ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: প্রক্টরের পদত্যাগসহ চার দফা দাবিতে আন্দোলন

জেসমিন পাপড়ি
2018.01.19
ঢাকা
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আজ সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল করে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আজ সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল করে। ১৯ জানুয়ারী ২০১৮।
মনিরুল আলম/বেনারনিউজ

শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মামলা ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলাকে কেন্দ্র করে হঠাৎই অস্থির হয়ে উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

এরই জের ধরে প্রক্টরের পদত্যাগসহ চার দফা দাবিতে শুক্রবার দিনভর অবস্থানের পর সন্ধ্যায় মশাল মিছিল করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছিল তারা। বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের মামলার পর নতুন করে যুক্ত হয়েছে মামলা প্রত্যাহার আর প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিও।

দাবি প্রসঙ্গে ইসলামী ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী আশিক বেনারকে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আন্দোলন বন্ধ করতে আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। তবে মামলা দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। এ মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।”

“তা ছাড়া সরকারি সংগঠন ছাত্রলীগ অন্যায়ভাবে আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। ছাত্রীদের নিপীড়ন করেছে। রবিবারের মধ্যেই এর বিচার করতে হবে,” তাঁর দাবি।

এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করলেও ছাত্র প্রতিনিধি না থাকায় ওই কমিটির ওপরও নিজেদের অনাস্থার কথা জানান এই শিক্ষার্থী।

প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজকে বাদ দেওয়ার দাবিতে গত ১১ জানুয়ারি থেকে আন্দোলনে নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

এ দাবিতে সোমবার বিকেলে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে তাঁরা অবস্থান নিলে আন্দোলনরত ছাত্রদের হুমকি-ধমকি এবং ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত ও গালিগালাজ করে ছাত্রলীগের বিভিন্ন হল শাখার নেতা-কর্মীরা। এক পর্যায়ে আন্দোলনের সমন্বয়কারী মশিউর রহমানকে উপাচার্যের কার্যালয়ে মারধরও করা হয়। পরে মশিউরকে থানায় সোপর্দ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বুধবার এরই প্রতিবাদে ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দের’ ব্যানারে প্রক্টরের কার্যালয় ঘেরাও করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি দেখে প্রক্টরের কার্যালয়ের দুই পাশের কলাপসিবল গেট লাগিয়ে দেওয়া হয়।

এ সময় গেট ভেঙে প্রক্টরের কক্ষের সামনে অবস্থান নেয় প্রায় তিন শতাধিক ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী। প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানীকে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা তাঁর কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা।

এক পর্যায়ে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দুজন শিক্ষার্থী প্রতিনিধিসহ তদন্ত কমিটি করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে (রোববার) প্রতিবেদন প্রকাশ করার সময় বেঁধে দেওয়া হয় তাঁকে।

এরপরই বৃহস্পতিবার প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানীকে অবরুদ্ধ করে রাখা এবং কলাভবনের ফটক ভাঙচুরের ঘটনায় বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

“প্রক্টরের কার্যালয়ের গেট ভাঙচুরের ঘটনায় শাহবাগ থানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা এস এম কামরুল আহসান বাদী হয়ে মামলা করেছেন। এতে অজ্ঞাতনামা ৫০-৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে,” বেনারকে বলেন শাহবাগ থানার কর্তব্যরত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মঞ্জুর হোসেন।

ওই হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন লাখ টাকার সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ রয়েছে বলেও জানান তিনি।

এ ছাড়া প্রক্টরকে অবরুদ্ধ করা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী নিপীড়নের ঘটনা তদন্তে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটিও করা হয়েছে। এসব কমিটিতে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি না রাখায় এ কমিটি প্রত্যাখ্যান করেছে আন্দোলনকারীরা।

‘শিক্ষার্থী প্রতিনিধিসহ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত কমিটি করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আমরা সময় বেঁধে দিয়েছিলাম। অথচ আমাদের কাউকেই এখনো ডাকা হয়নি,” শুক্রবার মশাল মিছিল শেষে দেওয়া বক্তব্যে বলেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী আসিফ মোহাম্মদ।

দাবি মানা না হলে আগামী মঙ্গলবার থেকে লাগাতার কর্মসূচিতে যাওয়ার ঘোষণা দেন এই শিক্ষার্থী।

রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ খতিয়ে দেখা ও শিক্ষার্থী নিপীড়ন ঘটনা তদন্তে দুটি তদন্ত কমিটি করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান।

তবে এসব কমিটিতে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি রাখার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মতান্ত্রিক কাঠামোতে নেই বলে বেনারকে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী।

বুধবারের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি জানান, আন্দোলনকারীরা তাঁকে কয়েক ঘণ্টা ধরে অবরুদ্ধ করে রাখে। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং এক পর্যায়ে কলাভবনের কলাপসিবল গেট ভেঙে ফেলে। এসব ঘটনা খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।

এদিকে গত এক বছরেও ফল প্রকাশ না হওয়ায় ফল প্রকাশের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা।

ফলাফল প্রকাশসহ পাঁচ দফা দাবিতে বৃহস্পতিবার প্রায় সোয়া দুই ঘণ্টা যাবৎ নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করে রাখে অধিভুক্ত সাত কলেজের কয়েকশ ছাত্র-ছাত্রী। জানুয়ারির মধ্যেই ফল প্রকাশের দাবি জানায় তারা।

তবে অধিভুক্ত হওয়ার আগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়াই ফলাফল দিতে দেরি হওয়া কারণ বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আশা করছি শিগগিরই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তাদের অধীনে অনুষ্ঠিত ফলাফলগুলো আমাদের দেবে। এরপরই দ্রুত আমরা ফলাফলগুলো ফল প্রকাশ করব।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।