দেশের প্রথম স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ ডিসেম্বরে, বছরে বাঁচবে ১৪ মিলিয়ন ডলার
2017.04.17
ঢাকা

দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আসছে ডিসেম্বরেই স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
উৎক্ষেপণের পর বিদেশি স্যাটেলাইট ভাড়া বাবদ ব্যয় হওয়া মোটা অঙ্কের অর্থ সাশ্রয় হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সরকারি হিসেবে, বছরে এই অর্থের পরিমাণ প্রায় ১৪ মিলিয়ন ডলার।
সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকের শুরুতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম স্যাটেলাইটটির রেপ্লিকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করেন বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
এতে জানানো হয়, আসছে ডিসেম্বরেই স্যাটেলাইটটি মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হবে।
সরকারের প্রত্যাশা, উৎক্ষেপণের পর ২০১৮ সালের এপ্রিল নাগাদ স্যাটেলাইটটি বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করতে পারবে।
প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মতে, দেশের প্রথম স্যাটেলাইটটির মধ্য দিয়ে টেলিমেডিসিন, ই-গবেষণা, ই-লার্নিং, ভিডিও কনফারেন্সসহ তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতি ঘটবে। এতে করে প্রযুক্তি খাতে নতুন জগতে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ।
পাশাপাশি নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে স্যাটেলাইটের বর্ধিত ফ্রিকোয়েন্সি ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগও রয়েছে।
ফ্রান্সের মহাকাশ সংস্থা থ্যালেস এলনিয়া স্পেস ফ্যাসিলিটিতে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নির্মাণের অধিকাংশ কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। স্যাটেলাইটটির উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা, ভূমি ও মহাকাশের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং ভূ-স্তরে দুটি স্টেশন পরিচালনার কাজও করবে ফরাসি প্রতিষ্ঠানটি।
প্রসঙ্গত, ট্রান্সপন্ডার স্যাটেলাইটে সংযুক্ত একেকটি ডিভাইস, যা বেতার তরঙ্গ রিসিভার, স্বয়ংক্রিয় ফ্রিকোয়েন্সি কনভার্টার এবং ট্রান্সমিটার হিসাবে কাজ করে।
বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৬০টির মতো দেশের নিজস্ব কৃত্রিম উপগ্রহ রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নিজস্ব স্যাটেলাইট রয়েছে ভারত (১৯৭৫), পাকিস্তান (১৯৯০) ও শ্রীলঙ্কার (২০১২)।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) জানায়, ভূমি থেকে উপগ্রহটি নিয়ন্ত্রণের জন্য গাজীপুরের জয়দেবপুর এবং রাঙামাটির বেতবুনিয়ায় বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) নিজস্ব জমিতে দুটি গ্রাউন্ড স্টেশনের নির্মাণকাজও চলছে।
বিটিআরসি বলছে, আঞ্চলিক স্যাটেলাইট হিসেবে সার্কভুক্ত দেশগুলো ছাড়াও ইন্দোনেশিয়া থেকে তাজিকিস্তান পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটটির আওতা থাকবে। এসব দেশের বেশির ভাগেরই নিজস্ব স্যাটেলাইট না থাকায় বাংলাদেশ তাদের কাছে এই সেবা বিক্রি করতে পারবে।
প্রযুক্তির নতুন যুগে প্রবেশ
বাংলাদেশের প্রথম নিজস্ব ক্ষুদ্রাকৃতির কৃত্রিম উপগ্রহ বা ন্যানো স্যাটেলাইট তৈরি করেছে বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। ‘ব্র্যাক অন্বেষা’ নামে এক কেজি ওজনের এই উপগ্রহটি আগামী মে মাস থেকে মহাকাশে ঘুরে বেড়াবে।
এই প্রকল্পটির প্রধান ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. খলিলুর রহমান বেনারকে বলেন, “বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট তৈরির মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ প্রযুক্তির নতুন জগতে প্রবেশ করল। বিদেশে গিয়ে দেশ সম্পর্কে জানাতে গেলেই দেশে পানির পরিমাণ কতটুকু, বন্যার কী অবস্থা জানতে চায়। স্যাটেলাইটটি চালু হলে এসব তথ্য হাতের মুঠোয় থাকবে।”
তিনি বলেন, “সরকার চাইছে আমরা হাইটেকের দিকে প্রবেশ করি। এই বার্তার প্রতিফলন হিসেবে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও ন্যানো স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের উদ্যোগ নিয়েছে। আরো অনেক প্রতিষ্ঠানও আগ্রহী হয়ে উঠেছে।”
স্যাটেলাইটটি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ বেনারকে বলেন, “বিভিন্ন দেশ যেভাবে নানা কাজে স্যাটেলাইট ব্যবহার করছে, আমরাও তা পারব। দেশের আবহাওয়া, জলবায়ু, পরিবেশ রক্ষার বিভিন্ন বিষয়—এসব অনেক কিছুই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে জানা সম্ভব। এমনকি মাটির নিচে কোনো সম্পদ আছে কিনা সেটাও জানা যায়।”