টঙ্গীতে জঙ্গি আস্তানার খোঁজ,জঙ্গিবাদ নির্মূলে পাশে থাকবে ভারত
2016.07.21

গত ১ ও ৭ জুলাইয়ে জঙ্গি হামলার রেশ ধরে প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও জঙ্গি দমন অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এসব অভিযানে জঙ্গি আটকের পাশাপাশি উদ্ধার হচ্ছে বিপুল অস্ত্র, গুলি ও জিহাদী বই। বৃহস্পতিবার ঢাকার অদূরে গাজীপুরের টঙ্গীর এক বাড়িতে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়ার কথা জানিয়েছে র্যাব।
জঙ্গিবাদ নিয়ে চলমান অস্থিরতার মধ্যে গতকাল এই ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে থাকার কথা বলেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৃহস্পতিবার বেনাপোল ও পেট্রাপোল সমন্বিত চেকপোষ্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে আয়োজিত ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠানে মোদী এ কথা বলেন।
নরেন্দ্র মোদী বলেন, “সন্ত্রাস–জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আপনি একা নন, এর বিরুদ্ধে আপনি যে লাড়ই করছেন তাতে ভারত সব সময় আপনাকে পূর্ণ সমর্থন দেবে।” প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্য রাখেন।
টঙ্গীতে জঙ্গি আস্তানা
জঙ্গি নির্মূল অভিযানের ধারাবাহিকতায় এবার গাজীপুরের টঙ্গীর এক বাড়িতে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পেয়েছে র্যাব। বৃহস্পতিবার ভোররাতে প্রায় দুই ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) দক্ষিণাঞ্চল শাখার আমিরসহ চারজনকে আটক করা হয়। এ সময় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, বোমা, গোলাবারুদ, বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানায় র্যাব।
ওই অভিযানে জেএমবির দক্ষিণাঞ্চল শাখার কমান্ডার ও জঙ্গি প্রশিক্ষক মাহমুদুল হাসান তানবীরসহ নাজমুস সাকিব, শরিয়তুল্লাহ শুভ ও আশিক উল আকবর আবেশ নামে মোট ৪ জনকে আটক করা হয়।
এ বিষয়ে র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বেনারকে জানান, “গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে এদের আটক করা হয়। এরা গত রোজার ঈদের আগে ওই বাসাটি ভাড়া নিয়ে জেএমবির জঙ্গি প্রশিক্ষণ চালাচ্ছিল।”
বন্দুক যুদ্ধে নিহত একজন
এদিকে টঙ্গী এলাকাতেই পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে আরও এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। নিহত জুয়েল ওরফে বাঘা জুয়েল অস্ত্র, হত্যা, নারী নির্যাতনসহ অন্তত আটটি মামলার আসামি বলে দাবি করছে পুলিশ। বন্দুকযুদ্ধের সময় আহত হন পুলিশের তিন সদস্য। ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, তিনটি গুলি ও দেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
টঙ্গী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদার বলেন, অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তদের অবস্থান জেনে বুধবার মধ্যরাতে ওই এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। সন্ত্রাসীরা এসময় পুলিশের ওপর দেশি অস্ত্র দিয়ে হামলা করলে তিন পুলিশ সদস্য আহত হন। পরে পুলিশের পাল্টা গুলিতে আসামি জুয়েল ওরফে বাঘা জুয়েল গুরুতর আহত হয়। হাসপাতালে পাঠানো হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সপরিবারে আইএসে অধ্যাপক পরিবার
গুলশানে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর বাংলাদেশ পুলিশ যে ১০ সন্দেহভাজনের তালিকা প্রকাশ করে, তাদের একজন জাপান প্রবাসী সাইফুল্লাহ ওজাকি সপরিবারে আইএসে যোগ দিয়ে সিরিয়ায় পাড়ি জমিয়েছেন বলে জাপানি গোয়েন্দারা ধারনা করছেন।
এদিকে বাংলাদেশ পুলিশ বলছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার জিনদপুর ইউনিয়নের কড়ই বাড়ি গ্রামের বাসিন্দা সজিত চন্দ্র দেবনাথই ২০০১ সালে বৃত্তি নিয়ে জাপান গিয়ে ধর্মান্তরিত হন সাইফুল্লাহ নাম ধারণ করেন। এরপর এক জাপানি নারীকে বিয়েও করেন তিনি।
এমন খবর দিয়ে অনলাইন দ্য জাপান টাইমস জানিয়েছে, বাংলাদেশি নাগরিক মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ ওজাকি জাপানের কিয়োটো প্রিফেকচারে রিটসুমেইকান ইউনিভার্সিটিতে পড়াতেন। গত বছর তার জাপানি স্ত্রীকে নিয়ে ইউরোপের উদ্দেশ্যে জাপান ছাড়েন।
২০১১ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের পর রিসুমেকান ইউনিভার্সিটির ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষকতায় যোগ দেন সাইফুল্লাহ। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ২০১৫ সালে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন তিনি।
তবে এ বছরের জানুয়ারি থেকে কোন নোটিশ ছাড়া অনুপস্থিত থাকায় গত মার্চ মাসে তাকে বরখাস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এদিকে কিয়োদো নিউজ জাপানের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, সাইফুল্লাহ স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ইউরোপ হয়ে সিরিয়া পাড়ি দিয়েছেন।
এতে আরও বলা হয়, এর আগে ২০১৫ সালের মে মাসে তুরস্কের হয়ে সিরিয়া যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ফিরলে জাপান পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তবে তার সঙ্গে কোনো জঙ্গি সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় ছাড়া পান তিনি।
কিয়াদো জানায়, ওই ঘটনার দুই মাস পর সিরিয়ার শরণার্থীদের সহায়তা করার কথা বলে স্ত্রী-সন্তানসহ ইউরোপ যান সাইফুল্লাহ। আর সেখান থেকেই তারা সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট অধ্যুষিত এলাকায় চলে যান।
গত ১ জুলাই গুলশানের আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার পর তদন্ত শুরু করে পুলিশ প্রথম নিখোঁজদের যে তালিকা প্রকাশ করে সেখানে সাইফুল্লাহ ওজাকির নাম রয়েছে।