দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের জঙ্গিবাদ বিরোধী মানববন্ধন
2016.08.01

“আমরা সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি। আমরা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দেখতে চাই না। আমরা চাই বাংলাদেশ সুন্দর ও নিরাপদ হবে,” বেনারের কাছে এমন প্রত্যাশার কথা বলছিলেন বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী জাকিয়া ইসলাম। সোমবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জঙ্গিবাদবিরোধী এক মানববন্ধনে অংশ নিয়ে এমন প্রত্যাশার কথা বলছিলেন তিনি। এই প্রত্যাশা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তিনি এই মানববন্ধনে যোগ দেন।
শুধু জাকিয়া ইসলাম নয়, ঢাকাসহ সারা দেশে তাঁর মতো হাজার হাজার শিক্ষার্থী এই মানববন্ধনে অংশ নিয়ে জঙ্গিবাদ রুখে দেওয়ার আওয়াজ তুলেছেন। ‘সন্ত্রাস–জঙ্গি নয়, শান্তি চাই, শঙ্কামুক্ত জীবন চাই’—এই স্লোগান ছিল অনেকেরই।
গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় ভয়াবহ জঙ্গি হামলার এক মাস পূর্তিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এই মানববন্ধনের ডাক দিয়েছিল। কর্মসূচিটি ছিল মূলত বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন মাদ্রাসার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য।
কিন্তু সারা দেশে প্রায় সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্ব স্ব উদ্যোগে একই দাবিতে মানববন্ধন করে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মানববন্ধন করে। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত রাজধানীসহ সারা দেশে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।রাস্তায় দাঁড়ানো হাজারো মানুষের দাবি ছিল একটাই—জঙ্গিবাদ রুখে দাঁড়াও।
আগে জঙ্গি কার্যক্রমে মাদ্রাসা ছাত্রদের নাম আসলেও গুলশান, শোলাকিয়া ও কল্যাণপুরে ঘটনায় নিহত কয়েকজন জঙ্গি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, স্কলাস্টিকসহ নামীদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ছিল। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কলেজ, মাদ্রাসা ও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষদের সঙ্গে মতবিনিময় করে সরকার। তারই ধারাবাহিকতায় জঙ্গিবাদবিরোধী এই মানববন্ধন আহ্বান করা হয়। আয়োজকেরা বলেছেন, মূলত সচেতনতামূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই এসব কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
গতকালের মানববন্ধনে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি, গণ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অংশ নেয়।
রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত মূল কর্মসূচিতে বক্তব্য দিতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘শুধু আইন দিয়ে জঙ্গিবাদ বন্ধ করা যাবে না। এ জন্য সামাজিক সচেতনতা ও সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। পর্যায়ক্রমে স্কুলভিত্তিক কমিটি গঠন করেও জঙ্গিবাদবিরোধী কার্যক্রম চালানো হবে’।
এই মানববন্ধনে অংশ নিয়ে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, ‘এটা মূলত সচেতনতামূলক কার্যক্রমের অংশ। পর্যায়ক্রমে এটি আরও জোরদার করা হবে’।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের এই কর্মসূচিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা নার্সিং কলেজ, শেখ বোরহানউদ্দিন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজসহ আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজারো শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী অংশ নেন। অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন ব্যানারে লেখা ছিল জঙ্গিবাদবিরোধী বিভিন্ন ধরনের স্লোগান।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র সৌমেন রায় বেনারকে বলেন, “দেশে যেন কোনো জঙ্গি-সন্ত্রাসী না থাকে সেই দাবি জানাতেই মানববন্ধনে এসেছেন।”
কয়েকজন শিক্ষকও প্রায় অভিন্ন সুরে কথা বলেছেন। সবারই বক্তব্য ছিল এটাই জাগরণ। এর ধারাবাহিকতা ধরে রেখে কার্যক্রম চালাতে পারলে নতুন প্রজন্ম সহজেই জঙ্গিবাদে জড়াবে না। এ জন্য সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বাড়ানো, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়াসহ আরও কিছু কার্যক্রম চালানোর দাবি তুললেন।
বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে ক্যাম্পাসে বিরাট এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী অংশ নেন। অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন ব্যানারে লেখা ছিল—‘প্রিয় বাংলাদেশ, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রুখে দাঁড়াও’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আগত কোরিয়ার ইয়ং হা গার্লস হাই স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদলও এই মানববন্ধনে অংশ নেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ওই কর্মসূচিতে বলেন, ‘জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ১৬ কোটি মানুষের দেশে জঙ্গির সংখ্যা একেবারেই নগণ্য, এদের কার্যক্রমকে প্রতিরোধ করা অসম্ভব কিছু নয়, শুধু প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ অবস্থান’।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগ থেকে পাস করা শিক্ষার্থী হাফিজুল ইসলাম বেনারকে বলছিলেন, “ইসলামের কথা বলে যারা মানুষ হত্যা করছে, তারাই ইসলামের বাইরে আছে। কাউকে হত্যা করা বা আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া ইসলাম কেন, কোনো ধর্মই সমর্থন করে না।”