।
“বোমা তৈরির কৌশল সম্পর্কে আল কায়দার বিভিন্ন লিফলেট ও পুস্তিকা ছাড়াও সন্দেহভাজনদের কাছে আমরা বাংলাদেশি লেখকদের একটি তালিকা পেয়েছি,” বেনারকে বলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতীয় পুলিশের এক কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, “কলকাতার কয়েকটি ফার্মেসির ফোন নম্বরও পাওয়া গেছে। হতে পারে ওইসব জায়গা থেকে বোমা তৈরির উপকরণ কিনত তাঁরা।”
মঙ্গলবার রাতে পালিয়ে নেপাল যাবার সময় ভারত-নেপাল সীমান্ত থেকে বাংলাদেশে গ্রেফতারি পরোয়ানাযুক্ত শীর্ষ জঙ্গি মোহাম্মদ আফতাব ওরফে ওমর ফারুককে গ্রেফতার করে পুলিশ।
কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের ডিসি মুরলিধর শর্মা বেনারকে জানান, গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদ থেকে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে ভারতের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে এবিটির একাধিক স্লিপার সেল সক্রিয় রয়েছে
জিজ্ঞাসাবাদ থেকে জঙ্গিদের অন্য সহযোগিদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য এক পুলিশ কর্মকর্তা বেনারকে জানান, জিজ্ঞাসাবাদে এক জঙ্গি জানিয়েছে, কলকাতায় ব্যাংক ডাকাতি করে অর্থ সংগ্রহ ও অস্ত্র কেনার জন্য তাঁদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
সহজ সীমান্ত
বিশেষজ্ঞদের মতে বিস্তৃত সীমান্ত ও দুই পারে ভাষাগত ঐক্যের কারণে বাংলাদেশি জঙ্গিদের কাছে পালিয়ে থাকার জন্য ভারতের পূর্বাঞ্চল খুবই আকর্ষণীয়।
বিশেষত সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক জঙ্গিবিরোধী অভিযানের মুখে অনেক জঙ্গিই ভারতে এসে গা ঢাকা দিয়েছে।
ভারতের সাথে বাংলাদেশের সীমান্ত দৈর্ঘ্য ৪,০৯৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে আসামের সাথে ২৬২, ত্রিপুরার সাথে ৮৬৫, মিজোরামের সাথে ১৮০, মেঘালয়ের সাথে ৪৪৩ এবং পশ্চিমবঙ্গের সাথে বাংলাদেশের রয়েছে ২,২১৭ কিলোমিটার সীমান্ত।
“বাংলাদেশে নির্বাচন আসন্ন, তাঁরা জানে যে এখন বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী তাঁদের ধরার জন্য উঠেপড়ে লাগবে। ফলে তাঁরা অরক্ষিত সীমান্ত পাড়ি দিয়ে একই ভাষাভাষী অঞ্চলে এসে গা ঢাকা দেবার সুযোগ নিচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ তাদের নিরাপত্তার জন্য স্বর্গ বিশেষ,” বেনারকে বলেন গৌহাটি কেন্দ্রিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক জিএম শ্রীবাস্তব।
ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মতে, এবিটির অন্তত ২০-২৫ জঙ্গি ভারতে লুকিয়ে আছে।
“স্লিপার সেলে নতুন সদস্য সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যেই এদেরকে ভারতে পাঠানো হয়েছে,” বেনারকে বলেন সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বিপ্লব মন্ডল।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে নাশকতা চালানো তাদের মূল লক্ষ্য হলেও অস্ত্র ও বিস্ফোরক কেনার জন্য ভারত তাদের কাছে খুবই আকর্ষর্ণীয় জায়গা।”
প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন নয়াদিল্লি থেকে রোহিত ওয়াধওয়ানি।