নিখোঁজ ৭০ তরুণের নাম প্রকাশ করেছে র্যাব,জঙ্গিবাদে জড়িত বলে আশঙ্কা
2016.08.09

এক সপ্তাহের ব্যবধানে গুলশানের হলি আর্টিজান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ার ঈদ জামাতে জঙ্গি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সারা দেশে নিখোঁজ তরুণদের সন্ধানে নামে। গত সোমবার রাতে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ৭০ তরুণ নিখোঁজের তথ্য প্রকাশ করল।
উল্লেখ্য, ওই দুই হামলায় অংশগ্রহণকারী তরুণেরা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। তাদের স্বজনেরা থানায় জিডিও করেছিলেন। গত ২৬ জুলাই কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের গুলিতে যে নয় জঙ্গি নিহত হয়, তাদেরও নিখোঁজ থাকার খবর নিশ্চিত করেছিল পরিবার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এর আগে গত ২০ জুলাই র্যাব প্রথম দফায় ২৬২ জন ও ২৫ জুলাই ৬৮ জন নিখোঁজ থাকার খবর দিয়েছিল। ওই দুটি তালিকা আপডেট করার কথাও জানিয়েছিল র্যাব।
র্যাবের তালিকায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শেহজাদ রউফ; মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাওসিফ হোসেন; নারায়ণগঞ্জের তুলারাম সরকারি কলেজের ইয়াসিন হোসেন (চঞ্চল); ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির রাহাত বিন আবদুল্লাহ; মানারাত কলেজের বিবিএর ছাত্র মো. সাব্বির হোসেন ওরফে শুভ; স্টেট কলেজের ছাত্র মো. ফিরোজ মিয়া; দারুল এহসান কওমি মাদ্রাসার ছাত্র মো. ইমরান; বগুড়ার শাহ সুলতান কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র এ কে এম সিয়াম এবং ঢাকার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র আহমেদ আজওয়াজ ইমতিয়াজ তালুকদার ও সিভিল এভিয়েশনে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পাইলট মো. মাহমুদুল হাসান রাতুলের নাম উল্লেখ আছে।
এর বাইরে জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত সন্দেহে বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার ও পলাতক জুন্নুন শিকদার, আকরাম হোসেন ওরফে হাসিব ওরফে আবদুল্লাহ, তামিম আহমেদ চৌধুরী মো. সাইফুল্লাহ ওজাকি, মো. মহিবুর রহমান, তাহমিদ রহমান, তাউসিফ হোসেন, আরাফাত হোসেন তুষার, মো. নিয়াজ মোর্শেদ রাজা, নজিবুল্লাহ আনসারী, জুনায়েদ খান, জুবায়েদুর রহিম, এ টি এম তাজউদ্দিন ও আশরাফ মো. ইসলামের নাম উল্লেখ করা হয়।
গতকাল প্রকাশিত তালিকায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শেখ ইফতিসাম আহম্মেদ সামি, চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটের মাদ্রাসা ছাত্র শহীদুল আলম, নীলফামারীর আদিতমারির জীবন, সিলেটের কানাইঘাটের শক্তিপাড়া গ্রামের হোসেন আহম্মেদ এবং পাবনার ঈশ্বরদী থানার ভারইমারী গ্রামের ইমদাদুল হকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তালিকা থেকে বাদ পড়েছে কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় নিহত শেহজাদ রউফ অর্ক সহ চারজনের নাম।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বেনারকে বলেন, “উদ্ভূত পরিস্থিতিতে র্যাব ১৪ টি ব্যাটালিয়নের মাধ্যমে নিখোঁজ ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহ করছে। এই তালিকা নিয়মিত হালনাগাদ করা হচ্ছে।” তিনি জানান, নানা কারণে মানুষ বাড়ি থেকে পালিয়ে যান বা নিখোঁজ হন। তালিকাভুক্ত কতজন জঙ্গিবাদে জড়িয়েছেন সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
পুলিশের তালিকায় নিখোঁজ ৫০ থেকে ৬০ তরুণ
গতকাল মঙ্গলবার পুলিশ সদর দপ্তরে আয়োজিত ক্রাইম কনফারেন্সে নিখোঁজ থাকা ৫০ থেকে ৬০ তরুণের নাম উপস্থাপন করা হয়। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য হলো, নিখোঁজদের ৩৮ জন বিদেশে।
পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ১৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী নিখোঁজদের তালিকা করেছি। তালিকায় ৮০৩ জনের নাম এলেও, জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়া ব্যক্তির সংখ্যা ৫০ থেকে ৬০ জন বলে তথ্য পেয়েছি।” তিনি জানান, “বেশিরভাগ পরিবারই জিডি করেনি। আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছি।”
এ তালিকায় সিরিয়ার রাকা থেকে যে তিন তরুণের ভিডিও বার্তা প্রচার হয় তাদের নাম উল্লেখ করা হয়। এরা হলেন তাহমিদ রহমান শাফি, আরাফাত হোসেন তুষার ও তাওসিফ হোসেন।
এর বাইরে ২০০৯ ও ২০১৩ সালে আটক রেজওয়ান শরীফ ও মাঈনুদ্দীন শরীফ এবং তাদের মা পান্না শরীফ ও মাঈনুদ্দীন শরীফের স্ত্রী তানিয়া শরীফ, ঢাকা শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক রোকনউদ্দিন খন্দকার, তার স্ত্রী, দুই মেয়ে ও মেয়ে জামাই এবং ব্যারিস্টার তাকিউর রহমান ও তার স্ত্রীর কথা বলা আছে।
পুলিশ বলছে, সপরিবারে তুরস্ক হয়ে সিরিয়ায় চলে যাওয়া বাংলাদেশি নাগরিকেরা আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত আছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
গতকাল ক্রাইম কনফারেন্সে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নিখোঁজদের খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন পুলিশের মহাপরিদর্শক শহীদুল হক।
জনগণকে সম্পৃক্ত করার আহ্বান
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক নূর খান বেনারকে বলেন, “জিডি ধরে নিখোঁজদের তালিকা তৈরি করলে কখনই জঙ্গিদের শনাক্ত করা যাবে না। বহু পরিবার সন্তান নিখোঁজ থাকার পরও থানা-পুলিশের দ্বারস্থ হন না।”
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। তাহলে কেউ নিখোঁজ হলে সাধারণ মানুষই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাতে এগিয়ে আসবে।
র্যাব সদর দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, নিখোঁজ ব্যক্তির তালিকা হালনাগাদের কাজ একটি চলমান প্রক্রিয়া। এই তালিকা প্রকাশের পর কোনো ব্যক্তি যদি পরিবারের কাছে ফিরে আসে অথবা এই তালিকার বাইরে যদি কারও কাছে কোনো নিখোঁজ ব্যক্তির সন্ধান থাকে, তাহলে ০১৭৭৭৭২০০৭৫ নম্বরে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
অন্যদিকে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগ হ্যালো সিটি নামে একটি নতুন অ্যাপ চালু করেছে। জঙ্গিবাদ সম্পর্কে যে কোনো তথ্য যে কেউ নিজের নাম প্রকাশ না করেও এই অ্যাপের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাতে পারবেন।