গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ শেখাতে মাধ্যমিক স্কুলে স্টুডেন্টস কেবিনেট
2015.08.06

দেশের মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য স্টুডেন্টস কেবিনেট গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রনালয়। এই উদ্যোগের ফলে কিশোর বয়স থেকে শিক্ষার্থীদের গণতন্ত্র চর্চা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তুলবে বলে মনে করছে সরকার।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বুধবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের কাছে স্টুডেন্টস কেবিনেট নির্বাচনের উদ্দেশ্য-লক্ষ্য সহ বিস্তারিত তুলে ধরে বলেন, “সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে স্টুডেন্টস কেবিনেট গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
“এই কেবিনেট স্কুলের পরিবেশ সংরক্ষণ, পুস্তক ও শিক্ষণ সামগ্রী, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও সহপাঠ কার্যক্রম, বৃক্ষ রোপণ, বাগান তৈরি, জাতীয় দিবস পালন ও আইসিটি বিষয়ক কার্যক্রমে ভূমিকা রাখবে,” জানান শিক্ষামন্ত্রী।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রথম পর্যায়ে আগামী ৮ আগস্ট দেশের এক হাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে নির্বাচনের মাধ্যমে এ কেবিনেট গঠন করা হবে। ধাপে ধাপে এই সংখ্যা বাড়বে। দেশে প্রায় ১৮ হাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে।
এ বছর দেশের ৪৮৭টি উপজেলা ও ৮টি মহানগরে ১০৪৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ৪৯৫ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৪৮৭টি দাখিল মাদ্রাসা ও ৬১টি কারিগরি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এবারে মোট ভোটার সংখ্যা ৬,২৪,৫৩২ জন। নির্বাচনে ৮,৩৪৪টি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ১৫,৮৪৩ জন।
এর আগে শিশুকাল থেকে শিক্ষার্থীদের মনে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০১০ থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চালু হয় স্টুডেন্টস কাউন্সিল নির্বাচন। ধাপে ধাপে দেশের প্রায় ৬২ হাজার সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ নির্বাচনের মাধ্যমে কাউন্সিল গঠন হয়েছে। দেশে মোট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা প্রায় ৮২ হাজার।
৫ আগস্ট মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে এই সিদ্ধান্ত জানানোর পরপরই প্রশ্ন উঠেছে, যে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ নেই, সেখানে কিশোরদের জন্য নতুন করে এই সুযোগ দেওয়ার সুফল কতটা মিলবে।
১৯৯০ সালের পর থেকে গণতন্ত্র চর্চার সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাবলিক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রসংসদ নির্বাচন বন্ধ রয়েছে।
বড় দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি যখন ক্ষমতায় থাকে, তখন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রসংসদ নির্বাচন চায়, আর বিরোধী ছাত্রসংগঠনগুলো তখন চায় না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও এই সুযোগ নিয়ে সম্ভাব্য অস্থিরতা এড়াতে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের দিকে যেতে আগ্রহী হয় না।
“গণতন্ত্রের সূতিকাগার বলে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতন্ত্র নেই, দেশেও গণতন্ত্র নেই। তাই কিশোরেরা কীসের গণতন্ত্র শিখবে?,” প্রশ্ন রাখেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি লিটন নন্দী। তাঁর মতে, গণতন্ত্রের শিক্ষা ভালো, কিন্তু সেই পরিবেশ দেশে আছে কিনা তা ভাবতে হবে। নইলে ওই শিক্ষা কাজে লাগবে না।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, পরীক্ষামূলকভাবে দেশের প্রত্যেক উপজেলা ও মহানগরে মাধ্যমিক পর্যায়ে তিনটি প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে স্টুডেন্টস কেবিনেট গঠন করবে।
“বিষয়টি নতুন এবং এটা আমাদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করবে বলে মনে হচ্ছে,” বেনারকে জানায় রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী দিতি তাহরিন কবির।
দিতি জানায়, “আমাদের ক্লাসে একজন করে ক্যাপ্টেন রয়েছে। সাধারণত যাদের ক্লাস রোল প্রথম দিকে তাদের মধ্যে থেকে শ্রেণীশিক্ষকেরা ক্যাপ্টেন নির্বাচন করেন। এখন সরাসরি নির্বাচন হলে আমাদের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ওই দায়িত্বসহ আরও কিছু পালন করবে।”
নিয়ম অনুযায়ী, বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রী ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে। নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী ভোটার তালিকাভুক্ত যে কোন শিক্ষার্থী নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবে।
স্টুডেন্টস কেবিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। প্রতি ছয় মাস অন্তর সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের উপস্থিতিতে এই কেবিনেটের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রত্যেক ভোটার প্রত্যেক শ্রেণিতে একটি এবং সর্বোচ্চ তিনটি শ্রেণিতে দুটি করে মোট আটটি ভোট দিতে পারবে। ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণিতে একজন করে এবং ৮ম, ৯ম ও ১০ম শ্রেণিতে দুজন করে মোট আটজন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নিয়ে স্টুডেন্টস কেবিনেট গঠিত হবে।
“এ নির্বাচন হবে সম্পূর্ণভাবে অরাজনৈতিকভাবে। এতে কোনো পোস্টার ছাপানো যাবে না, প্রার্থীদের কোনো প্রতীক থাকবে না। তবে প্রার্থীরা হাতে লেখা একাডেমিক ও শিক্ষা উন্নয়নমুখী স্লোগান সংবলিত পোস্টার ব্যবহার করতে পারবে,” বেনারকে জানান শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা নিজেরাই নির্বাচন কমিশনার, প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসারসহ সবধরণের নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবে।
“এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা অন্যের মতামতের প্রতি সহিষ্ণুতা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন শিখবে। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিখন-শিখানো কার্যক্রম আরও জোরদার হবে,” বেনারকে জানান বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ইনসান আলী।