জঙ্গিবাদ রুখতে প্রয়োজনে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধের মহড়া

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.08.01
20160801-picFor-BlackOut1000.jpg হলি আর্টিজান রেস্তরাঁর জঙ্গি হামলার মত হামলা মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে ইন্টারনেট সংযোগ বিছিন্ন করার লক্ষ্যে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ইন্টারনেট সংযোগ স্থগিত রাখার মহড়া দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান। আগস্ট ১, ২০১৬।
এএফপি

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ইন্টারনেট সংযোগ স্থগিত রাখার যৌথ মহড়া করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান (বিটিআরসি) ও ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান। যেকোনো হামলার সময় যেন ইন্টারনেট সংযোগের সুযোগ দুষ্কৃতকারী নিতে না পারে সে জন্যই এই মহড়া।

বিটিআরসির কর্মকর্তারা বলেন, গুলশানে হামলার দিন ঘটনাস্থল থেকে জঙ্গিদের ছবি আপলোড করার ঘটনায় দেশের সাইবার নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে পড়ে। চেষ্টা করেও সেদিন ইন্টারনেট বন্ধ করা যায়নি।

ধারণা করা হচ্ছে, তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ জঙ্গিরা বিশেষ সফটওয়্যার থ্রিমা ব্যবহার করেছিল। থ্রিমার সুবিধা হলো, সার্ভার থেকে সব তথ্য মুছে ফেলার সুযোগ আছে। ফলে তথ্যদাতা ও গ্রহীতা কাউকেই শনাক্ত করা যায় না।

গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলার পর নিহতদের ছবি কার কাছে কোথায় পাঠানো হয়েছিল সে সম্পর্কে এখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অন্ধকারে।

রাতভর জিম্মি সংকটের পর ২ জুলাই ভোরে কমান্ডো অভিযান চালিয়ে সশস্ত্র বাহিনী ওই ক্যাফের নিয়ন্ত্রণ নেয়। অবশ্য তার আগেই ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। গভীর রাতেই তারা রক্তাক্ত লাশের ছবি পাঠানোর কাজটি করে।

আইএস এর বরাত দিয়ে সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ ওই ছবিগুলো প্রকাশ করে। ওই হামলায় শুরুতেই প্রাণ হারান দুই পুলিশ কর্মকর্তা।

বিটিআরসি সচিব সারওয়ার উল আলম বেনারকে বলেন, “গুলশানের ঘটনার অভিজ্ঞতা এর আগে ছিল না। ওই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতের প্রস্তুতি নেওয়ার সব রকম পরিকল্পনা চলছে।”

তিনি আরও বলেন, একটি নির্দিষ্ট এলাকায় ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন করাটা সময়সাপেক্ষ। তা ছাড়া অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান ইন্টারনেট সেবার সঙ্গে জড়িত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ডালেম চন্দ্র বর্মণ বলেন, “জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো প্রতিনিয়ত তাদের কৌশল পাল্টাচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও দক্ষ ও কৌশলী হতে হবে।”

এর আগে গত রোববার বিটিআরসি কার্যালয়ে এ বিষয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকে মহড়ার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে অংশ নেন বিটিআরসিসহ মুঠোফোন অপারেটর, ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান (আইএসপি), আন্তর্জাতিক গেট ওয়ে (আইজিডব্লিউ) অপারেটরসহ সংশ্লিষ্ট টেলিযোগাযোগ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা।

ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আএসপিএবির সভাপতি এম এ হাকিম বেনারকে বলেন, “ইন্টারনেটের কিছু অ্যাপলিকেশন ব্যবহার করে হামলাকারীরা তথ্য পাচার করে থাকে। মানুষের মধ্যে ত্রাস সৃষ্টি করা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর অবস্থান দেখে সে অনুযায়ী পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ পায় হামলাকারীরা।

তাঁর মতে, এ সময় ইন্টারনেট সংযোগ স্থগিত থাকলে পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারে।

হাকিম আরও বলেন, মহড়ার সময় একটি নির্দিষ্ট এলাকায় সর্বোচ্চ আধঘণ্টা পর্যন্ত ইন্টারনেট সংযোগ স্থগিত রাখতে বিটিআরসি চিঠি দিয়েছে।

গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গিদের যোগাযোগের পথ বন্ধ করতে গুলশানের ২ নম্বর সেকশনের ৭৯ নম্বর সড়কে ব্রডব্যান্ড সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মোবাইলে ইন্টারনেট সংযোগ চালু থাকায় তারা ছবি আপলোড করতে সক্ষম হয়। মোবাইল যোগাযোগ ঠিক রেখে ডেটা ট্রান্সফার বন্ধ রাখা সম্ভব কি না—এ নিয়ে আলোচনা হয়। এ প্রেক্ষাপটেই বিটিআরসি মহড়া করার উদ্যোগ নিল।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ বেনারকে বলেন, “প্রত্যেকটি ভালো জিনিসের কিছু খারাপ দিক আছে। ধরুন, মুঠোফোন। মুঠোফোন খুব দরকারি জিনিস, কিন্তু দেশে যত সাইবার অপরাধ ঘটে তার বড় অংশের জন্য দায়ী এই মুঠোফোন।”

তিনি বলেন, “ইন্টারনেটের গুণের শেষ নেই, কিন্তু এই ইন্টারনেটই যে কোনো হামলার সময় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। হামলার সময় ইন্টারনেট সংযোগ স্থগিত রাখা একটি ‘স্ট্যান্ডার্ড প্র্যাকটিস।”

গত ২৩ জুলাই জার্মানির মিউনিখে শপিং মলে হামলার সময় জার্মান পুলিশ ইন্টারনেট ব্যবহার করে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুলিশ কোথায় কোথায় অবস্থান করছে সে সম্পর্কে তথ্য না দেওয়ার অনুরোধ জানায়। যুক্তরাজ্যেও এই ব্যবস্থা আছে।

বর্তমানে বাংলাদেশে ২৭টি ইন্টারনেট গেটওয়ে প্রতিষ্ঠান এবং বিটিআরসির হিসাবে ৪৯০টি আইএসপি ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে।

বিটিআরসির হিসাবে জুন পর্যন্ত দেশে ইন্টারনেট গ্রাহক ছিল ৬ কোটি ৩২ লাখের বেশি। এর মধ্যে ৫ কোটি ৯৬ লাখের বেশি গ্রাহক মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করেন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।