পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে হত্যা চক্রান্তের তদন্ত শুরু
2017.10.19
কলকাতা

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হত্যার চক্রান্ত নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট তদন্ত শুরু করেছে। সিআইডির আইজি অজয় রানাডে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, “আমরা সব তথ্য পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।”
মুর্শিদাবাদের ১৯ বছরের পলিটেকনিক ছাত্র কৃষ্ণেন্দু রোজের কাছে সোমবার দুপুরে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানো হয় যে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে হত্যার কাজে সাহায্য করলে তাকে এক লক্ষ মার্কিন ডলার (৬৫ লক্ষ রুপি) দেওয়া হবে। পরবর্তী সময়ে তাঁকে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়।
সিআইডির গোয়েন্দারা বৃহস্পতিবার ওই ছাত্রের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছেন। বুধবারই তাঁর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক শিক্ষককে নিয়ে কৃষ্ণেন্দু মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট মুকেশের সঙ্গে দেখা করে বিস্তারিত জানিয়েছেন। কৃষ্ণেন্দু বেনারকে বলেন, “পুলিশ সুপার আমাকে সব রকমের সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি নিশ্চিন্তে থাকতে বলেছেন।”
বুধবারই কৃষ্ণেন্দু অতিরিক্ত পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট অনীশ চক্রবর্তীর কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
মুকেশ বেনারকে বলেন, সিআইডিকে সমস্ত তথ্য দেওয়া হয়েছে। পুলিশও তদন্ত করছে।
মুখ্যমন্ত্রীকে খুনের জন্য অর্থের টোপ
বহরমপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র কৃষ্ণেন্দুর বাড়ি মুর্শিদাবাদের ফরাক্কা থানার আন্দি গ্রামে। তবে তিনি বহরমপুরেই থাকেন।
কৃষ্ণেন্দু ঘটনার বিবরণ দিয়ে বেনারকে বলেন, “আমার মোবাইলের হোয়াটসঅ্যাপে সোমবার দুপুরের পর থেকে এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির মেসেজ আসতে শুরু করে। মেসেজ কর্তা নিজের নাম লাতিন জানিয়ে লেখেন, আমেরিকা থেকে বলছি। ভারতে একজন জঙ্গিকে খুঁজছি। আমরা বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে হত্যা করতে চাই। আমাদের সহায়তা করার জন্য দেওয়া হবে এক লক্ষ ডলার। দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবার কথাও বলে।”
কৃষ্ণেন্দু বলেন, অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে না বলার পরও তাঁকে বার্তা পাঠানো হয়।
"এক পর্যায়ে পুলিশের কাছে যাওয়ার সময় আমাকে অন্য ফোন থেকে ফের বার্তা পাঠিয়ে বলা হয় যে, আমার লোকেশন তারা ট্র্যাক করে জানতে পেরেছে যে, আমি থানার আশপাশে রয়েছি। আমাকে মেরে ফেলারও হুমকি দেয়," বলেন কৃষ্ণেন্দু।
কৃষ্ণেন্দু সেদিন রাতেই বহরমপুর থানায় সব জানিয়ে অভিযোগ দায়ের করতে চাইলেও পুলিশ তা গুরুত্ব দেয়নি বলে জানান তিনি। পুলিশ তাকে ফোন কয়েক ঘণ্টার জন্য বন্ধ রাখতে পরামর্শ দিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দেয়।
কৃষ্ণেন্দু বলেন, “আমি এতটাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম যে, দাদাকে ফোন করে সব জানাই। এরপর দাদা একজনের মাধ্যমে সিআইডিকে সব জানায়।”
সিআইডি সূত্রে বলা হয়েছে, তারা তদন্ত শুরু করে জানতে পেরেছে ম্যাসেজগুলি এসেছিল যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কোনো জায়গা থেকে। তদন্তকারীরা কৃষ্ণেন্দুর সঙ্গেও কথা বলেছে। তাঁর মোবাইল ফোনটির ম্যাসেজগুলি খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে। মোবাইলের কল লিস্টের সব তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডারের কাছ থেকে।
পুলিশ সূত্রে বলা হয়েছে, কৃষ্ণেন্দুর সঙ্গে কেউ মজা করে এই বার্তা পাঠাতে পারে। তবে পুলিশ গুরুত্ব দিয়ে জানার চেষ্টা করছে কে বা কারা এই বার্তা পাঠিয়েছে। তাদের উদ্দেশ্যই বা কী ছিল।
পুলিশ প্রথমে গুরুত্ব না দেওয়ায় প্রশ্ন
বহরমপুর থানার পুলিশ অভিযোগের গুরুত্ব বিচার না করে ভুল করেছে বলে মনে করেন সাবেক গোয়েন্দা কর্তা বিপ্লব মন্ডল। তিনি বেনারকে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী নিজেই যেখানে বারে বারে তাঁকে হত্যার চক্রান্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ করে আসছেন সেখানে শুরু থেকেই বিষয়টি নিয়ে পুলিশের তৎপরতা দেখানো উচিত ছিল।”
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জানতে চাইলে মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার কোনো উত্তর দিতে অস্বীকার করেন। তবে জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মুখ্যমন্ত্রীকে হত্যা করার চক্রান্তের খবর শুনেও বহরমপুর থানার পুলিশ কেন ঘটনাটির কোনো গুরুত্ব দিল না, কেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হল না, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু হয়েছে।
রাজ্য সচিবালয় সূত্রে বলা হয়েছে, পুলিশ বিষয়টির তদন্ত করছে।
হত্যার চক্রান্তের অভিযোগ বারবার
“মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হত্যার চেষ্টা এর আগেও হয়েছে”, বেনারকে বলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা ফিরহাদ হাকিম।
তিনি আরও বলেন, “মমতা তাঁর রাজনৈতিক জীবনে বারবার আক্রমণের শিকার হয়েছেন। এক বাম কর্মীর লাঠির আঘাতে তিনি মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছিলেন। বাম সরকারের আমলেও তাকে মেরে ফেলার চক্রান্ত হয়েছিল।”
গত বছরের ডিসেম্বর পাটনা থেকে আসার সময় বিমানে জ্বালানি কম থাকার কথা পাইলট বারে বারে জানানো সত্ত্বেও বিমানকে বিমানবন্দরে দীর্ঘক্ষণ নামতে দেওয়া হয়নি। এই ঘটনাটিকেও তাঁকে হত্যার চক্রান্ত বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই অভিযোগ করেছিলেন।
বিষয়টি নিয়ে লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেস নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করে বলেছিলেন যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাই ভারত সরকারের উচিত তাঁর নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা।
হোয়াটস অ্যাপে মুখ্যমন্ত্রীকে হত্যার বার্তা নিয়ে অবশ্য সরকারিভাবে নবান্ন থেকে এদিন কোনো মন্তব্য করা হয়নি।