সংখ্যালঘু নির্যাতনকারীদের মনোনয়ন দিলে ভোট বর্জনের হুমকি
2017.08.04
ঢাকা

সংখ্যালঘু নির্যাতনকারী ও তাঁদের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত কাউকে আগামী সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন না দিতে সকল রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের ১৭টি ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সংগঠনের মোর্চা। এ ধরনের কেউ মনোনয়ন পেলে ভোট বর্জনের হুমকিও দিয়েছেন তাঁরা।
শুক্রবার রাজধানী ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন এসব সংগঠনের সমন্বয় কমিটির সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশ গুপ্ত।
তিনি বলেন, “অতীতে বা বর্তমানে জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হয়ে কিংবা রাজনৈতিক নেতৃত্বে থেকে যারা সংখ্যালঘু স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন বা আছেন, রাজনৈতিক দল বা জোটগুলোর প্রতি অনুরোধ, আসছে নির্বাচনে তাদের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেবেন না।”
“অন্যথায় সেসব নির্বাচনী এলাকার সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী ভোটদান থেকে বিরত থাকবে বা ভোট বর্জন করবে,” হুশিয়ারি দেন তিনি।
এ বিষয়ে সরকারের কোনো বক্তব্য পাওয়া না গেলেও মন্ত্রিসভায় সংখ্যালঘুদের অন্যতম প্রতিনিধি মৎস ও পশু সম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বেনারকে বলেন, “সংখ্যালঘু কেন, যে কাউকে নির্যাতনকারী এমন কোনো ব্যক্তিকে কোনো দলেরই মনোনয়ন দেওয়া উচিত নয়।”
“এটা দলের নৈতিকতারও প্রশ্ন। আর দল নির্যাতনকারীদের মনোনয়ন দিলেও আমি কেন সেটা মেনে নেব,” বলেন তিনি।
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বেনারকে বলেন, “এ দাবি কতটুকু রাখা হবে সেটা রাজনৈতিক দলগুলোর বিষয়। তবে সুষ্ঠু রাজনীতির স্বার্থে যারা নির্যাতনকারী, অন্যায়কারী, অপরাধকারী তাদেরকে সব সময় পরিহার করাটাই যুক্তিসংগত।”
এ প্রসঙ্গে রানা দাশ গুপ্ত বেনারকে বলেন, “গত কয়েক বছরে অসংখ্য সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে এবং এখনো অব্যাহত। রাজনৈতিক প্রভাবশালীরাই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত হওয়ায় নির্যাতিতরা বিচারও পায় না। আর তাই এমন দাবি নিয়ে আমরা মাঠে নেমেছি। এটা শুধু মুখের কথা নয়, কাজেও প্রমাণ করব।”
এই সংখ্যালঘু সংগঠনের মোর্চার সংবাদ সম্মেলনে জনসংখ্যার আনুপাতিক হার অনুসারে জাতীয় সংসদে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর প্রতি আহবান জানানো হয়।
নির্বাচন মানেই সংখ্যালঘু নির্যাতন
সংবাদ সম্মেলনে রানা দাশ গুপ্ত বলেন, “পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নির্বাচন মানেই উৎসব। অথচ বাংলাদেশে নির্বাচনের কথা শুনলেই ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী ভয়ে আঁতকে উঠে। তাঁদের কাছে নির্বাচন নির্যাতনের ভয়াবহ রূপ হিসেবে দেখা দেয়।”
তাঁর মতে, “এসব নির্বাচনী সহিংসতার পেছনে জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা থাকায় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশের মধ্যে নির্বাচন বিমুখতা দেখা গেছে। এটা দেশের গণতন্ত্রের জন্য শুভ ফল আনবে না।”
দেশের ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে দাবি করেন তিনি।
সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে রানা দাশ গুপ্ত নির্বাচনে ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতার ব্যবহার বন্ধের আহবান জানান। একইসঙ্গে নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডাসহ ধর্মীয় সকল উপাসনালয়ের ব্যবহার বন্ধ করার দাবিও জানান তিনি।
নির্বাচনী সভায় ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক বক্তব্য নিষিদ্ধ করে এ ধরনের ঘটনায় প্রার্থিতা বাতিলসহ সাজার বিধান রেখে নির্বাচনী আইন সংস্কার করতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহবান জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
বেশ কয়েকটি উপাসনালয়ে হামলা, ভাংচুর, চুরি, জমি জবর-দখলের ঘটনা তুলে ধরে দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে বলে দাবি করেন রানা দাশগুপ্ত।
সংখ্যালঘুদের সাত দফার পক্ষে নির্বাচনী অঙ্গীকার ঘোষণা করে তাদের স্বার্থ ও অধিকার নিশ্চিতে কোনো রাজনৈতিক দল বা জোট প্রতিশ্রুতি দিলে এই সমন্বয় কমিটি সংশ্লিষ্ট দল বা জোটকে সমর্থন দেবে বলেও ঘোষণা দেয় ১৭ সংগঠনের মোর্চা।
এই ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সংগঠনগুলো হলো- বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশন, বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি, বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোট, বাংলাদেশ হিন্দু লীগ, জগন্নাথ হল অ্যামালনাই অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ মাইনরিটি সংগ্রাম পরিষদ, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজ সংস্কার সমিতি, হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিজ, শ্রী শ্রী ভোলানন্দগিরী আশ্রম ট্রাস্ট, স্বজন, বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ ঋষি পঞ্চায়েত ফোরাম এবং অনুভব।
পরবর্তী কর্মসূচি
সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনের আগেই ‘সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয়’ ও ‘জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন’ গঠন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন, ‘সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন, বর্ণ বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, পার্বত্য ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি আইনের বাস্তবায়নসহ পার্বত্য শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নের ‘রোডম্যাপ’ ঘোষণার এবং সমতলের আদিবাসীদের জন্য ভূমি কমিশন গঠনের দাবি জানানো হয়।
সরকার, নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল ও জোটের সামনে এসব দাবি তুলে ধরতে পরবর্তি কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে এই ‘সংখ্যালঘু’ মোর্চা।
রানা দাশগুপ্ত জানান, পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর বিকেল ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা শুরু হবে।
দেশের সব জেলা ও মহানগর সদরেও সেদিন সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।