তরুণদের সন্ত্রাসবাদে ঝুঁকে পড়ার কারণ খুঁজতে চান ওআইসি মহাসচিব
2016.08.19

বিশ্ব সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) আরও কার্যকর ভূমিকা নেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সংস্থাটির মহাসচিব ইয়াদ বিন আমিন মাদানি। পাশাপাশি সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশের প্রশংসাও করেছেন তিনি।
তিন দিনের বাংলাদেশ সফরে এসে সন্ত্রাসবাদ দমন নিয়ে সোচ্চার ছিলেন মুসলিম দেশগুলোর বৃহত্তম জোটের এই নেতা। শুক্রবার তিনি ঢাকা ছেড়েছেন।
সন্ত্রাসবাদসহ বিশ্বের মুসলিম দেশগুলো যখন নানা সমস্যায় জর্জরিত তখন ওআইসির এ প্রতিশ্রুতি প্রশংসনীয় হলেও সংস্থাটি কতটুকু কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকেরা।
তিনদিনের সফর
তিনদিনের ঢাকা সফরকালে ওআইসির মহাসচিব গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ ছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন তিনি।
ওআইসি’র মহাসচিবের দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশে এটি তাঁর তৃতীয় সফর। ওআইসিভুক্ত এশিয়ার চার দেশ সফরের অংশ হিসেবে বাংলাদেশে আসেন তিনি। সফরকালে মাদানি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ ছাড়া গাজীপুরের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজিও (আইইউটি) পরিদর্শন করেন।
“ওআইসি মহাসচিবের উপস্থিতিতে আইইউটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বছর থেকে ছাত্রীদের ভর্তি করা হবে। এতোদিন ওআইসি পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কেবল ছাত্ররাই পড়ার সুযোগ পেয়ে আসছিল,” বেনারকে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্থাপন প্রধান মো. গোলাম সালেক।
মুসলিম বিশ্বগুলোকে বসতে হবে
গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ ও মুসলিম বিশ্বের নানা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন ওআইসি মহাসচিব ইয়াদ বিন আমিন মাদানি।
সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে ওআইসি কার্যকর ভূমিকা নিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ—এ কথা উল্লেখ করে সংস্থাটির মহাসচিব বলেন, ১৯৯০ সাল থেকে বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ বেড়েছে। এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হবে।
সমাজের তরুণরা কেন সন্ত্রাসবাদের দিকে ঝুঁকছে তার উৎস খুঁজে বের করার ওপর গুরুত্ব দেন মাদানি। তিনি বলেন, এ বিষয়টি অনুসন্ধান করে এর সমাধানের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
বৈঠকে শেখ হাসিনা মুসলিম দেশগুলোতে বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে নিজেদের (মুসলিম দেশগুলোকে) বসার তাগিদ দেন।
তিনি বলেন, “বাইরের হস্তক্ষেপ ছাড়াই মুসলিম দেশগুলোকে একসঙ্গে বসে নিজেদের সমস্যার সমাধান করতে হবে।”
বৈশ্বিক জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে ওআইসি ভূমিকা রাখতে পারে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “একশ্রেণির মানুষ ইসলামের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও মানুষ হত্যা করছে। তাদের কারণেই ইসলাম হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছে।”
বৈঠকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসী হামলায় ঘটনায় সমবেদনা ও নিহতদের প্রতি শোক জানান মাদানি। এসময় সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশের প্রশংসাও করেন তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এএইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠকেও মুসলিম বিশ্বে সংঘাতময়, মানবিক পরিস্থিতি ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন ওআইসি মহাসচিব।
ওআইসির সক্ষমতা নিয়ে সংশয় বিশ্লেষকদের
বিশ্লেষকেরা বলছেন, দীর্ঘ দিন ইরাক, ইরান, কিংবা সিরিয়া—বিশ্বের কোনো না কোনো মুসলিম দেশে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। সেসব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন ওআইসি দৃষ্টান্তমূলক কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি। বর্তমানেও বিভিন্ন মুসলিম দেশে সন্ত্রাসবাদসহ যুদ্ধও চলছে। এমন অবস্থায় ওআইসি মুসলিম দেশগুলোকে নিয়ে ঐক্য তৈরি করতে পারে। তবে কতটুকু কাজে দেবে তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সাবেক রাষ্ট্রদূত মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “বিশ্বের মুসলিম দেশগুলো নানা ধরনের আন্তঃসংঘাতে লিপ্ত রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধান ও সন্ত্রাস নির্মূলে ওআইসি কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। অন্তত সকল মুসলিম দেশকে নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে পারে।”
তবে ওআইসির ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন আরেক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এই অধ্যাপক বেনারকে বলেন, “ওআইসি কতটুকু করতে পারবে তা বলা মুশকিল। ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যেই বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাস চলছে।”
ওআইসির অতীত ইতিহাস উল্লেখ করে ড. ইমতিয়াজ আরও বলেন, “এতদিন যেহেতু ওআইসি পারেনি, মনে হয় না এখন পারবে। এর অন্যতম কারণ, ওআইসির রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে নানা বিভেদ রয়ে গেছে। যা বিশ্বের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। এখনও যুদ্ধ চলছে কোনো কোনো দেশে।”
তবে সে বিভেদ মেটানোর চেষ্টা করা যেতে পারে জানিয়ে এই বিশ্লেষক আরও বলেন, “সকল মুসলিম দেশ যদি মনে করে তারা একসঙ্গে কাজ করতে পারবে, তাহলে সমস্যা সমাধান খুব সহজ হয়। তবে তাদের অনৈক্য এত বেশি যে, অন্যরা সুযোগ পেয়ে যায়।”