কোরআনের ভুল ব্যাখ্যার প্রসার রোধে ব্যাখ্যাসহ ৩০ খণ্ডের ফতোয়া তৈরি
2016.08.11

দেশের মানুষের মধ্যে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে চেতনা সৃষ্টি হওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই চেতনা আরও শাণিত করতে ভূমিকা রাখার জন্য দেশের আলেম–ওলামাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা আয়োজিত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে উলামা সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণ দেন।
অনুষ্ঠানে শোলাকিয়া ঈদ জামাতের গ্র্যান্ড ইমাম ও জমিয়তুল উলামার সভাপতি ফরিদ উদ্দীন মাসউদ বাংলাদেশের এক লাখ আলেমের স্বাক্ষর সংবলিত ৩০ খণ্ড ফতোয়ার একটি খণ্ড প্রতীকী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।
প্রধানমন্ত্রী এসময় বলেন, ইসলামের সঠিক শিক্ষাটা যেন সবাই পায়, সে ব্যবস্থাটা আলেম-উলামাদেরকেই করতে হবে।
দেশজুড়ে জঙ্গিবাদের প্রসার ঠেকাতে এ বছরের ৩ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত এক লাখ আলেম-উলামাদের সাক্ষর সংগ্রহ করা হয়।কোরআনের ভুল ব্যাখ্যার প্রসার রোধে তাঁরা এক হয়ে এই ফতোয়া তৈরি করেন।বইয়ে ফতোয়ার ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়েছে।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পবিত্র কোরআন ও হাদিসের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে তরুণদের মগজ ধোলাই করা হয়। কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায় নিহত আবদুল্লাহ এই দায়িত্ব পালনকারীদের একজন ছিলেন।
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার ছানোয়ার হোসেন বেনারকে বলেন, “ধাপে ধাপে তরুণদের জেহাদের নামে নৃশংস কায়দায় মানুষ হত্যার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়। এরা প্রথমে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ার পদ্ধতি নিয়ে সমালোচনা শুরু করে। এরপর তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে। বিভিন্ন জায়গায় আস্তানা গেঁড়ে সেখানে ‘কোচিং’ শুরু করে।পরে কোচিং শেষে তাদের কিলিং মিশনে পাঠানো হয়।”
ইসলাম ধর্মের একাধিক গবেষক বলছেন, মহানবী (সঃ) যত দিন বেঁচে ছিলেন, তত দিন পর্যন্ত জীবনযাপন পদ্ধতি কি হবে তার নির্দেশনা মানুষ তাঁর কাছ থেকে বা তাঁর অনুমতিতে খলিফা ও সাহাবিদের কাছ থেকে পেতেন। কিন্তু তাঁদের মৃত্যুর পর মানুষ কার কাছে যাবেন তা নিয়ে সমস্যায় পড়লেন। কারণ কোরআন শরিফের আয়াত নানা প্রেক্ষাপটে নাজিল হয়।এরই পরিপ্রেক্ষিতে মাজহাবের উদ্ভব হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ আবদুর রশীদ বেনারকে বলেন, “যারা ইসলামের নামে মানুষ খুন করছে, তারা কোনো মাজহাব মানে না। কোন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কোন আয়াত নাজিল হয়েছে, তার ব্যাখ্যায় না গিয়ে তরুণদের মানুষ খুনে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।”
মাওলানা ফরিদউদ্দিন মাসউদ গতকালের অনুষ্ঠানে বলেন, “লক্ষ অস্ত্রের চেয়ে ফতোয়ার শক্তি অনেক ধারালো। ধর্মের নামে সন্ত্রাস যারা করছে, তারা বেহেশত লাভের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে করছে। এটা যে জাহান্নামের পথ, তা যখন বুঝতে পারবে নিশ্চয়ই তারা এ পথে আর পা বাড়াবে না।”
সম্প্রতি জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে দিনাজপুরে মাকে হত্যার হুমকি দেওয়ার ঘটনায় আলমগীর নামের এক তরুণকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তার বাড়ি থেকে বিস্ফোরক উদ্ধার হয়। দিনাজপুরের পুলিশ সুপার মো. রুহুল আমিন সাংবাদিকদের বলেন, “বাড়িতে জেএমবি সদস্যদের আনাগোনা থেকে আলমগীরের মা চমন খাতুন বিরক্ত হয়েছিলেন। মাকে ‘কাফের’ বলে গালি দেয় ওই তরুণ। পরিবারের সদস্যরাও তার আচরণে ভীত হয়ে পড়ে।”
ওই ছেলেটির বন্ধু আবদুল্লাহ কল্যাণপুরে অপারেশন স্টর্ম ২৬ এ পুলিশের গুলিতে নিহত হয়।
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইমের প্রধান মনিরুল ইসলাম বেনারকে বলেন, ধর্ম ব্যবসায়ীরা জিহাদের কথা বলে তরুণদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে ও পরিবারের বিরুদ্ধে দাঁড় করায়।
গত ২৬ জুলাই কল্যাণপুরের অভিযানে উদ্ধার অডিও রেকর্ডে এর প্রমাণ আছে। ব্যবসায়ী তওহিদ রউফের সন্তান ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সেহজাদ রউফ অর্ককে বলতে শোনা যায়; “আমি সেহজাদ রউফ অর্ক। আমার পরিবারের প্রতি বার্তা। আমার পরিবারের সদস্য তাওহিদ রউফ এবং অন্যান্যরা যারা শেখ হাসিনার সমর্থক। আমাদের শরিয়ত আইন সমর্থন করতে হবে যাতে আমরা বেহেশতে যেতে পারি। আর এটাই বেহেশতে যাওয়ার একমাত্র পথ।”
তার বক্তব্য হচ্ছে, “আমাদের জিহাদ করতে হবে। আমরা হত্যা করব অথবা হত্যার শিকার হব। আর এটা করতে পারলেই তবে বেহেশত আমাদের জন্য। আমরা গণতন্ত্র সমর্থন করতে পারি না। শেখ হাসিনাকে সমর্থন করতে পারি না। আমার পরিবারের সদস্য এবং যারা এটা সমর্থন করে তারা মুরতাদ।”
ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বেনারকে বলেন, “জঙ্গিদের সব সময়ের উদ্দেশ্য ভীতি ছড়ানো। তারা নৃশংস কায়দায় খুন করে। ভীতি ছড়িয়ে মানুষকে দলে টানার জন্যই জিহাদের কথা বলে।”