লিবিয়ায় পাঠানোর আগে ৩৯ জন গ্রেপ্তার, ৩০ মানবপাচারকারীর সন্ধান মিলেছে
2016.10.13

বন্ধ থাকা শ্রমবাজার লিবিয়ায় অবৈধভাবে যাওয়ার সময় বন্দর নগরী চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৩৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব। গত বুধবার মধ্যরাতে দুবাই হয়ে লিবিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগ মুহূর্তে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব জানিয়েছে, লিবিয়ায় অবৈধভাবে শ্রমিক পাঠানোর চেষ্টা করছে একদল মানব পাচারকারী। দেশের বিভিন্ন এলাকার এমন ৩০জন মানবপাচারকারীর সন্ধান পেয়েছে ওই বাহিনী। তাদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান চালানোর জন্য দেশের সকল জোনে তালিকা পাঠানোর কথা বলেছে র্যাব।
লিবিয়ার স্বৈরশাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতনের পর ২০১১ সাল থেকেই দেশটিতে অস্থিরতা চলছে। বিদ্রোহীদের বিভিন্ন দল ও উপদলের মধ্যে লড়াই গৃহযুদ্ধে রূপান্তরিত হওয়ার পাশাপাশি দেশটির একটি অংশ দখল করে নিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি দল আইএস।
২০১১ সালে লিবিয়ায় যুদ্ধ চলাকালীন প্রায় ৪০ হাজার বাংলাদেশিকে সেখান থেকে ফেরত আনা হয়। পরে অল্প সংখ্যক শ্রমিক পাঠানো শুরু হয়। পরিস্থিতির অবনতি হলে ২০১৫ সালে ১৯ নভেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশি নাগরিকদের লিবিয়া ভ্রমণের বিষয়ে সতর্কতা জারি করে।
পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক দাবি করে লিবিয়া যাওয়ার ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তিপত্র চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন ৭৪ জন ভিসাপ্রাপ্ত লিবিয়া গমনেচ্ছুক। গত ৩ এপ্রিল হাই কোর্ট রুলসহ এক অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে ভিসাপ্রাপ্তদের ১৫ দিনের মধ্যে এনওসি দিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিলে, ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। আইনি লড়াই শেষে চলতি বছরের ২ মে লিবিয়ায় শ্রমিক না পাঠানোর পক্ষে মত দেন সর্বোচ্চ আদালত।
র্যাবের সংবাদ সম্মেলন
বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রামে র্যাব-৭ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুটি ট্রাভেল এজেন্ট ও ৩০ জন দালালকে চিহ্নিত করা গেছে। উদ্ধার হওয়া ৩৯ জনের অধিকাংশের বয়স ৩০ এর নিচে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংগ্রহ করে আন্তর্জাতিক একটি মানবপাচার চক্রের মাধ্যমে তাদেরকে লিবিয়া নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছিল।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে.কর্ণেল মিফতাহ উদ্দিন বলেন, “এদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ৩০ জন দালালের নাম ও ঠিকানা সংগ্রহ করা গেছে। এসব পাচারকারীদের গ্রেপ্তারের জন্যও চেষ্টা চলছে।”
এই ৩০ দালালের মধ্যে দুজন লিবিয়ায় বসবাস করেন বলে জানান লে.কর্ণেল মিফতাহ উদ্দিন। তিনি জানান, আটক ৩৯ জনের মধ্যে ২০ জনের একদিন ও বাকি ১৯ জনের এক মাস করে ভিসার মেয়াদ রয়েছে। তবে এ সব ভিসাই ভুয়া।
তিনি বলেন, চার লাখ ২০ হাজার টাকা করে চুক্তিতে ৩৭ জন লিবিয়া যাওয়ার পর টাকা শোধ করার প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে বাকি দুজন দালালদের দেড় থেকে দুই লাখ টাকা পরিশোধ করেন।
মিফতাহ উদ্দিন জানান, “৩৯ জনের মধ্যে ১৯ জন ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগের অনুমতি পেয়েছিলেন। তবে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিমানে উঠার আগে তাদের আটকে দেওয়া হয়। বাকি ২০ জনকে বিমানবন্দরে প্রবেশের আগে আটকে দেওয়া হয়।”
এর আগে ২১ জন এমনই ভুয়া ভিসা নিয়ে লিবিয়া চলে গেছে বলেও জানান তিনি।
এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ
আইনজ্ঞরা বলছেন, উচ্চ আদালত দেশটির পরিস্থিতি বিবেচনা করে সেখানে জনশক্তি রপ্তানির বিষয়টি স্থগিত রাখার পক্ষে মত দেন। সুতরাং সরকারিভাবে জনশক্তি রপ্তানি শুরু না করা পর্যন্ত দেশটিতে শ্রমিক পাঠানো দণ্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য হবে।
এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা বেনারকে বলেন, “লিবিয়ার যুদ্ধাবস্থার কথা বিবেচনা করে আদালত দেশটিতে শ্রমিক যাওয়া স্থগিত করেছিল। সে বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। স্বেচ্ছায় কাউকে বিপদগ্রস্ত পরিস্থিতিতে ফেলে দেওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ।”
জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সভাপতি বেনজির আহমেদ বেনারকে বলেন, “আদালতের নিষেধ অমান্য করে কোন বায়রা সদস্যেরই লিবিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর এখতিয়ার নেই। যারা এ ধরনের কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত থাকবে, আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”