জঙ্গি দমন অভিযানে তিন সংগঠনের ২১ জন গ্রেপ্তার
2016.08.03

দেশজুড়ে জঙ্গি দমন অভিযান অব্যাহত রেখেছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। গতকাল মঙ্গলবার তিনটি জঙ্গি ও ইসলামি সংগঠনের মোট ২১ নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব ও পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে নতুন জঙ্গি সংগঠন আল আনসারের প্রধান সমন্বয়কারীসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের খবর জানিয়েছে র্যাব।
নতুন জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্বকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অপরাধ বিজ্ঞানীরা। তাঁদের মতে, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের কর্মীরা নতুন নামে কার্যক্রম পরিচালনার চেষ্টা করছে।
গত মাসে রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় নজিরবিহীন জঙ্গি হামলার পর দেশব্যাপী জঙ্গি বিরোধী অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে র্যাব ও পুলিশ।
নতুন জঙ্গি সংগঠন আল আনসার
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাজধানীতে আল আনসার নামে নতুন জঙ্গি সংগঠনের পরিচয় পেয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে হাজারীবাগ এলাকা থেকে সংগঠনটির প্রধান সমন্বয়কারী হাফেজ মাওলানা মোহা. রাশিদুল আলমসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
একই সঙ্গে আটক সংগঠনটির অন্য সদস্যরা হলেন; মো. রাইসুল ইসলাম হাওলাদার (২৫), আব্দুল্লাহ আল মামুন মিয়া (৩০), আব্দুল মালেক (৩৫) ও আবু বক্কর মনির (২৩)। এ সময় তাদের কাছ থেকে জিহাদি বই এবং প্রশিক্ষণ উপকরণ উদ্ধার করা হয়।
বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা ও উগ্র ইসলামি সংগঠন হিসাবে বর্তমানে ছয়টি সংগঠন নিষিদ্ধ। এগুলোর মধ্যে রয়েছে; জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি), জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি), হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি), শাহাদাৎ-ই আল-হিকমা, হিযবুত তাহরীর এবং আনসারুল্লাহ বাংলা টিম।
হুজি থেকেই আল-আনসার
পুলিশ বলছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদদের (হুজি) সদস্যরাই নতুন জঙ্গি সংগঠন আল-আনসার গড়ে তুলেছে।
এ বিষয়ে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বেনারকে বলেন, “প্রায় ৮ মাস আগে সাংগঠনিকভাবে আল-আনসারের কার্যক্রম শুরু হয়।”
বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানায়, মঙ্গলবার রাতভর অভিযান চালিয়ে হাজারিবাগের একটি বাড়ি থেকে পাঁচ জঙ্গিকে আটক করা হয়। বিভিন্ন ছদ্মবেশে ওই বাড়িতে থাকতো তারা। জঙ্গি প্রশিক্ষণ দেয়াই ছিল আটকৃতদের মূল উদ্দেশ্য।
মুফতি মাহমুদ জানান, “এরা নিজেদের উপার্জনের অর্থ দিয়েই সংগঠনের ব্যয় পরিচালনা করতো। তবে তাদের কোন দেশি বা বিদেশি অর্থদাতা সাহায্য করতো কিনা, সে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
এই সংগঠনের আরও সদস্য বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে রয়েছে উল্লেখ করে মাহমুদ জানান, তাঁদের গ্রেপ্তারের জন্যও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
১৪ শিবিরকর্মী গ্রেপ্তার
গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকার একটি মেস থেকে ১৪ জন গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যারা ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মী বলে জানিয়েছে পুলিশ। এসময় বিপুল সংখ্যক জঙ্গিবাদী বই ও সরকারবিরোধী প্রচারপত্র উদ্ধার করা হয়।
“নাশকতার পরিকল্পনা করার জন্য তারা মেসটিতে গোপন বৈঠক করছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে,”বেনারকে জানান হাজারীবাগ থানার পরিদর্শক মো.মনিরুজ্জামান।
পুলিশ জানায়, সাইফুল ইসলাম (৩২) নামে একজন নিজেকে গ্রেপ্তারকৃতদের মূল নেতা দাবি করেছেন। তবে পুলিশ গতকাল পর্যন্ত বাকিদের নাম–পরিচয় প্রকাশ করেনি।
হিযবুত তাহ্রীরের চার কর্মী আটক
চলমান অভিযানে সিলেট থেকে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের সন্দেহভাজন চার কর্মীকে আটক করেছে র্যাব।২০১৪ সালে পুলিশের ওপর হিযবুত তাহ্রীরের হামলার ঘটনায় আদালতে চলমান একটি মামলার হাজিরা দিয়ে ফেরার সময় আদালতের ফটক থেকেই আটক করা হয় তাদের।
জঙ্গি–সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে এই চারজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানান র্যাব-৯ এর মুখপাত্র (গণমাধ্যম) মেজর ফখরুল ইসলাম খান।
এরা নিষিদ্ধঘোষিত হিযবুত তাহ্রীরের সদস্য বলে জানালেও জঙ্গি তৎপরতা অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
জঙ্গিদের বিভিন্ন কৌশল
বিশ্লেষকেরা বলছেন, দেশে বিভিন্ন নামে জঙ্গিদের কার্যক্রম চলছে। জঙ্গিরা নিজের নাম বদল করছে, ভিন্ন ভিন্ন নামে সংগঠন গড়ে তুলছে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজান বেনারকে বলেন,“কোন একটি সংগঠন নিষিদ্ধ হলেই তার সদস্যরা থেমে যায় না। তারা নীরবে ভিন্ন উপায়ে জঙ্গি কার্যক্রম চালিয়ে যায়। এসব সদস্যরা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে।”
তবে শুধু আটকের মধ্যেই জঙ্গি দমনকে সীমাবদ্ধ না রাখার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “জঙ্গিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং কোনভাবেই বিচার দীর্ঘায়িত করা যাবে না।”