কূটনৈতিক এলাকা থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শিগগিরই
2016.07.15

ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকা গুলশান, বনানী ও বারিধারায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা হোটেল–রেস্তোরাঁসহ সব ধরনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
জঙ্গি হামলার পর এবং এ ধরনের হামলার আশংকা বেড়ে যাওয়ায় কূটনৈতিক এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তবে দীর্ঘদিন ধরে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা এসব প্রতিষ্ঠান হঠাৎ করে উচ্ছেদ করা সহজ হবে না বলেও মনে করা হচ্ছে। যদিও সরকার বলছে, কোন ছাড় না দিয়ে খুব শিগগির উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হবে।
গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার পর এসব এলাকার অননুমোদিত প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
জঙ্গি হামলার শিকার হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁটিও আবাসিক ভবনের প্লটে গড়ে ওঠে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ২০০৮ সালের একটি জরিপ বলছে, পুরো গুলশানে ৯০৪টি আবাসিক প্লটে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালু রয়েছে।
আরেক অভিজাত এলাকা বনানীতে রয়েছে এ ধরনের ৩৯৯টি প্রতিষ্ঠান। গত আট বছরে এ সংখ্যা আরো বেড়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।
আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্তের পর গত কয়েকদিন গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার তালিকা হালনাগাদ করছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ—রাজউক। সংশ্লিষ্ট বিভাগ জানিয়েছে, হালনাগাদের এ কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
এর আগে গত জানুয়ারি মাসে রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় আবাসিক প্লটে বাণিজ্যিক ব্যবহার বন্ধে বিশেষ অভিযান শুরু করা হলেও প্রভাবশালীদের চাপে এক পর্যায়ে তা বন্ধ হয়ে যায়।
তবে শিগগিরই কূটনৈতিক এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে বলে বেনারকে জানিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।
তিনি বলেন, আবাসিক এলাকায় কোনও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রাখা হবে না। ঘোষিত বাণিজ্যিক এলাকার বাইরে আর কোথাও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার অনুমতি দেওয়া হবে না।
প্রাথমিকভাবে গুলশান, বনানী ও বারিধারার আবাসিক এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা হোটেল-রেস্তোরাঁ দিয়ে অভিযান শুরু হবে বলে জানান মন্ত্রী।
তবে এসব এলাকার স্কুল-কলেজ ও হাসপাতালগুলো সরাতে তিন মাস সময় দেওয়া হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “প্রয়োজনে তাঁদের জন্য নতুন জমি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। এক্ষেত্রে রাজউকের উত্তরা ও পূর্বাচল প্রকল্পের কথাও ভাবা যেতে পারে।”
এদিকে সরকারের এ উদ্যোগ সংশ্লিষ্ট এলাকায় বসবাসকারীদের কাছে ইতিবাচক হলেও ব্যবসায়ীদের কাছে বিষয়টি আতঙ্কের।
এ প্রসঙ্গে গুলশান এলাকার একটি বুটিকসের মালিক সুলতানা জাহান বেনারকে বলেন, “অভিজাত এ এলাকায় একটি দোকানের অনুমতি পেতে বৈধ-অবৈধ পথে অনেক টাকা খরচ করতে হয়। মাত্র কিছুদিন আগে আমি এখানে ব্যবসা শুরু করেছি।”
তিনি জানান, “এরই মধ্যে যদি দোকান সরিয়ে নিতে হয়, তাহলে আমার মত ক্ষুদে ব্যবসায়ীর জন্য লোকসানের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।”
তবে বনানী এলাকার বাসিন্দা মাকসুদুল হাসান বলেন, “আমি যে ভবনটিতে বসবাস করি, তাঁর নিচের অংশটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে। দিনরাত সেখানে মানুষের ভীড় লেগে থাকে।
তাঁর মতে, বসবাসের জন্য এ পরিবেশ মোটেই স্বাস্থ্যকর এবং নিরাপদ নয়। যত দ্রুত এসব প্রতিষ্ঠান সরানো হবে, ততই মঙ্গল।
তবে সংশ্লিষ্টদের মতে, বছরের পর বছর ধরে অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনার ফলে রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। একেকজন বিপুল অর্থ খরচ করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়েছেন।
এ ছাড়া রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক প্রভাবশালীরা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলায় সরকারের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কাজটা বেশ কঠিন হবে।
এ প্রসঙ্গে নগরবিদ ও স্থপতি ইকবাল হাবিব বেনারকে বলেন, “রাজউকসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের গাফলতি আজকের ঢাকাকে এমন পরিস্থিতিতে নিয়ে এসেছে।”
তাঁর মতে, “নগর পরিকল্পনার কোন নিয়মই ঢাকায় মেনে চলা হয়নি। অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে আবাসিক এলাকায় বিভিন্ন বাণিজ্যিক গড়ে উঠেছে।”
তিনি বলেন, হঠাৎ করে এসব প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ করা বেশ কঠিন কাজ। তাছাড়া স্থানীয় বাসিন্দারা কিছুটা দুর্ভোগে পড়বেন।
এই নগরবিদ মনে করেন, শুধু উচ্ছেদ করেই নয়, বরং কারা আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের লাইনেন্স দিচ্ছে, তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় নিতে হবে।