রোহিঙ্গাদের ইস্যুতে বাংলাদেশের উদ্যোগ কূটনীতিকদের জানানো হল
2016.06.20

বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সঠিক সংখ্যা ও অবস্থান বের করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে শুরু হওয়া রোহিঙ্গা শুমারির কাজও প্রায় শেষের পথে।
সোমবার আন্তর্জাতিক শরনার্থী দিবসে এ জরিপের হালনাগাদ তথ্য ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে ঢাকায় অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের বিস্তারিত জানিয়েছে সরকার।
দুপুরে রাজধানী ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সরকারের রোহিঙ্গা শুমারি প্রকল্প সম্পর্কে কূটনীতিকদের ব্রিফ করেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক। ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকেরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ বর্তমানে গ্লোবাল ফোরাম অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (জিএফএমডি) সভাপতি। এ বছর শেষে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জিএফএমডির বার্ষিক সম্মেলন। ব্রিফিংয়ে ওই সম্মেলনের অগ্রগতি সম্পর্কেও কূটনীতিকদের ধারণা দেওয়া হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রায় ২১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘বাংলাদেশে অবস্থানরত অনিবন্ধিত মিয়ানমারের নাগরিক শুমারি ২০১৫’ শীর্ষক জরিপ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এর সার্বিক দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বা বিবিএস।
গত বছরের এপিলে শুরু হওয়া প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়েছে এ বছরের মার্চ মাসে। তিন পার্বত্য জেলা বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি ছাড়াও চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ও পটুয়াখালী থেকে রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা ইস্যুতে যে জাতীয় কৌশল গ্রহণ করেছে, কূটনীতিকদের কাছে তার হালনাগাদ তথ্য তুলে ধরা হয়। তবে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা নির্ধারনের বিষয়টি জরিপ পর্যায়ে থাকায় সংখ্যা সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা বৈঠকে দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে বৈঠকে শেষে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বেনারকে বলেন, “মিয়ানমার থেকে আসা বাংলাদেশে বসবাসরত অবৈধ নাগরিকদের সঠিক সংখ্যা জানতে একটি শুমারি হয়েছে। সে বিষয়ে কূটনীতিকদের বিস্তারিত জানানো হয়।”
শুমারিতে পাওয়া মিয়ানমার নাগরিকদের সংখ্যা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটা সবেমাত্র শেষ হয়েছে। আগামী নভেম্বর বা ডিসেম্বরে এর ফলাফল প্রকাশ করা হবে। আমরা আজ শুধু এই শুমারির প্রক্রিয়া কূটনীতিকদের জানিয়েছি।”
এদিকে শহীদুল হক বলেন, “বাংলাদেশে কত জন অবৈধ মিয়ানমারের নাগরিক রয়েছে তা ধারণা করাই এ শুমারির উদ্দেশ্য। এই তথ্য রোহিঙ্গা সম্পর্কে জাতীয় কৌশল বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।”
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিবিএস সূত্রে জানা যায়, এদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের ছবি ও অন্যান্য তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে একটি তথ্যভাণ্ডার তৈরি করছে সরকার। এই ভাণ্ডারে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের বর্তমান ঠিকানা ও অনুপ্রবেশের আগে মিয়ানমারে তাদের মূল বাসস্থানের ঠিকানা সংগ্রহ করা হবে।
এর পাশাপাশি অনুপ্রবেশের কারন এবং এদেশে রোহিঙ্গাদের আর্থ-সামাজিক ও জনমিতি সংক্রান্ত পরিসংখ্যান বের করা হবে।
রোহিঙ্গা শুমারির এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁদের মতে, প্রকৃত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা জানার পর সদ্য গণতন্ত্র ফিরে আসা দেশ মিয়ানমারকে তাদের নাগরিকদের ফেরত নিতে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ বাড়ানো যাবে। এরফলে দেশটির নাগরিকেরা তাদের মৌলিক অধিকারও ফিরে পাবে।
সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি মিয়ানমার সফরে গিয়ে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার প্রসঙ্গ তোলেন। এর জবাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অং সান সুচি বলেন, এজন্য কিছুটা সময় লাগবে।
রোহিঙ্গা শুমারি প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও শরনার্থীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন রামরু’র নির্বাহী পরিচালক সি আর আবরার বেনারকে বলেন, “রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিজ দেশ থেকে বের করে দেওয়া হলেও মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দেয় বাংলাদেশ। এখন দেশটির পরিস্থিতি বদলেছে। মিয়ানমারের উচিত নিজের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়া। এক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াতে হবে। আর এজন্য রোহিঙ্গাদের সঠিক সংখ্যা জানাও জরুরি।”