জুম্মার নামাজে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী খুতবা পাঠ,শান্তি কামনা
2016.07.15

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুরোধে রাজধানীসহ সারা দেশের অধিকাংশ মসজিদে শুক্রবার জুম্মার নামাজের সময় মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে জঙ্গিবাদবিরোধী খুতবা পাঠ করা হয়েছে। এসময় জঙ্গিবাদ ও জিহাদ যে এক নয়, ধর্মপরায়ণতা ও ধর্মান্ধতা যে আলাদা বিষয় তা মুসল্লিদের কাছে তুলে ধরা হয়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে মসজিদ রয়েছে প্রায় তিন লাখ। এর মধ্যে আড়াই লাখের বেশি মসজিদে জুম্মার নামাজ পড়ানো হয়।
গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর দেশে যাতে উগ্রবাদের প্রচার না হয় সে লক্ষ্যে দেশের সব মসজিদে জুম্মার নামাজের খুতবায় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী বয়ান করার আহ্বান জানায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
গতকাল জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ রাজধানী ও সারা দেশের বিভিন্ন মসজিদে জঙ্গিবিরোধী বয়ান করা হয়েছে ।
গত ৩ জুলাই আইনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে প্রতি শুক্রবার জুম্মার নামাজের বয়ানে নজরদারির সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠকে শেষে কমিটির সভাপতি শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু সাংবাদিকদের বলেন, “যাঁরা খুতবা পড়াবেন, তাঁরা যেন প্রকৃত ধর্মীয় অনুশাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন, সে বিষয়টিও দেখা হবে।”
জুমার নামাজের খুতবায় নজরদারির সরকারি পদক্ষেপকে ‘অযৌক্তিক’ ও ‘অনভিপ্রেত’ বলেছে ইসলামী ঐক্যজোট।
“এ ধরনের সিদ্ধান্ত সব ইসলামী দল, সংগঠন, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে আহত করছে,” বেনারকে জানান দলটির চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামী।
তিনি বলেন, এ ধরনের পদক্ষেপে সাধারণভাবে খতিব ও মাদ্রাসার দিকেই সন্দেহের তীর নিক্ষেপের বীজ বপন করা হচ্ছে। সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই খতিব ও মাদ্রাসাকে হুমকি মনে করা অনুচিত।
গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার উল্লেখ করে আবদুল লতিফ নেজামী বলেন, এসব ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্য ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বা মাদ্রাসা শিক্ষা দায়ী নয়।
“এতদিন বলা হচ্ছিল দেশে জঙ্গিবাদের সঙ্গে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা জড়িত, যাঁদের বেশিরভাগই দরিদ্র পরিবারের। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, বিত্তবান পরিবারের সন্তান, ইংরেজি মাধ্যমে বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা জঙ্গি হচ্ছে,” জানান লতিফ নেজামী।
জুমার খুতবায় জঙ্গিবাদের সমালোচনা
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ সারা দেশের মসজিদগুলোতে গতকাল জুমার খুতবায় ইসলামের জন্য মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর আদর্শ তুলে ধরা হয়। ইসলামের জন্য তাঁর ত্যাগ-তিতিক্ষা তুলে ধরা হয়। খুবতায় বলা হয়,মানুষ তো দূরের কথা ইসলামে অকারনে কোনো জীবজন্ত হত্যা করার নির্দেশও দেওয়া হয়নি।
জুমার নামাজ শেষে কারও সন্তান যেন সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের মতো বিপথে না যায়, সে জন্য দোয়া করা হয়। এ ছাড়াও ইন্টারনেটে সন্তানেরা কি করছে, অভিভাবককে তা নজর রাখার আহ্বান জানান ইমামেরা।
“শুক্রবার জুমার নামাজের পূর্বে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস সম্পর্কে সতর্ক করে খুতবা দেওয়া হয়েছে। রাজধানীসহ দেশের অধিকাংশ মসজিদে এই খুতবা পাঠ করা হয়,” বেনারকে জানান ইসলামি ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল।
তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে গণমাধ্যমে ‘অশান্তি এবং জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস সম্পর্কে সতর্কীকরণ’ শীর্ষক একটি অভিন্ন খুতবার নমুনা পাঠিয়ে তা অনুসরণ করতে দেশের সব মসজিদকে অনুরোধ করা হয়েছিল।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ঠিক করে দেওয়া খুতবা সব জায়গায় ঠিকমতো পাঠ করা হচ্ছে কিনা তা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মনিটরিং করা হচ্ছে বলেও জানান মহাপরিচালক।
মসজিদের ইমামদের জন্য প্রস্তুতকৃত খুতবায় বলা হয়, “হে মুসলিমগণ! আপনারা আপনাদের সন্তান-সন্ততির বিষয়ে বিশেষভাবে মনোযোগী ও সাবধান থাকুন। তাদের সুন্দর চরিত্রের শিক্ষা দিন।”
এতে আরও বলা হয়, “তাদের বিষয়ে সজাগ থাকুন যেন আপনার চোখ ফাঁকি দিয়ে সন্ত্রাসীরা তাকে কেড়ে নিতে না পারে। সন্ত্রাসীরা এই অবুঝ সরল কিশোরদের পরিবারের নিয়ন্ত্রণ থেকে ভাগিয়ে নিয়ে নানা অপকর্মের প্রশিক্ষণ দিয়ে জঙ্গি বানাতে চেষ্টা করে থাকে।”
খুতবার শেষ দিকে বলা হয়, “সব শেষে আমরা আহ্বান করি আমাদের সন্তানদের, আমাদের যুবকদের সব সন্ত্রাসী কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে। হে আল্লাহ! আমাদের দেশ বাংলাদেশ। এ দেশকে আপনি সন্ত্রাস ও বিপর্যয় থেকে রক্ষা করুন। একে শান্তি ও সমৃদ্ধির দেশে পরিণত করুন।”
রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতাল মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করা মুসল্লি নাজমুল আহসান বেনারকে বলেন, মসজিদের ইমাম জঙ্গিবাদবিরোধী বয়ান দিয়েছেন।
“জঙ্গিবাদ ও জিহাদ যে এক কথা নয়, সন্ত্রাস করে জিহাদের কথা বলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা যে অন্যায়, ইমাম সে কথাই গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেন,” জানান নাজমুল।