জঙ্গিবাদের অভিযোগে বন্ধ স্কুল চালু হবে সেনাবাহিনীর পরিচালনায়
2017.12.05
ঢাকা

রেওয়াজের ব্যতিক্রম ঘটিয়ে এবার একটি বেসরকারি স্কুল পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটিতে সেনাবাহিনীর সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করার রায় দিয়েছে বাংলাদেশের আদালত।
মঙ্গলবার লেকহেড গ্রামার স্কুলের দুটি শাখা খুলে দিতে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকার পক্ষের লিভ টু আপিল মঞ্জুর করে আদালত। পাশাপাশি সাতদিনের মধ্যে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়।
লেকহেড গ্রামার স্কুলের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ততাসহ আরও বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ নভেম্বর স্কুলটি বন্ধের নির্দেশ দেয় সরকার। এরপর ধারাবাহিকভাবে আইনি লড়াই চলছিল।
দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ তাঁদের আদেশে বর্তমান পরিচালনা কমিটিকে সরিয়ে ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে সাতদিনের মধ্যে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। ওই কমিটিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন প্রতিনিধি ও শাখাগুলোতে সেনাবাহিনীর শিক্ষা কোর থেকে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষাসচিবকে নির্দেশটি কার্যকরের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাসচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেছেন, তাঁরা আদালতের নির্দেশ পালন করবেন।
আদালত স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের আশ্বস্ত করেছে এই বলে যে, কমিটির দায়িত্ব হবে নতুন ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম যেন ব্যাহত না হয় তা দেখা। পাশাপাশি স্কুলের শিক্ষক, কর্মচারী ও অভিভাবকদের কেউ জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িত কি না তাও দেখবে।
জঙ্গিবাদ ঠেকাতে সেনা-সংযুক্তি
সরকারপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাটনির জেনারেল মাহবুবে আলম। হাইকোর্টের আদেশের পর মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
“সেনাবাহিনীর শিক্ষা কোর থেকে অফিসার নিয়ে কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে আদালতের আদেশে। যাতে স্কুলের কেউ যেন জঙ্গি কার্যক্রমে জড়াতে না পারে,” মাহবুবে আলম বলেন।
মাহবুবে আলম আরও বলেন, স্কুলটিতে অনেক অনিয়ম রয়েছে। ওই অনিয়ম সম্পর্কিত একটি ‘ক্লাসিফায়েড ডকুমেন্ট’ তিনি আদালতে জমা দিয়েছেন।
ঠিক কী কী অভিযোগ আছে স্কুলটির বিরুদ্ধে, জমা দেওয়া নথিতেই বা কী আছে এমন প্রশ্নে মাহবুবে আলম বলেন, “স্কুলটির গভর্নিং বডি নেই এবং নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় না।”
এছাড়া স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা, সাবেক ও বর্তমান অনেক শিক্ষক এবং কয়েকজন অভিভাবকের বিরুদ্ধে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ করেছে সরকার। তাঁদের কেউ কেউ আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের পক্ষে যুদ্ধ করতে গেছেন, একজন কর্মকর্তা মিরপুরে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহতও হয়েছেন।
স্কুল মালিক ও অভিভাবকদের পক্ষে এই রিটটি শুনানি করেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এএফ হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার আখতার ইমাম ও রাশনা ইমাম। স্কুলের নতুন মালিক খালেদ হাসান মতিন ও ১২ শিক্ষার্থীর অভিভাবকের পক্ষে তাঁরা রিট আবেদনটি করেছিলেন। আদালতের আদেশের পর তাঁদের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
এর আগে সরকারি সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ নভেম্বর লেকহেড গ্রামার স্কুলের ধানমন্ডি ও গুলশান শাখা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খুলে দিতে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। পরদিন হাইকোর্টের আদেশে স্থগিতাদেশ দেন চেম্বার বিচারপতি।
শিক্ষার্থীরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়
বাংলাদেশে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোর মোর্চা বাংলাদেশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলস অ্যাসিসটেন্স ফান্ডের (বেমসাফ) সভাপতি মো. মোরশেদুল ইসলাম। তিনি বলছিলেন, আদালতের রায় নিয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁরা এখনই কিছু বলতে চাইছেন না। তবে তাঁর ব্যক্তিগত অভিমত আছে কিছু।
“দেখুন আমি শুধু বলব যেন কোনো অবস্থাতেই শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত না হয়। স্কুলে কোনো এক বা দুজন ব্যক্তির সমস্যা থাকতে পারে, থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। তবে, তাতে করে শিক্ষার্থীরা যেন বিপদের মুখে না পড়ে বা কোনোভাবে ক্ষিতগ্রস্ত না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা দরকার,” বেনারকে মো. মোরশেদুল ইসলাম বলেন।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান বিদ্যালয় পরিচালনায় সেনাবাহিনীকে যুক্ত করার কোনো যুক্তি নেই বলে বেনারের কাছে মন্তব্য করেন।
“আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগ তৎপর থাকলে কোনো স্কুলে কোনো জঙ্গিই থাকতে পারবে না। সেটাই তাদের কাজ। বিদ্যালয়ে অধ্যক্ষের পদে বা শিক্ষকতার পদে তাদের বসানোর কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে মনে করি না আমি,” সিদ্দিকুর রহমান বলেন।