বাঙালির ঈদ উৎসবে এবার ফুটবল বিশ্বকাপের আমেজ
2018.06.13
ঢাকা

রাশিয়ায় ফুটবল বিশ্বকাপের ২১তম আসর শুরু হবে বৃহস্পতিবার, আর শুক্রবার চাঁদ দেখা গেলে শনিবারই বাংলাদেশে ঈদ। অর্থাৎ এবার বিশ্বকাপের আমেজে ঈদ উদ্যাপন করবে এই জাতি। সাময়িকভাবে বদলে যাবে তাদের গতানুগতিক জীবনযাত্রা।
যদিও বিশ্বকাপে খেলুড়ে নয় বাংলাদেশ, তবুও দেশের প্রতিটি জনপদ ইতিমধ্যে বিশ্বকাপ উন্মাদনায় মেতে উঠেছে। এবারের রমজানে ঈদের পাশাপাশি বিশ্বকাপ উদ্যাপনেরও প্রস্তুতি নিয়েছে দেশের কয়েক কোটি ফুটবলপ্রেমী।
বুধবার বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার প্রতিবেদক রাশেদুর রহমানের রাশিয়া থেকে পাঠানো প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, “ঢাকার মতো বিশ্বকাপ উন্মাদনা নেই মস্কোয়।”
আসলেই ঢাকার অলিগলি, রাজপথ বিশ্বকাপ ফুটবলের উপস্থিতিই জানান দিচ্ছে। ফুটবল বিশ্বকাপকে ঘিরে সমর্থকদের উন্মাদনাকে তুলে ধরতে নির্মিত হয়েছে ৭ পর্বের বিশেষ নাটক ‘ফেয়ার প্লে’।
ঢাকার দেয়ালে দেয়ালে লিওনেল মেসি, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, নেইমারদের প্রমাণ সাইজের অবয়বে পড়ছে নতুন রঙের প্রলেপ৷ প্রলেপ পড়ছে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি, পর্তুগালের ভালোবাসার রঙে আঁকা পতাকায়৷
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চলছে ভার্চ্যুয়াল যুদ্ধ৷ নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণার পাশাপাশি প্রতিপক্ষকে নির্মম আক্রমণ, নিষ্ঠুরতা ওখানে৷ ‘আর্জেন্টিনার সমর্থক গাঁজাসহ গ্রেপ্তার’ কিংবা ‘মসজিদের জুতা চুরি করেছেন ব্রাজিল সমর্থক’—এমনসব ট্রল করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত৷
প্রতিপক্ষ দলের সমর্থকদের পাল্টাপাল্টি বাগ্যুদ্ধ শুরু হয়েছে। চলছে কথার যুদ্ধ, যুক্তি পাল্টা যুক্তি, খোঁচাখুঁচি ও খুনসুটি। অনেকের প্রোফাইলে, কভার ফটোতে শোভা পাচ্ছে প্রিয় দল বা খেলোয়াড়ের ছবি।
“বিশ্বকাপ ফুটবল আমাদের কাছে স্বপ্নের মতো। একটি দূরবর্তী স্বপ্ন, যে স্বপ্ন আমরা ছুঁতেও সাহস করি না,” যোগ করেন তিনি।
এই বাস্তবতায় বিদেশি দলগুলোকে ঘিরেই মেরুকরণ তৈরি হয়েছে। আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল, লাতিন আমেরিকার এই দুই দেশের সমর্থনে বিভক্ত বাংলাদেশের সিংহভাগ দর্শক। এর বাইরে জনপ্রিয় দল জার্মানি।
এবার ঈদের ছুটি চলাকালে ওই তিন দেশের খেলা থাকার কারণেই মূলত ধারণা করা হচ্ছে, এবার ঈদ বিনোদনের কেন্দ্রে থাকবে ফুটবল। ভিনদেশি পতাকা কেনার হিড়িক পড়ে গেছে দুই সপ্তাহ আগে থেকে। সমর্থিত দেশের বড় পতাকা বানিয়ে রেকর্ড গড়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন কেউ কেউ।
আরও এক মাস আগে থেকেই কিশোর ও যুবকদের মধ্যে শুরু হয়েছে সমর্থকগোষ্ঠী তৈরির কাজ। ঈদ কেনাকাটার সাথে রাজধানীর বিভিন্ন বিপণিবিতানগুলোতে জার্সি ও পতাকা বিক্রির ধুম পড়েছে। অলিগলিতে হকাররা কাঁধে বয়ে বেড়াচ্ছেন আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, জার্মানি, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, স্পেন, পর্তুগালসহ বিভিন্ন খেলুড়ে দেশের পতাকা।
ঢাকার গুলিস্তান, বঙ্গবাজার, শ্যামপুর, সদরঘাট, মিরপুর, গাবতলী, মহাখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় তৈরি হচ্ছে এসব। সব বয়সী মানুষই পতাকা কিনছেন। আড়াই থেকে তিন ফিটের প্রতিটি পতাকার মূল্য ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা দাম হাঁকছেন হকাররা।
বিশ্বকাপ উত্তেজনা দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। রাত জেগে খেলা দেখার জন্য বিভিন্ন জায়গায় বড় পর্দা বসানোর প্রস্তুতিও চলছে। দেশে বেড়ে গেছে টেলিভিশনের বিক্রি।
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার লালপুর এলাকার বাসিন্দা জয়নাল আবেদিন ওরফে টুটুল একজন ব্রাজিল ভক্ত। তিনি নিজের ছয় তলা বাড়ির পুরোটাই ব্রাজিলের পতাকার রঙে রাঙিয়ে নাম দিয়েছেন ব্রাজিল বাড়ি। মাগুরার আমজাদ হোসেন নামের এক কৃষক এবার পাঁচ কিলোমিটার লম্বা পতাকা বানিয়ে নতুন রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন।
ফিফার র্যাঙ্কিংয়ে ১৮৯তম বাংলাদেশ
ক্রিকেট খেলুড়ে হিসেবে বিশ্ব দরবারে সুপরিচিত হলেও ফিফার র্যাঙ্কিংয় অনুযায়ী বিশ্ব ফুটবলে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮৯তম।
“এক দশক আগেও বাংলাদেশের অবস্থান এতটা নিচে ছিল না। আমরা যখন খেলতাম তখন বাংলাদেশ ছিল ১৪১ তম,” বেনারকে বলেন জাতীয় দলের সাবেক গোলরক্ষক আমিনুল।
“ফুটবল ফেডারেশনের অর্জন জিরো” উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “ফেডারেশনের এক্টিভিটিস বলতে আর কিই-বা বলব। তাঁদের (কর্মকর্তাদের) শুধু দরকার চেয়ার (পদ)।”
ক্রীড়া বিশ্লেষক খন্দকার মশিউর রহমান বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশের আবহাওয়া, বাঙালির খাদ্যাভ্যাস এবং শরীর কাঠামো বিশ্বকাপে বিশ্বমানের ফুটবলার তৈরির উপযোগী কিনা সন্দেহ আছে।”
“তবে ফুটবলকে পিছিয়ে দিয়েছে দুর্নীতি। ক্লাবগুলোতে ফুটবলের উন্নতির চেয়ে জুয়ার আসরের প্রতি আগ্রহ বেশি। তরুণদের মধ্যে মাদকাসক্তি খেলোয়াড় তৈরির বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে,” বলেন ডেইলি অবজারভার পত্রিকার এই ক্রীড়া সম্পাদক।
আমিনুলের আক্ষেপ, “দেশের বাবা-মায়েরা চায়, ছেলে বড় হয়ে ডাক্তার হবে, ইঞ্জিনিয়ার হবে। কিন্তু ছেলে বড় হয়ে ফুটবলার হবে—এমন ইচ্ছা কারও নেই।”