নারী সাংবাদিকদের প্রতি হুমকি প্রতিরোধের আহ্বান

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2015.11.06
BD-threat ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশ কভার করতে গিয়ে হামলার শিকার হন সাংবাদিক নাদিরা শারমিন।
বেনার নিউজ

বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত নারী সাংবাদিকদের হুমকি দিয়েছে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত আনসারুল্লাহ বাংলা টিম। এর দুই সপ্তাহ কেটে গেলেও হুমকিদাতাদের কোন হদিস পায়নি পুলিশ। তবে অপরাধীদের খুঁজে বের করে দমন না করলে তারা দেশের উন্নয়ন ও প্রগতির পথে অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন নারী সাংবাদিকরা।

গত ২০ অক্টোবর আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নামে বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাঠানো  ইমেল বার্তায় নারী কর্মীদের চাকরিচ্যুত করতে আহ্বান জানানো হয়েছে।

পুলিশ বলছে, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে তারা নজরদারিতে রেখেছেন। এদিকে এ হুমকি কর্মরত নারী কর্মীদের পেশাগত কাজে সমস্যা তৈরি না করলেও একের পর এক ব্লগার, প্রকাশক হত্যা তাদেরকে একধরনের শঙ্কার মধ্যে ফেলেছে।

নারী সাংবাদিকরা বলছেন, এ হুমকিতে সাংবাদিকতা পেশার নারীরা পিছিয়ে যাবে না ঠিকই, কিন্তু এ ধরনের হুমকি অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যত কর্মী তৈরি করা কঠিন হবে।


‘সমাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে’

আনসারুল্লাহ’র দেওয়া হুমকির বিষয়ে একটি বেসরকারী টেলিভিশনে বার্তা সম্পাদক শাহানাজ মুন্নী বেনারকে বলেন, এ ধরনের হুমকিতে সাধারণত আমাদের পরিবারগুলো শঙ্কিত হয়। কিন্তু আমরা যারা মাঠে ঘাটে কাজ করি তোরা অতটা শঙ্কিত নই। কারণ, সাংবাদিকতা একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা জেনেই কাজ শুরু করেছি। বলা যায় চ্যালেঞ্জকে ভালবেসেই গত ১৫-২০ বছর ধরে সাংবাদিকতা করছি। সে অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, কোন অযৌক্তিক হুমকিতে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে এ ধরনের উড়ো হুমকির ঘন ঘন আসতে থাকলে সমাজে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েতে পারে। যে মেয়েরা এ পেশায় আসার কথা ভাবছে, যারা সাংবাদিকতা করার স্বপ্ন দেখছে- তারা পিছিয়ে যেতে পারে। পরিবারগুলোর কাছ থেকে সমর্থন না পেতে পারে।

তিনি বলেন,  বাংলাদেশের যে উন্নতি, তা নারীরা ঘরের বাইরে কাজ করছে বলেই অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী ও নারী, তাকেও কি তারা হুমকি দেবে?- যদি তাই দেয়, তাহলে তারা রাষ্ট্রকেই মানে না। সুতরাং রাষ্ট্রের উচিত তাদেরকে খুঁজে বের করে দমন করা।


গড়তে হবে সামাজিক প্রতিরোধও

শাহানাজ মুন্নী সামাজিভাবেও প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রতি গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, “সরকারের ভূমিকার পাশাপাশি হুমকিদাতাদের রুখতে সামাজিকভাবেও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। যাতে কেউ অযৌক্তিক, উদ্ভট হুমকি দেওয়া চেষ্টা বা চিন্তা না করে। দেশের নতুন প্রজন্ম যাতে এ ধরনের কর্মকান্ডে না জড়িয়ে পড়ে সে বিষয়ে শিক্ষকসহ সকলকে সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে।


‘ব্লগার, প্রকাশকের পর নারী সংবাদকর্মীর উপর হামলার শঙ্কা’

একই বিষয়ে আলাপকালে আরেক বেসরকারী টেলিভিশন এটিএননিউজের কর্মী ইসরাত জাহান উর্মী বেনারকে বলেন, “আমরা ভয় পেয়ে বা শঙ্কিত হয়ে কাজ ছাড়ছি না ঠিকই তবে দেশে যেভাবে ব্লগার, প্রকাশক হত্যা চলছে তাতে একটা শঙ্কা থেকেই যায়। কারণ, কারা, কী কারণে এসব হত্যাকান্ড চালাচ্ছে তা এখনো পরিস্কার নয়। এরপরে যে গণমাধ্যমের নারী কর্মীদের উপর হামলা আসবে না এটা তো বলা যাচ্ছে না।”
‘পিছিয়ে পড়বে দেশ’

এ ধরনের হুমকিদাতাদের প্রতিরোধ না করা গেলে তারা পুরো দেশের জন্য হুমকি হয়ে দাড়াবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু।

তিনি বেনারকে বলেন, “নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের এ ধরনের হুমকি শুধু একজন নারী সাংবাদিকের জন্য শঙ্কার ব্যাপার নয়, পুরো দেশের জন্য বিষয়টি শঙ্কার। দেশের প্রগতির এটা হুমকি। কারণ, নারীরা পিছিয়ে গেলে দেশও পিছিয়ে পড়বে। তাই যারা নারী সমাজকে পিছিয়ে দেওয়ার কাজে তৎপর, তাদেরকে খুঁজে বের করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকেই।”

আনসারুল্লাহ’র হুমকির পর থেকে এ পর্যন্ত এখনো নারী সাংবাদিক নিরপত্তাহীনতার বিষয়ে পুলিশের কাছে কোন সাহায্য বা অভিযোগ না করলেও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোনতাসিরুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “কেউ হয়ত ভয়ভীতি দেখানোর জন্য এ ধরনের হুমকি দিয়ে থাকবে। আমরা গণমাধ্যমে পাঠনো আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ইমেলটি সংগ্রহ করেছি৷ ইমেলটি কারা পাঠিয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে৷ বিষয়টি পুলিশের নজরদারিতে আছে।”

আনসারুল্লাহ’র পাঠানো ওই ইমেইলে বলা হয় “যেহেতু নারীদের ঘরের বাইরে চাকরি করা, বেপর্দা হয়ে ঘোরাঘুরি করা ইসলামি শরিয়া মতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ তাই যাঁরা এদের চাকরি দিচ্ছেন, করাচ্ছেন, তাঁরাও সমানভাবে দোষী৷ সকল সংবাদমাধ্যমের প্রতি আহ্বান করছি নারীদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দিন৷”


মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।