কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতিকে ৬ মাস কারাদণ্ড দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট

পরিতোষ পাল
2017.05.09
কলকাতা
বিচারপতি কারনান তাঁর বাড়ির সামনে পুলিশের সঙ্গে কথা বলছেন। বিচারপতি কারনান তাঁর বাড়ির সামনে পুলিশের সঙ্গে কথা বলছেন। মে ০৪ ২০১৭।
AFP

কলকাতা হাইকোর্টে কর্মরত বিচারপতি চিন্নাস্বামী স্বামীনাথন কারনানকে আদালতের নির্দেশ অবমাননার দায়ে মঙ্গলবার ছয় মাসের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। অবিলম্বে তাঁকে গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ডিজিকে।

একই সাথে ভারতের শীর্ষ আদালত বিচারপতি কারনানের কোনো নির্দেশ ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াতে প্রকাশের ক্ষেত্রে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

বিচার বিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মতে, ভারতের বিচার ব্যবস্থার ইতিহাসে এর আগে কর্মরত কোনো বিচারপতিকে কারাদণ্ড দেওয়ার নজির নেই। আইনজ্ঞদের মতে, বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের পাল্টাপাল্টি সাজা দেওয়ার ঘটনারও কোনো নজির নেই।

মাত্র একদিন আগে গত সোমবার বিচারপতি কারনান নিজ বাড়িতে আদালত বসিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি-সহ মোট ৮ বিচারপতিকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা দিয়েছেন। তফশিলি জাতি/উপজাতিদের ওপর অত্যাচার প্রতিরোধ আইনের আওতায় তিনি সুপ্রিম কোর্টের ওই বিচারপতিদের কারাদণ্ড দেন বলে বিচারপতি কারনান জানান।

এর আগে গত ১ মে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি কারনানের মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার নির্দেশ দেয়। কলকাতার হাসপাতালের এক বিশেষজ্ঞ দল পুলিশসহ তাঁর বাড়িতে গেলে তিনি স্বাস্থ্য পরীক্ষায় আপত্তি জানিয়ে তা লিখিতভাবে বিশেষজ্ঞদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন।

পাল্টা বিচারপতি কারনান সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতিদেরই মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার আদেশ দিয়েছিলেন।

সংকটের সূচনা

মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারপতি থাকাকালীনই বিচারপতি কারনান বিচার ব্যবস্থার দুর্নীতি নিয়ে সোচ্চার হন। মাদ্রাজ হাইকোর্ট থেকে কলকাতা হাইকোর্টে বদলি হওয়ার পর, সেই বদলির নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিয়ে শিরোনামে এসেছিলেন বিচারপতি কারনান।

গত জানুয়ারিতে বিচার বিভাগে দুর্নীতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে তিনি তদন্তের দাবি জানান। এর প্রেক্ষিতে কারনানের বিরুদ্ধে গত ৮ ফেব্রুয়ারি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করে সুপ্রিম কোর্ট।

বিচারপতি কারনান অবশ্য কলকাতায় সাংবাদিক সম্মেলন করে বিষয়টি নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করে বলেন, “বিচার ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতেই মুখ খুলেছি। এটা জাতীয় স্তরের আলোচ্য বিষয়। এর মধ্যে অন্যায়ের কিছু নেই।”

২০ জন বিচারপতির বিরুদ্ধে বিচারপতি কারনান দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন বলে দাবি করেন। প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে তিনি অভিযোগ করেন, উচ্চবর্ণের বিচারপতিরা তিনি দলিত বলেই তাঁকে সরানোর চেষ্টা করছেন।

আদালত অবমাননার মামলা করার পর গত ৮ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি কারনানকে কলকাতা হাইকোর্টের বিচার এবং প্রশাসনিক কাজ থেকে সরিয়ে দেন। বিচারপতি কারনানের জিম্মায় থাকা বিচার ও প্রশাসনিক বিষয়ের সব ফাইল কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে পাঠিয়ে দেওয়ারও নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।

এর পর গত ১ মের নির্দেশে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করে বলেন, বিচারপতি কারনানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা রুজু হওয়ার পর থেকে তিনি যে সব নির্দেশ বা রায় দিয়েছেন তা ভারতের কোনো কর্তৃপক্ষকে মানতে হবে না।

কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বেনারকে বলেন, সুপ্রিম কোর্ট কর্মরত এক বিচারপতির বিরুদ্ধে তাঁর করা অভিযোগের প্রয়োজনীয় তদন্ত না করেই যেভাবে আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে কারাদণ্ডের সাজা দিয়েছেন তা একটি দুর্ভাগ্যজনক নজির হয়ে রইল।

তিনি বলেন, বিচারপতি কারনানের একগুঁয়ে মনোভাবের পাল্টা হিসেবে সুপ্রিম কোর্ট একের পর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি এবং মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার নির্দেশ দিয়ে বিষয়টিকে আগেই হাস্যকর করে তোলে।

আইনের অধ্যাপিকা সুনন্দা গোয়েঙ্কা অবশ্য বিষয়টি নিয়ে তর্ক-বিতর্কের অবকাশ রয়েছে জানিয়ে বেনারকে বলেন, একাডেমিক দিক থেকে দেখতে গেলে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকেই আমাদের মানতে হবে।

তবে তিনি স্বীকার করেন যে, সুপ্রিম কোর্ট বনাম বিচারপতি কারনানের বিরোধের ঘটনাটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।

এদিকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ পাওয়ার পরেই তাঁকে গ্রেপ্তার করতে কারনানের বাড়িতে যায় নিউটাউন থানার পুলিশ। কিন্তু তিনি সেখানে ছিলেন না। বাড়ির রক্ষীরা জানান, মঙ্গলবার সকালেই কারনান নিজের চেন্নাইয়ের বাড়িতে চলে গিয়েছেন।

পুলিশ সুত্র জানায়, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ডিজি সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ ইতিমধ্যে তামিলনাড়ু পুলিশের ডিজির সঙ্গে কথা বলেছেন, যাতে কারনানকে হেফাজতে নেওয়া হয়।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।