বাংলাদেশের নয় জেলেকে ফেরত দেয়নি মিয়ানমার

জেসমিন পাপড়ি ও আবদুর রহমান
2020.11.11
ঢাকা ও কক্সবাজার
201111_Myanmar_BGP_BD_Fishermen_1000.jpg কক্সবাজারে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় বাংলাদেশ জলসীমায় মাছ শিকার করছেন তিন জেলে। ২০ মার্চ ২০২০।
[আবদুর রহমান/বেনারনিউজ]

কক্সবাজারের টেকনাফে বঙ্গোপসাগরের মোহনা থেকে মাছ শিকারের সময় ধরে নিয়ে যাওয়া নয় বাংলাদেশি জেলেকে একদিন পরেও ফেরত দেয়নি মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)।

ধরে নিয়ে যাওয়া টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপের নয় জেলে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মিয়ানমার বিজিপির কাছে আটক রয়েছেন বলে জানিয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. ফয়সল হাসান খান।

গুলি করে এক জেলেকে হত্যার দুই দিনের মাথায় মঙ্গলবার সকালে বিজিপি বঙ্গোপসাগর থেকে এই জেলেদের ধরে নিয়ে যায়।

“সাগর থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া জেলেদের ফেরত দেওয়ার বিষয়ে মিয়ানমারের বিজিপির সাথে কথা হয়েছে। তাদের দাবি, মিয়ানমারের সীমানায় প্রবেশ করে মাছ শিকার করতে যাওয়ায় বাংলাদেশি জেলেদের আটক করা হয়েছে,” বলেন ফয়সল হাসান খান।

তবে মিয়ানমার বিজিপি জেলেদের ছেড়ে দেবার আশ্বাস দিয়েছে বলে জানান তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহা. রুহুল আমীন বেনারকে বলেন, “প্রতিনিয়তই সীমান্তে মিয়ানমার বাহিনীর হাতে বাংলাদেশের জেলেদের নিহত বা আটক হওয়ার ঘটনা ঘটছে। কিছুদিন আগে তারা সীমান্তে সেনা মহড়াও দিয়েছে। এটা আসলে দেশটির শক্তি প্রদর্শনের কৌশল হতে পারে।”

“রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মহলে কোনঠাসা হয়ে এমন কৌশলের আশ্রয় নিতে পারে দেশটি,” মনে করেন তিনি।

ইঞ্জিন বিকল হওয়ায় বিপদে পড়েন জেলেরা

ধরে নিয়ে যাওয়া জেলেরা হলেন, মাঝি মো. কালা ওরফে কালাবদা, নুরুল আলম, ইসমাইল হেসেন, সাইফুল ইসলাম, মো. ইলিয়াছ, মো. ইউনুছ আলী, মো. ছলিম উল্লাহ, লালু মিয়া ও কামাল মিয়া। এরা সবাই টেকনাফের বাসিন্দা।

স্থানীয় জেলেরা জানান, মঙ্গলবার সকালে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা মোহাম্মদ আমিনের মালিকানাধীন একটি নৌকায় কালাবদা মাঝির নেতৃত্বে ৯ জন জেলে সাগরে মাছ শিকারে যান।

এ সময় তাঁদের ইঞ্জিন বিকল হয়ে মিয়ানমার জলসীমানার দিকে চলে যায়। তখন মিয়ানমারের বিজিপি এসে তাঁদের ধরে নিয়ে যায়।

অপহৃত জেলে মো. কালা ওরফে কালাবদার ভাই বশির আহমদ বেনারকে বলেন, “অন্যান্য জেলেদের কাছে শুনেছি, মঙ্গলবার সাগরে মাছ শিকারে গেলে আমার ভাইদের ট্রলারটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। তখন নৌকাটি ঢেউয়ের তালে মিয়ানমারের জলসীমানায় চলে যায়। এ সময় মিয়ানমার বিজিপির হাতে তারা আটক হয়।”

“এ বিষয়ে আমরা বিজিবির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, তাঁরা জানিয়েছেন, জেলেদের ফেরত আনতে চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে বুধবার সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত জেলেদের ফেরত দেয়নি মিয়ানমার,” বলেন তিনি।

সাবরাং ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুরুল আমিন বেনারকে বলেন, “সাগরে অপহৃত ৯ জেলেকে এখনো ফেরত দেয়নি মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী। তবে তাদের ফেরত আনার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চেষ্টা চালাচ্ছে।”

এর আগে গত রোববার নাফ নদীতে মাছ শিকারে সময় গুলিবিদ্ধ হন বাংলাদেশি মো. ইসলাম। পরের দিন তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় কক্সবাজার হাসপাতালে মারা যান। এ ঘটনায় বিজিবির পক্ষ থেকে মিয়ানমারের বিজিপির কাছে প্রতিবাদলিপি পাঠানো হয়।

বিজিবি বলছে, গত দুই বছর আগে ইয়াবা ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সরকারের নিদের্শনায় নাফ নদীতে মাছ শিকার বন্ধ রাখা হয়েছিল। এরপরও মাঝে মধ্যে নির্দেশ অমান্য করে কিছু জেলে মাছ শিকারে গেলে এ ধরনের ঘটনা ঘটে।

টেকনাফ ক্ষুদ্র নৌকা মালিক সমিতির সভাপতি নূর মোহাম্মদ গণি বেনারকে বলেন, “মাদক এবং রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদীতে মাছ শিকার বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। এখন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ সেই অর্থে না থাকলেও মাদক পাচার বন্ধ হয়নি।”

“তবে জেলেরা মাঝে মধ্যে নিয়ম ভেঙে জীবিকার তাগিদে মাছ শিকারে নামছে,” বলেন তিনি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।