বাংলাদেশে আরাকান জঙ্গিদের কোনো ঘাঁটি নেই: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
2019.01.09
ঢাকা

বাংলাদেশে আরাকানের সশস্ত্র দুটি জঙ্গি গোষ্ঠীর ঘাঁটি রয়েছে বলে মিয়ানমারের দেওয়া বক্তব্যের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা।
বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে মিয়ানমারের সশস্ত্র সংগঠন ‘আরাকান আর্মি’ কিংবা ‘আরসা’র কোনো ঘাঁটি নেই।
প্রসঙ্গত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাখাইনদের সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মি গত ৪ জানুয়ারি ভোররাতে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের বুথিডং শহরের কয়েকটি পুলিশ ফাঁড়িতে অতর্কিতে হামলা চালিয়ে মিয়ানমারের ১৩ পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে।
এ প্রসঙ্গে ৭ জানুয়ারি নেপিদোতে মিয়ানমারের রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের মুখপাত্র জ থ্যা সাংবাদিকদের কাছে “বাংলাদেশে আরাকান আর্মির দুটি ও আরসার তিনটি ঘাঁটি রয়েছে,” বলে মন্তব্য করেন মর্মে এক প্রতিবেদনে জানায় বেনারনিউজের সহযোগী প্রতিষ্ঠান রেডিও ফ্রি এশিয়া।
এ বিষয়ে মিয়ানমারে বাংলাদেশ দূতাবাসের মিলিটারি অ্যাটাচের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলিমদের জঙ্গি সংগঠন 'আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)' ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার সীমান্ত বাহিনীর ত্রিশটি চৌকিতে একযোগে হামলা চালিয়ে কয়েকজন নিরাপত্তারক্ষীকে হত্যা করে।
ওই হামলার প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা এলাকাগুলোতে ব্যাপক নিপীড়নমূলক অভিযান শুরু করার ফলে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করার দাবি করে আরসা। অন্যদিকে রাজ্যে রাখাইন বৌদ্ধদের স্বায়ত্বশাসনের জন্য লড়াই করার দাবি করে আরাকান আর্মি।
বাংলাদেশের মাটিতে আরাকান আর্মি ও আরসার ঘাঁটি সম্পর্কে মিয়ানমারের বক্তব্যকে “সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন’ হিসেবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, এ ধরনের বক্তব্যে বাংলাদেশ খুবই মর্মাহত।
বিবৃতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের সতর্কতা এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ও কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থার কারণে বাংলাদেশের কোথাও কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর পক্ষে ঘাঁটি তৈরি করা সম্ভব নয়।
তাছাড়া প্রতিবেশী দেশের কোনো বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে দেশের মাটি ব্যবহার করে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনারও কোনো অনুমতি বাংলাদেশ দেয় না।
“মিয়ানমারের বর্তমান সংঘাত দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক এবং সামাজিক সংকট থেকেই তৈরি” মন্তব্য করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশের ব্যাপক সহযোগিতা অত্যন্ত কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।
সীমান্তে সন্ত্রাসী কার্যক্রম দমনের জন্য একই ধরনের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার প্রস্তাব মিয়ানমারকেও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে এসব বিষয়ে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
বিবৃতিতে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বাংলাদেশকে না জড়ানোর বিষয়ে দেশটিকে সতর্কও করেছে বাংলাদেশ।