দিল্লির ইমাম মাওলানা সাদকে ছাড়াই ইজতেমা শুরু হচ্ছে

কামরান রেজা চৌধুরী
2018.01.11
ঢাকা
তাবলিগ জামাতের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্দালভীর আগমনের বিরোধিতা করে বৃহস্পতিবার রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের পাশে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে সংগঠনটির একাংশের কর্মীরা। তাবলিগ জামাতের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্দলভীর আগমনের বিরোধিতা করে বৃহস্পতিবার রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের পাশে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে সংগঠনটির একাংশের কর্মীরা। ১১ জানুয়ারি ২০১৮।
মনিরুল আলম/বেনারনিউজ

ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রাস্তায় নেমে ঢাকা অচল করার হুমকির মাধ্যমে তাবলিগ জামাতের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভীকে ইজতেমা থেকে বহিষ্কার করল হেফাজত সমর্থিত তাবলিগের আরেক অংশ।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের মধ্যস্থতায় বৃহস্পতিবার তাবলিগের দু’পক্ষ সিদ্ধান্ত নেয় যে, তাবলিগ জামাতের দিল্লির কেন্দ্রীয় সুরা সদস্য মাওলানা সাদ শুক্রবার শুরু হওয়া ইজতেমায় ইমামতি করবেন না। এই বিভক্তির মধ্যেই শুক্রবার বিশ্ব ইজতেমা শুরু হচ্ছে।

মুসলিম বিশ্বের ‍দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত এই ইজতেমা প্রতিবছর গাজীপুর জেলার টঙ্গী উপজেলায় তুরাগ নদীর পাড়ে অনুষ্ঠিত হয়।

গত বছরও মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভী ইজতেমায় ইমামতিসহ আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন।

তাঁর কিছু বিতর্কিত বক্তব্যকে কেন্দ্র করে অহিংস তাবলিগ জামাত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং হেফাজতে ইসলামের নেতাদের নেতৃত্বে এক গ্রুপ বুধবার বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে। তাঁদের অবরোধ বৃহস্পতিবারও অব্যাহত থাকে।

মাওলানা কান্ধলভীকে পুলিশি প্রহরায় কাকরাইলের তাবলিগ জামাত অফিসে রাখা হয়। বিরোধীরা কাকরাইলে অবস্থান নিলে পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। পরে বিকেলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যস্থতায় দুপক্ষের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি করা হয়।

“দুপক্ষই একমত হয়েছে যে উনি (মাওলানা কান্ধলভী) ইজতেমায় অংশ নেবেন না। উনি সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ ছেড়ে যাবেন,” স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বেনারকে বলেন।

তিনি বলেন, সরকার মাওলানা সাদের সকল নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। তিনি যেদিন চাইবেন সেদিন ঢাকা ছেড়ে যেতে পারবেন।

গতকাল বুধবার ব্যস্ত বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে জনদুর্ভোগ চরমে নিয়ে যান প্রতিবাদকারীরা। অবরোধকারী অংশের নেতৃত্ব দেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। হেফাজতের নেতৃবৃন্দের মধ্যে রয়েছেন, কওমি মাদ্রাসা বেফাকের সহসভাপতি মাওলানা আশরাফ আলী, বেফাকের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, মাওলানা ওমর ফারুক ও মুফতি মাহফুজুল হক।

বিক্ষোভকারীরা প্রায় ছয় ঘণ্টা ব্যস্ত এই সড়ক অবরোধ করে রাখে। রাস্তার দুপাশে হাজার হাজার গাড়ি ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে আটকে থাকে।

“উনি কোরআন সুন্নাহর বিকৃত ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। উনি বলে দিচ্ছেন কে বেহেশতে যাবেন, কে নরকে যাবেন। ইজতেমার মতো তৌহিদী জনতার ইমামতি করার কোনো অধিকার তাঁর নেই,” বেনারকে বলেন মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস।

তিনি বলেন, “উনি ইজতেমায় অংশ নিতে গেলে আমরা ঢাকা অচল করে দেবো।”

অপর অংশের নেতা ও মাওলানা সাদের সমর্থক সৈয়দ ওয়াসিফ আলী বেনারকে বলেন, “হুজুরের বিরুদ্ধে যা বলা হচ্ছে সেগুলো ঠিক নয়। যারা তাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন তাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে”।

মাওলানা ওয়াসিফ আলী বলেন, উনি তো গত বছরও ইমামতি করেছেন।

রাজপথে তাবলিগ জামাতের কর্মীদের এই নজিরবিহীন বিক্ষোভের পেছনে হেফাজতে ইসলামের ইন্ধন আছে অভিযোগ করেছেন অনেকেই।

তাবলিগ জামাতের নেতারা শান্তি ও সম্প্রীতির বাণী প্রচারের জন্য সুপরিচিত। তারা ইসলামের শান্তিপূর্ণ বাণী প্রচারের জন্য নিজেদের অর্থে দেশ-বিদেশ সফর করেন।

তাবলিগ কট্টরপন্থীদের কাছে চলে গেলো?

কুষ্টিয়ার ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামি স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর ড. একেএম নুরুল আলম বেনারকে বলেন, তাবলিগ জামাত ব্রিটিশ আমল থেকে বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে ইসলাম প্রচারের কাজ করে যাচ্ছে। তারা সুফিবাদের আদলে ইসলামের শান্তিপূর্ণ বাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দেন।

“আমরা কখনো দেখিনি যে তাবলিগ জামাতের সদস্যরা রাস্তা অবরোধ করে জনগণকে কষ্ট দিয়েছে। তারা কোনো রকম সহিংসতার পক্ষে নয়। কিন্তু কষ্টের বিষয় হলো আমরা দেখলাম যে তাবলিগ জামাতের কিছু কিছু সদস্য রাস্তায় নেমেছে, সহিংসতার হুমকি দিচ্ছে,” বলেন ড. আলম।

তিনি বলেন, “মাওলানা সাদের বিরুদ্ধে এই আন্দোলনের ফলে ইজতেমার মতো মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত, যেখানে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ দেশ-বিদেশের মানুষ আসে, সেই প্রতিষ্ঠান হেফাজতের মতো সংগঠনের কাছে চলে গেলো”।

তাবলিগ জামাতের সদস্য মাওলানা আব্দুর রহিম বেনারকে বলেন, তাবলিগের মধ্যে অনেক নেতা ঢুকে গেছেন যারা তাবলিগের মূল আদর্শ অহিংস পথের পরিবর্তে আন্দোলনের কথা বলছেন। তাবলিগের কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল না।

ভারতীয় উপমহাদেশের সুন্নি মতাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় সংঘ তাবলিগ জামাতের মূল কেন্দ্র দিল্লিতে অবস্থিত। কেন্দ্রীয় ওই পরিষদে রয়েছে ১৩ জন সুরা সদস্য। তাঁরাই উপমহাদেশে তাবলিগ জামাত পরিচালনা করেন।

এই পর্ষদের একজন সদস্য মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভী সম্প্রতি নিজেকে তাবলিগের আমির দাবি করলে নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। মাওলানা সাদের বাংলাদেশে আসা নিয়ে এখানকার তাবলিগের মূল দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাও বিভক্ত হয়ে পড়েন।

মাওলানা সাদকে কেন্দ্র করে গত নভেম্বরে কাকরাইল মসজিদে দুই দল তাবলিগ কর্মীর মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার পর বাংলাদেশে তাবলিগের নেতৃবৃন্দ ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি বন্ধ করতে একটি উপদেষ্টা কমিটি করেন।

ওই কমিটিতে হেফাজতে ইসলামের নেতৃবৃন্দ রয়েছেন। তাঁদের অনেককেই গত দুদিন রাস্তায় দেখা যায়।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।