বাংলাদেশের সাথে মসজিদ নির্মাণে অর্থায়নের কোনো চুক্তি হয়নি: সৌদি সরকার

কামরান রেজা চৌধুরী
2017.05.12
ঢাকা
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ। এপ্রিল ২১, ২০১৭।
স্টার মেইল

বাংলাদেশে ৫৬০টি মসজিদ নির্মাণে সৌদি আরব এক বিলিয়ন ডলার অনুদান দিতে রাজি হবার বিষয়ে বাংলাদেশের দাবি নাকচ করে দিয়েছে দেশটি। সৌদি আরব বলছে, এরকম প্রতিশ্রুতির ক্ষেত্রে অবশ্যই দ্বিপাক্ষিক চুক্তি থাকতে হবে।

গত মাসে পরিকল্পনামন্ত্রী আ ফ ম মোস্তফা কামাল জানিয়েছিলেন, ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ৫৬০টি মসজিদ নির্মাণের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। এতে সৌদি সরকার দেবে ৮ হাজার ১৬৯ কোটি টাকার বেশি। আর বাংলাদেশ সরকারের কোষাগার থেকে ব্যয় হবে ৮৯২ কোটি টাকা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একনেকের বৈঠক প্রকল্পটি অনুমোদন করেছে বলেও ২৫ এপ্রিল পরিকল্পনামন্ত্রী সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে জানান।

সৌদি অনুদানের বিষয়ে মন্ত্রীর এই ঘোষণা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়।

তবে সৌদি আরবের সংস্কৃতি ও তথ্য বিষয়ক মন্ত্রী ডা. আওয়াদ আলাওয়াদ গত বৃহস্পতিবার জানান, তাঁর সরকার বাংলাদেশে মসজিদ নির্মাণে অর্থায়নের জন্য এরকম কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি।

গত ১১ মে বেনারনিউজের কাছে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “সৌদি আরব কখনই মসজিদ নির্মাণের জন্য বাংলাদেশকে এক বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়নি।”

“এটি সত্য নয়,” বলেন আওলাদ।

“সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে এই ধরনের প্রতিশ্রুতি কেবলমাত্র আগ্রহী দেশের সরকারের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাওয়ার পর বিবেচনা করা হবে। যখন এই ধরনের কোনো চুক্তি চূড়ান্ত করা হবে তখন দুই দেশের পক্ষ থেকেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা থাকবে,” বলেন ডা. আওয়াদ।

বিবৃতিতে, সৌদি আরব প্রতি বছর দুটি পবিত্র মসজিদ এবং লাখ লাখ মুসলিম তীর্থযাত্রীর সেবা করে জানিয়ে সৌদি মন্ত্রী “বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের জন্য সৌদি আরবের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ” বলে উল্লেখ করেন।

অন্যদিকে পরিকল্পনামন্ত্রী অনুদানের বিষয়ে সৌদি প্রতিশ্রুতির বিষয়টি আবারো গণমাধ্যমকে বলেছেন।

বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এ বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরে শুক্রবার মন্ত্রী জানান, “চুক্তিটি সৌদি বাদশা’র সঙ্গে হয়েছে। হয়তো বাদশা মন্ত্রীকে বিষয়টি অবহিত করেননি।”

অনুদান প্রসঙ্গ

মসজিদ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা প্রকল্পে সৌদি অনুদানের বিষয়ে শুক্রবারও বেনারনিউজের কাছে তাঁদের আশাবাদ জানিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক শামীম এম আফজাল বেনারকে বলেন, “আমরা মসজিদসহ ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ তত্ত্বাবধান করব। বাংলাদেশ ও সৌদি সরকার যৌথভাবে এগুলো নির্মাণ করবে।”

“তবে এই মুহূর্তে মসজিদগুলো নির্মাণের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বলা সম্ভব নয়,” জানান তিনি।

গত ২ ফেব্রুয়ারি ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান জাতীয় সংসদে এক লিখিত বক্তব্যে সৌদি অর্থায়নে মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের এই প্রকল্পটির কথা প্রথম প্রকাশ করেন, যার একটি কপি বেনার নিউজের কাছে রয়েছে।

“ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সৌদি সরকারের অনুদানে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় মোট ৫৬০টি মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে,” লিখিত বক্তব্যে বলেন ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান।

পরবর্তীতে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে প্রকল্পটির বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশিত হয়।

এ প্রসঙ্গে রিয়াদে বাংলাদেশ মিশনের ডেপুটি চিফ মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম শুক্রবার টেলিফোনে বেনারকে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার শেষ সৌদি সফরের সময় মসজিদ নির্মাণে সৌদি অর্থ সহায়তা চেয়েছিলেন।

তিনি বেনারকে বলেন, “সৌদি বাদশা প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, তিনি বিষয়টি বিবেচনা করবেন।”

“মসজিদ নির্মাণের তহবিল মহামান্য সৌদি বাদশার অফিস দ্বারা পরিচালিত হয়। আমি মনে করি প্রকল্পের বাস্তবায়নে সময় লাগবে। আমি এই বিষয়ে কোনো সময়সীমা দিতে পারব না,” বেনারকে বলেন নজরুল।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।