জঙ্গি অর্থায়নের দায়ে সিঙ্গাপুরে আরও দুই বাংলাদেশির কারাদণ্ড

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2016.08.30
160712-BD-SG-motorcade-1000.jpg সিঙ্গাপুর রাজ্য আদালতের বাইরে পুলিশের একটি সাঁজোয়া গাড়ি বহর দেখা যাচ্ছে, যাতে করে সিঙ্গাপুরের আদালতে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া চার বাংলাদেশিকে আদালতে হাজির করা হয়। জুলাই ১২, ২০১৬।
এএফপি

জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগে সিঙ্গাপুরের গ্রেপ্তার হওয়া আরও দুই প্রবাসী বাংলাদেশিকে দুই বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির আদালত। বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, বাংলাদেশে সশস্ত্র জঙ্গিবাদ চালাতে অস্ত্র কেনার লক্ষ্যে অর্থ সংগ্রহের কথা স্বীকার করেছে তারা।

বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ বিষয়ে এখনো বিস্তারিত অবগত নয়। তবে জঙ্গি দমন বিষয়ে বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে কূটনৈতিক সূত্র।

এর আগে গত ১২ জুলাই একই অভিযোগে আটক হওয়া আট বাংলাদেশির মধ্যে চারজনকে দুই থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল সিঙ্গাপুরের আদালত। এই নিয়ে অভিযুক্ত আট বাংলাদেশির মধ্যে ছয়জন সাজা প্রাপ্ত হল।

বাকি দুজনের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত জানা যায়নি। ওই দুজন তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করায় ছয়জনের বিরুদ্ধেই অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল।

জঙ্গি অর্থায়নের দায়ে সিঙ্গাপুরে কারাদণ্ড প্রাপ্ত দুই বাংলাদেশি, লিয়াকত আলী মামুন (বামে) ও দৌলতুজ্জমান (ডানে)। ফাইল ফটোঃ দি স্ট্রেট টাইমস।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, সাজাপ্রাপ্ত বাংলাদেশি মামুন লিয়াকত আলি (২৯) ও জামান দৌলত (৩৪) শুরুতে নিজেদের নির্দোষ দাবি করলেও পরে জঙ্গি অর্থায়নের দায় স্বীকার করে।

বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে উৎখাত করতে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে ছয়শ মার্কিন ডলার অর্থ সহযোগিতা দেয় মামুন। আর জামান দিয়েছিল দুইশ ডলার। অপরাধ স্বীকারোক্তির প্রেক্ষিতে তাদের দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন সিঙ্গাপুরের আদালত।

এই দুই বাংলাদেশির সাজা পাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে অবগত নয় বলে বেনারকে জানিয়েছেন টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।

গত জুলাই মাসে যে চার বাংলাদেশিকে কারাদণ্ড দেওয়া হয় তারা হলেন; মিজানুর রহমান (৩১), রুবেল মিয়া (২৬), মো. জাবেদ কায়সার হাজি নুরুল ইসলাম সওদাগর (৩০) ও ইসমাইল হাওলাদার সোহেল (২৯)। গত ৩১ মে তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

এ জঙ্গি দলের প্রধান মিজানুর রহমানকে পাঁচ বছরের, ইসমাইল হাওলাদার সোহেলকে ২ বছর এবং রুবেল মিয়া ও জাবেদ কায়সারকে আড়াই বছর করে কারাদণ্ড দেয় আদালত।

গত ২৭ মে থেকে তাদের সাজা কার্যকরের কথা ওই রায়ে বলা হয়। সিঙ্গাপুরের জঙ্গি অর্থায়ন বিষয়ক আইনে সাজাপ্রাপ্তদের অভিযুক্ত করা হয়। দেশটির এ আইনে তাদেরকেই প্রথম সাজা দেওয়া হয়।

আদালতের নথি অনুযায়ী, জঙ্গি অর্থায়নকারী দলটির প্রধান মিজানুর রহমানের সহকারী ছিল মামুন। দলের কোষাধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিল রুবেল মিয়া, আর জাবেদ কায়সার ছিল সংবাদ মাধ্যমের দায়িত্বে। এ ছাড়া দলটির নিরাপত্তা ও নতুন কর্মী সংগ্রহের দায়িত্বে ছিল জামান ও সোহেল।

ওই নথিতে আরও বলা হয়, ওই ছয়জন ৬০ থেকে পাঁচ শ ডলার পর্যন্ত অর্থ দিয়েছিল। জাবেদের কাছে ১ হাজার ৩৬০ ডলার অর্থ জমা ছিল। এর মধ্যে রুবেলই দিয়েছিল ১ হাজার ৬০ ডলার।

এর আগে গত এপ্রিলে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আরও ৫ বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছিল সিঙ্গাপুর। পরে তাদের আটক করে পুলিশ।

এরা হল; মিজানুর রহমান ওরফে গালিব হাসান (৩৮),আলমগীর হোসেন (২৯),রাহা মিয়া পাইলট (২৯), তানজীমুল ইসলাম (২৪) ও মাসুদ রানা ওরফে সল্লু খান (৩১)। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “ফেরত আসা বাংলাদেশিরা এখন জেলে রয়েছে। জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে তাদের সম্পৃক্তরা রয়েছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”

জঙ্গি অর্থায়নের দায়ে বাংলাদেশি শ্রমিকদের সাজা হলেও সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশি শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রভাব পড়েনি বলে দাবি করেছেন সেখানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুব উজ জামান।

তিনি সিঙ্গাপুর থেকে টেলিফোনে বেনারকে বলেন, “আটক ব্যক্তিরা বিচারিক প্রক্রিয়ায় সাজা পেয়েছেন। শ্রমিক নেওয়া সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রক্রিয়া। ওই প্রক্রিয়া মেনে বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুর শ্রমিক নিচ্ছে।”

তবে জঙ্গি দমনের বিষয়ে দুদেশের মধ্যে সবসময় যোগযোগ হচ্ছে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে সিঙ্গাপুরের সবসময় যোগাযোগ হচ্ছে। জঙ্গি দমন বিষয়ে বাংলাদেশের বর্তমান তৎপরতা ও সাফল্যগুলো তাঁদের জানানো হয়েছে।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।