পুলিশ পাহারায় বাসায়, এরপর ফের ডিবি কার্যালয়ে ফিরলেন শফিক রেহমান

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.04.19
শফিক-রেহমান-গ্রেপ্তার620.jpg প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তারের তিনদিন পর গোয়েন্দা পুলিশের পাহারায় তাঁকে আবার বাসায় নেওয়া হয়। এ বিষয়ে তাঁর স্ত্রী তালেয়া রেহমানের কাছে বক্তব্য জানতে চান সাংবাদিকেরা। ১৯ এপ্রিল ২০১৬।
ফোকাস বাংলা

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের সময় দেওয়া বক্তব্যের সূত্র ধরে সাংবাদিক শফিক রেহমানকে সঙ্গে নিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ তাঁর ইস্কাটনের বাসায় গিয়েছিল গতকাল মঙ্গলবার। ওই বাসা থেকে  থেকে বেশ কিছু কাগজপত্র সংগ্রহ করার কথা জানিয়েছে পুলিশ। এ ছাড়া জব্দ করা হয়েছে তাঁর দুটি পাসপোর্ট, যার একটি ব্রিটিশ পাসপোর্ট।

গত শনিবার ইস্কাটনের বাসা থেকে শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে পুলিশ গত বছরের আগস্টে পল্টন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে, যা পরে মামলায় রূপান্তরিত হয়। বিএনপি ও এর বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন এই মামলাটি মিথ্যা আখ্যা দিয়ে তাঁকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে।

সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন আইএফজে, এশিয়ান হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিভিন্ন সংগঠন গতকাল শফিক রেহমানের মুক্তি দাবি করেছে।

মামলার তদন্ত-সংশ্লিষ্ট ও স্থানীয় সূত্র জানায়, দুপুর ১২টার দিকে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট ডিবির কর্মকর্তারা একটি মাইক্রোবাসযোগে শফিক রেহমানকে নিয়ে তাঁর ইস্কাটন গার্ডেনের বাসায় যান। মাইক্রোবাসের সঙ্গে ডিবির সদস্যদের বহনকারী দুটি পিকআপ ছিল। কাগজপত্র জব্দ করার ক্ষেত্রে ডিবিকে সহায়তা করেন শফিক রেহমান।

“রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের সময় শফিক রেহমান জানান, প্রধানমন্ত্রীপুত্র অপহরণ ও হত্যার ষড়যন্ত্র মামলা-সংক্রান্ত এফবিআইয়ের নথি তাঁর বাসায় সংরক্ষিত আছে। কিন্তু তিনি ছাড়া এটা কেউ পাবেন না। এ জন্য তাঁকে সঙ্গে নিয়েই তাঁর বাসায় যাওয়া হয়,” সাংবাদিকদের জানান মামলার তদন্ত-তদারক কর্মকর্তা মাশরুকুর রহমান।

তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তাঁর তথ্য-প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যার ষড়যন্ত্র মামলা-সম্পর্কিত ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) কিছু নথি জব্দ করা হয়েছে ওই বাসা থেকে।

শফিক রেহমানের স্ত্রী তালেয়া রেহমান জানান, তাঁর স্বামীকে নিয়ে ডিবি পুলিশ বাসার বিভিন্ন কক্ষ ঘুরে দেখেছে। এসময় কিছু কাগজপত্র তারা সংগ্রহ করে নিয়ে গেছে।

পুলিশের বক্তব্য

সজীব ওয়াজেদ জয় অপহরণ ও হত্যা ষড়যন্ত্র মামলা নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম গতকাল মিন্টো রোডের মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

তিনি জানান, প্রথমে প্রধানমন্ত্রীপুত্র অপহরণ ও হত্যা ষড়যন্ত্র-সংক্রান্ত ঘটনায় রমনা থানায় জিডি করা হয়। ওই জিডির তদন্ত করতে গিয়ে জাসাস (জাতীয়তাবাদী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থা) সহসভাপতি  মোহাম্মদউল্লাহ মামুনের ছেলে ও যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী রিজভী আহমেদ সিজারের সম্পৃক্ততা বেরিয়ে আসে।

ডিএমপির মুখপাত্র বলেন, এই মামলার প্রেক্ষাপট হলো প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টাকে যুক্তরাষ্ট্রে অপহরণ ও হত্যার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। সেই ষড়যন্ত্র সেখানকার এফবিআইয়ের নজরে আসে। এতে ওই সংস্থার একজন বিশেষ প্রতিনিধি রবার্ট লাস্টিক ও তাঁর বন্ধু জোহানস থ্যালারের সঙ্গে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রিজভী আহমেদ সিজারের সম্পৃক্ততা মেলে।

মনিরুল ইসলাম বলেন, শফিক রেহমান আমেরিকায় বৈঠক করার কথা স্বীকার করেছেন। এ-সংক্রান্ত কিছু কাগজপত্র তাঁর হেফাজত থেকে জব্দ করা হয়েছে। আরও কিছু দলিল-দস্তাবেজ সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলছে।

এদিকে এই মামলা তদন্তের জন্য গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছে। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন ডিবির উপকমিশনার মাশরুকুর রহমান খালেদ।

বিএনপির নেতারা যা বলেন

‘সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে’ ও ‘কিছুটা প্রতারণার মাধ্যমে’ সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করে বৃদ্ধ বয়সে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, শফিক রেহমানের গ্রেপ্তার গোটা জাতির বিবেককে নাড়া দিয়েছে। যাঁরা শফিক রেহমানের রাজনৈতিক চিন্তার সঙ্গে একমত নন, তাঁরাও বলছেন, এভাবে গ্রেপ্তার করাটা সমীচীন হয়নি।

পৃথক এক অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান বলেছেন, শফিক রেহমান একটি মাছিও মারতে পারেন না, অথচ তাঁর বিরুদ্ধে মানুষ হত্যার অভিযোগ এনে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন চালানো হচ্ছে।

মুক্তি দাবি করেছে আইএফজে

শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব জার্নালিস্টস (আইএফজে)। অবিলম্বে তাঁর মুক্তি এবং বাংলাদেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর চাপ প্রয়োগ বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক এই সংগঠন।

আইএফজের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জ্যেষ্ঠ এই সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের ঘটনায় আইএফজে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। সরকারের সমালোচক সম্পাদকদের বিরুদ্ধে আইনি হয়রানির বর্তমান ধারায় বাংলাদেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পরিস্থিতির বিষয়ে মারাত্মক উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।

“বিশ্ব গণমাধ্যমের স্বাধীনতা দিবস পালনের প্রাক্কালে আমরা সংবাদপত্রের ওপর আক্রমণ বন্ধ করতে দেশটির সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই,” জানিয়েছে আইএফজে।

শফিক রেহমানের মুক্তির দাবি

কয়েকজন সাংবাদিক নেতা শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়েছেন।  বিবৃতিতে তারা ৮৩ বছরের বয়োজ্যেষ্ঠ সাংবাদিকের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়ে বলেন, তার গ্রেপ্তার স্বাধীন মত প্রকাশের ওপর চরম আঘাত। যে অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা তাঁদের কাছে অযৌক্তিক মনে হয়েছে।

বিবৃতিতে সই করেন সাংবাদিক ও কলামিস্ট আমানুল্লাহ কবীর, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি খোন্দকার মনিরুল আলম, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি গোলাম মহিউদ্দিন খান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী, বিএফইউজের মহাসচিব সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আলম বকুল।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।