এক লাখ ওলামার স্বাক্ষরে জঙ্গিবাদ বিরোধী ‘ফতোয়া’
2015.12.17

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দেশের এক লাখ ওলামার স্বাক্ষরে একটি ‘ফতোয়া’ প্রচারের পরামর্শ দিয়েছেন শোলাকিয়ার ইমাম ফরীদ উদ্দীন মাসউদ। এটা কীভাবে করা সম্ভব তা নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু হয়েছে।
ঢাকায় পুলিশ সদরদপ্তরে ধর্মীয় নেতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক যৌথ সভায় অংশ নিয়ে তিনি এ পরামর্শ দেন। জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে গত বৃহস্পতিবার ওই সভায় এমন মত দেওয়ার পর বিষয়টি পুলিশ, ধর্মীয় নেতাসহ সংশ্লিষ্টদের চিন্তার খোরাক যুগিয়েছে।
গতকাল তার পরামর্শ শুনে ‘কীভাবে এক লাখ আলেমের সই নিয়ে ফতোয়া দেওয়া যায়’- সে বিষয়ে উদ্যোগ নিতে মাওলানা মাসউদকে কমিটি করার অনুরোধ জানান পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহিদুল হক।
কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ার কয়েক লক্ষ মুসল্লির অংশগ্রহণে দেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়, ২০০৯ সালের পর থেকে ওই জামাতে ইমামতি করে আসছেন ফরীদ উদ্দীন ।
এর আগে জামায়াতে ইসলামীকে সন্ত্রাসী দল ও ‘পাকিস্তানের চর’ বলে আখ্যায়িত করেন জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান ও শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম ফরীদ উদ্দিন মাসউদ। গণজাগরণ মঞ্চের কমর্সূচীতে সমর্থন ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি করে তিনি আলোচিত ও সমালোচিত হন।
শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম গতকাল ওই সভায় বলেন, “যারা ধর্মের নামে হত্যা এবং বিভিন্ন সন্ত্রাস করছে তারা সঠিক কাজ করছেন না। ইসলাম ধর্ম হত্যাকে কোনোভাবে সমর্থন করে না। তাই জনগণকে সচেতন করার জন্য সারা দেশের এক লাখ ওলামাকে নিয়ে তাদের স্বাক্ষরিত একটি ‘কমন ফতোয়া’ লিখে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।“
“যুবক ছেলেরা ভুল করে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে। এধরণের আহ্বানে ভুল পথে পা বাড়ানোর সংখ্যা কমে আসবে ,” মনে করেন এই ধর্মীয় নেতা।
সকালে পুলিশ সদর দপ্তর আয়োজিত ‘জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে ইসলামের ভূমিকা, বাংলাদেশ প্রেক্ষিত’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে আইজিপি শহিদুল হক ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. মোখলেছুর রহমানসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এতে দেশের ১৪ জন আলেম ও ধর্মীয় নেতা বক্তব্য রাখেন।
আইজিপি বলেন, “আলেম-ওলামাদের প্রতি আমাদের অনুরোধ, তারা যেন খুতবার আগে বয়ানের মাধ্যমে জঙ্গিবাদবিরোধী প্রচারণা চালান।”
এর আগে ইসলামিক ফাউন্ডেশন জুমা’র নামাজের খুৎবায় জঙ্গীবাদবিরোধী বক্তব্য দেওয়ার জন্য মসজিদের ইমামদের অনুরোধ করে। এখনও অনেক ইমাম এমন বক্তব্য দেন।
ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, বাংলাদেশে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা জঙ্গিগোষ্ঠী একাত্তরের পরাজিত শক্তির ভেতর থেকেই সৃষ্ট। জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ইত্যাদি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর জন্ম এদেরই উদর থেকে। সন্ত্রাসকে রুখতে হলে এদেরকে নিষিদ্ধ করা এবং এদের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাজেয়াপ্ত করে জনগণের মালিকানায় আনা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
শোলাকিয়ার এই ইমাম বলেন, ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি করা ব্যতীত ধর্মের নামে সন্ত্রাসের মহাদানবকে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। যেহেতু ধর্মের অপব্যাখ্যার পিঠে চড়ে বিস্তৃতি লাভ করছে, সুতরাং এ ক্ষেত্রে আলেমদের নীরবে বসে থাকলে চলবে না।
এক লাখ আলেমের সাক্ষরে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ফতোয়া দেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন ফরীদ উদ্দীন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মনে করছে দেশে জঙ্গি কার্যক্রমের হুমকি মোকাবেলায় এই মসজিদগুলো ভূমিকা রাখতে পারে।
সম্প্রতি পুলিশ প্রধান এ কে এম শহিদুল হক মসজিদের ইমামদের সাথে এ নিয়ে একটি বৈঠকও করেছেন। ইসলাম ধর্মের নাম ব্যবহার করে কেউ যাতে জঙ্গিবাদের দিকে আকৃষ্ট না হয়, সেজন্যই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানালেন পুলিশ প্রধান।
"মসজিদে যারা আসে তারা তো ভালো মানুষ। যারা জঙ্গি তারা তো মসজিদে আসে না এবং আসলেও তাদের মগজ ধোলাই করা," বেনারকে জানান ঢাকার মোহাম্মদপুরের একটি মসজিদের ইমাম মো: ইসমাইল হোসেন।
জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্য চায় বিএনপি
বিরোধী দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এই আহ্বান জানান। রাজধানীর ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে ওই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলার ঘটনা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল সরকারের উদ্দেশে বলেন, এ ধরনের হামলাকে হালকাভাবে দেখলে হবে না। এমন অবস্থা থেকেই ইরাক, সিরিয়া, লেবাননে আজকের বিধ্বস্ত অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।