নারায়ণগঞ্জে রকেট লাঞ্চারসহ বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার
2017.06.02
ঢাকা

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচল উপশহরের একটি খালে অভিযান চালিয়ে দুইটি রকেট লাঞ্চার, ৫৭টি এম সিক্সটিন রাইফেলসহ বিপুল পরিমাণ গ্রেনেড ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তবে আটককৃতদের নাম–পরিচয় প্রকাশ করেনি পুলিশ।
রাজধানীর উত্তরা এলাকার একটি খাল থেকে ৯৭টি পিস্তল ও এক হাজারের বেশি গুলি উদ্ধারের প্রায় এক বছরের মাথায় এবার নারায়ণগঞ্জের খাল থেকে এসব অস্ত্র উদ্ধার হলো।
বিপুল এই অস্ত্র দেশকে নিয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কোনো অংশ বলে মনে করছে পুলিশ। তবে এই অস্ত্র কাদের, কবে আনা হয়েছে, কিংবা এগুলো মজুতের উদ্দেশ্য বিষয়ে এখনো বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পরে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, “বাংলাদেশকে নিয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে। সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই কোনো অপরাধী চক্র এই বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ এনে থাকতে পারে।”
“এরই মধ্যে এক ব্যক্তি আমাদের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে। ওই ব্যক্তির তথ্যের ভিত্তিতে এই সব অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। এই চক্রের হাতে আরও অস্ত্র-গোলাবারুদ আছে কিনা খুঁজে দেখা হচ্ছে। কারা কী কারণে কী উদ্দেশ্যে এই গোলাবারুদ মজুত করেছে তা শিগগিরই জানা যাবে।”
উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে গত বছর উদ্ধার করা অস্ত্রের সঙ্গে এই অস্ত্রের মিল আছে কিনা এই প্রশ্নের জবাবে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “দুই জায়গা থেকে উদ্ধার করা অস্ত্র ও গোলাবারুদের মধ্যে মিল রয়েছে। এগুলো একইভাবে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। একই গ্রুপের কাজ বলে মনে হচ্ছে।”
“অস্ত্রগুলো দেখে মনে হচ্ছে এগুলো সক্রিয়, সচল ও স্বয়ংক্রিয়। ধারণা করছি এগুলো দুই তিনমাস আগে এখানে রাখা হয়েছে,” বলেন তিনি।
এর সাথে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল বলেন, “বিভিন্ন আস্তানায় যেসব অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে তার সঙ্গে এই অস্ত্রের মিল নেই। তবুও আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।”
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, পূর্বাচল উপশহর প্রকল্পের দাউদপুর ইউনিয়নের গুতিয়াব এলাকা থেকে গত ২৯ মে রাতে শরীফ নামের একজনকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে একটি এলএমজি উদ্ধার করা হয়। শরীফের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আরো দুজনকে আটক করা হয়। মূলত তাদের কাছ থেকেই ওই খালে রাখা অস্ত্রের সন্ধান পাওয়া যায়।
বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু হয়ে শুক্রবার বেলা ১১টা পর্যন্ত রূপগঞ্জের পূর্বাচল আবাসিক এলাকার ৫ নম্বর সেক্টরে এই অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চলে বলে সাংবাদিকদের জানান জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ফারুক হোসেন।
পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে একটি জমির মাটি খুঁড়ে দুটি রাইফেল উদ্ধার করা হয়। এর পর শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল দিয়ে পাশের একটি লেকে অভিযান চালানো হয়। এরপর থেকে একের পর এক অস্ত্র উদ্ধার হতে থাকে।
এসময় দুরবিন, দুটি রকেট লাঞ্চার, ৬২ চায়নিজ সাব মেশিনগান, এসএমজি ম্যাগাজিন ৪৪টি, ৫টি ৭.৬২ পিস্তল, ৪৯টি শেল, ৪২টি হ্যান্ড গ্রেনেড, ২টি ওয়াকিটকি, বিভিন্ন ধরনের ডিভাইস, টাইম ফিউজসহ বিপুল পরিমাণ গোলা-বারুদ ও গুলি উদ্ধার করা হয়। অত্যাধুনিক এসব অস্ত্র পলিথিনে মোড়ানো ছিল।
অভিযান শেষে পুলিশ মহাপরিদর্শক শহীদুল ইসলাম সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, “গত আড়াই-তিন মাস আগে অস্ত্রগুলো এখানে রাখা হয়েছে। কোনো বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা থাকতে পারে। তদন্ত শুরু হয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অপরাধ চক্রটিকে আটক করা হবে।”
পুলিশের তদন্ত কমিটি
অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের এ ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করেছে পুলিশ সদরদপ্তর।
পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামকে প্রধান করে ১২ সদস্যের এই কমিটি করা হয়েছে। এ কমিটিকে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
শুক্রবার পুলিশ সদর দপ্তরের জনসংযোগ শাখার এআইজি সহেলী ফেরদৌস স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।