জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে মসজিদের ইমামদের কাজে লাগাচ্ছে সরকার
2016.06.21
প্রায় ৫৫ হাজারেরও বেশি মসজিদের ইমামদের মাধ্যমে সারাদেশে জঙ্গিবিরোধী শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় দেশব্যাপী এ কার্যক্রম চলছে।
জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দেশের এক লাখ মুফতি ও আলেম–ওলামা ফতোয়া ঘোষণার দু’দিন পর জাতীয় সংসদে এসব কথা জানালেন ধর্মমন্ত্রী।
শতকরা ৯০ শতাংশেরও বেশি মুসলিম অধ্যুষিত দেশটিতে জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় র্যাব–পুলিশের পাশাপাশি ধর্মীয় নেতা বিশেষ করে ইমামদের কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টির কাজ চলছে।
সংসদ সদস্য সানজিদা খানমের করা এক প্রশ্নের জবাবে মতিউর রহমান গতকাল বলেন, দেশে ৫৫ হাজার ১৮০টি মসজিদের ইমামদের মাধ্যমে জঙ্গিবাদবিরোধী শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় এ কার্যক্রম চলছে।
এ ছাড়া মসজিদগুলোতে জুম্মার নামাজের খুতবার আগেও ইমামেরা জঙ্গিবিরোধী আলোচনা করছেন বলে জানান ধর্মমন্ত্রী।
“সমাজে সব ধরনের অস্থিরতা, সন্ত্রাস ও জঙ্গি কার্যকলাপের কুফল সম্পর্কে বিভিন্ন পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সরকার জঙ্গিবাদবিরোধী একটি প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছে। প্রকল্পটির প্রস্তাব অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে,” মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনের প্রশ্নোত্তর পর্বে সংসদ সদস্য সামসুল হক চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে বলেন ধর্মমন্ত্রী।
মসজিদভিত্তিক শিক্ষার মাধ্যমে শিশু–কিশোরদের মধ্যে ধর্ম ও জঙ্গিবাদ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁদের মতে, শুরুতেই পাওয়া এ শিক্ষা শিশু–কিশোরদের কাজে আসবে।
সরকারের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে ধর্ম মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল আওয়াল বেনারকে বলেন, “ইসলামের অপব্যাখ্যার মাধ্যমে সৃ্ষ্ট জঙ্গিবাদ ও চরমপন্থার হুমকি বিবেচনা করে মক্তব ভিত্তিক শিক্ষা ও স্বাক্ষরতা কার্যক্রমে জঙ্গিবাদবিরোধী নৈতিক বক্তব্য সন্নিবেসিত করেছে সরকার।”
এর ফলে সুবিধাবঞ্চিত শিশুসহ সাধারণ মানুষ ইসলামের মূল শিক্ষা ও জঙ্গিবাদবিরোধী তথ্য জানতে পারবে বলে মনে করেন তিনি।
নওগাঁ জেলার একটি মসজিদের ইমাম মামুনুর রশীদ বেনারকে বলেন, “সরকারের মসজিদভিত্তিক কর্মসূচি ইতিবাচক ফল দিয়েছে। ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে শিশু–কিশোরদের জঙ্গিবাদের দিকে টানা এখন একটু কঠিন হবে।”
তিনি বলেন, শৈশবে শিশুরা যে শিক্ষা পায় ভবিষ্যৎ জীবনে তা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে। যখন সে জানবে, ইসলামে জঙ্গিবাদ ও চরমপন্থা হারাম, তখন সে এ ধরণের অপরাধে কখনোই জড়াবে না।
তবে শুধু মসজিদভিত্তিক নয়, প্রতিটি শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তকে জঙ্গিবিরোধী প্রচার ও বক্তব্য যুক্ত করার কথা বলছেন বিশ্লেষকেরা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরামের সভাপতি মুফতি এনায়েত উল্লাহ বেনারকে বলেন, সবাই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে পড়ে না, আর পড়লেও খুব কম সময়ের জন্য মসজিদে অবস্থান করে। শিশুদের ক্ষেত্রেও এটি সত্য।
“তাই জঙ্গিবিরোধী শিক্ষা আসতে হবে জীবনের শুরু থেকেই। এ জন্য প্রতিটি ক্লাসের পাঠ্যপুস্তকে ইসলামের নামে জঙ্গিবাদের ভয়াবহতা ও কুফল সম্পর্কে জানাতে হবে।”
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক পরিচালক মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসুদ বেনারকে বলেন, বাংলাদেশে মক্তব বা মসজিদ ভিত্তিক ধর্মীয় শিক্ষা চালু হয় ১৯৮৩ সাল থেকে। কিন্তু এতে জঙ্গিবিরোধী কর্মসূচি চালু হয়েছে বর্তমান সরকারের সময়ে। এ ধরনের কর্মসূচি আগে চালু করা গেলে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে মানুষ আরও সচেতন হতো বলে মনে করেন তিনি।