পর্যটন শহর কক্সবাজার থেকে হাতিয়ায় স্থানান্তর হচ্ছে রোহিঙ্গারা

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2015.05.28
BD-rohingya কক্সবাজারের একটি ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের ঘর, তাদেরকে হাতিয়ায় সরানোর কথা চলছে। মে,২০১৫
বেনার নিউজ

পর্যটন শহর কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সরিয়ে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় নিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে রোহিঙ্গাদের শরণার্থীদের জড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে হাতিয়ার পূর্বদিকে নতুন জেগে ওঠা ঠেঙ্গার চর পাঁচশ একর জমির প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।

মানবপাচার নিয়ে আন্দামান সাগরে সঙ্কট নিয়ে বিশ্ব যখন তোলপাড় তখনই সরকারের এই পরিকল্পনার কথা জানা গেল। তবে কয়েকমাস আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো কক্সবাজার থেকে ‘সুবিধাজনক’ স্থানে সরানোর কথা বলেছিলেন।

সেই মত বাংলাদেশে আশ্রয় পাওয়া মিয়ানমারের এই শরণার্থীদের জন্য সুবিধাজনক স্থান হিসেবে এখন নোয়াখালীর হাতিয়াকে বেছে নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা।

এই বিষয়ে নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক বদর মুনির ফেরদৌস বৃহস্পতিবার বেনারকে বলেন, “বেশ কিছুদিন আগে এমন একটি প্রস্তাব আমাদের কাছে আসে। হাতিয়ায় সুবিধাজনক ও প্রশস্ত জায়গা পাওয়া যাবে কিনা জানতে চাওয়া হয়। সে অনুযায়ী হাতিয়ার ঠ্যাঙার চরাঞ্চলের ৫০০ একর জায়গার প্রস্তাব আমরা পাঠিয়েছি।”

হাতিয়ার স্থানীয়রা বলছেন, মূল হাতিয়ার জনসংখ্যা প্রায় ৬ লাখ। তাই এসব শরানার্থীকে জায়গা দিতে হলে নতুন জেগে ওঠা চরাঞ্চলকে বেছে নিতে হবে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক আলী হোসেন বলেন, “কক্সবাজার থেকে নোয়াখালীর হাতিয়ার কোনো একটা অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেওয়ার আলোচনা চলছে।”

তবে কী প্রক্রিয়ায়, কবে থেকে রোহিঙ্গা সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক। তিনি বলেন, “আমার কাছে শুধু জায়গা্ আছে কিনা জানতে চাওয়া হয়। যদি সরকার রোহিঙ্গা সরানোর পরিকল্পনা করেই থাকে, তাহলে এর সঙ্গে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পৃক্ত। তাছাড়া স্থানটি যাচাই-বাছাই, উন্নয়ন কর্মসহ নানা কর্মকান্ড এর সঙ্গে সম্পৃক্ত। সেসব কিছুই এখনো শুরু হয়নি।”
আর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন শুরু হলেই বিস্তারিত জানানো যাবে বলেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক।

জানা যায়, হাতিয়া দ্বীপের পূর্বাঞ্চলের ঠেঙ্গারচরে বর্তমানে কোন জনবসতি নেই। এটি মূল হাতিয়া থেকে বেশ দূরে। সেখানে বন বিভাগের ১২ হাজার একর জমি রয়েছে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবসনে সেখান থেকে ৫০০ একর জমি নিতে হবে বলে নোয়াখালীর জেলা প্রশাসন ভূমি মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে।

কক্সবাজারের কুতুপালং ও নয়াপাড়ায় বর্তমানে রোহিঙ্গাদের দুটি শরণার্থী শিবির রয়েছে। যেখানে ৩৪ হাজার নিবন্ধিত শরণার্থীর সংখ্যা থাকলেও এর বাইরে পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে রয়েছে বলে সরকারের হিসাব।

তবে যাদেরকে সরানো নিয়ে এত আলোচনা সেই রোহিঙ্গারা সরকারের যেকোন সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে রাজি। শুধু আশ্রয় হারাতে চান না তারা। এ বিষয়ে কুতুপালং রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইসমাইল বেনারকে বলেন, আমরা যেহেতু বাংলাদেশে বসবাস করছি, তাই সরকারের যা করবেন তারা তা মেনে নিতে বাধ্য। তবে সরকারের প্রতি অনুরোধ এই নির্যাতিত জনগোষ্ঠিকে যেখানেই পাঠানো হোক না কেন, তা যেন বসবাস করার জন্য উপযুক্ত হয়।

তবে এ বিষয়ে জাতিসংঘ শরনার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এর ঢাকা কার্যালয়ের কমিউনিকেশন অ্যাসোসিয়েট অঞ্চিতা সাদমান বলেন, এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কিছু জানানো হয়নি। তবে যদি রোহিঙ্গাদের সরানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়, তাহলে সেটা রোহিঙ্গাদের সম্মতিতে হওয়া উচিত। অর্থাৎ যারা যেতে চাইবে, তাদেরকেই শুধু নতুন ক্যাম্পে নেওয়া উচিত হবে।

রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প থেকে বের হওয়ার অনুমতি না থাকলেও নিরপত্তা রক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা বাইরে বেরিয়ে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ আছে। এমনকি বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে রোহিঙ্গারা বিদেশে বিভিন্ন অপরাধ কর্ম করে থাকেন। মিয়ানমার হয়ে মাদক ও মানব পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও গোয়েন্দাদের দাবি।

এই শরণার্থী শিবিরের অবস্থান কারণে বাংলাদেশের প্রধানতম পর্যটন শহর কক্সবাজারের জন্য হুমকি হিসেবে দেখেন অনেকে। পাশাপাশি স্থান স্বল্পতার কারণে ক্যাম্পগুলোতে শরণার্থীদের সমস্যার বিষয়টিও ভাবা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরিয়ে নেওয়া নতুন স্থানে এখনকার তুলনায় রোহিঙ্গাদের জীবনমান উন্নত হবে। এছাড়া কিছুটা বিচ্ছিন্ন স্থান হওয়ায় তাদেরকে নজরদারিতে রাখা যাবে।

মিয়ানমারে জাতিগত ও রাজনৈতিক কারণে নিপীড়নের শিকার মুসলিম রোহিঙ্গারা দুই দশক আগে ব্যাপক হারে বাংলাদেশে প্রবেশ শুরু করে।

বাংলাদেশ সরকার এসব শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে। নানা দেনদরবারেও সাড়া দিচ্ছে না আসিয়ানভুক্ত দেশটি।

এমনকি তারা রোহিঙ্গাদের নিজের দেশের নাগরিক হিসেবেও মানতে নারাজ। এনিয়ে আন্তর্জাতিক চাপ থাকলেও তাতে পাত্তা দিচ্ছে না মায়ানমারের সামরিক সরকার।

দেশটিতে ২০১২ সালে নতুন করে জাতিগত দাঙ্গা শুরু হয়। সীমান্তে আবারও বাড়তে থাকে রোহিঙ্গাদের চাপ। তবে নতুন কোন রোহিঙ্গাকে ঢুকতে না দেওয়ার অবস্থান নেয় বাংলাদেশ সরকার।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।