সেনা সদস্যের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা কিশোরী ধর্ষণের অভিযোগে তদন্ত কমিটি
2019.10.03
ঢাকা
বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর দুজন সদস্যের বিরুদ্ধে একজন রোহিঙ্গা কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠার প্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হলে দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়।
আইএসপিআর-এর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ ইবনে জায়েদ বেনারকে বলেন, “এ অভিযোগ সম্পর্কে জানার পরেই বিষয়টি তদন্তে একটি কমিটি করা হয়েছে। সেনা সদস্যদের দোষ প্রমাণ হলে অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উল্লেখ্য, গত ২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের নয়াপাড়া ক্যাম্পে একজন কিশোরীকে দুজন সেনা সদস্য ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ ওঠে। রোহিঙ্গাদের পরিচালিত ‘রোহিঙ্গা ভিশন ডট কম’ নামে একটি অনলাইন পোর্টালে এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তবে স্থানীয় গণমাধ্যমে এ বিষয়ে কোনো খবর প্রকাশ হয়নি।
রোহিঙ্গা ভিশন ডট কমের খবরে বলা হয়, সেদিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে দুই কিশোরী নিজেদের ঘরে বসে খেলা করছিল। এ সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দুজন সদস্য তাদের একজনকে রান্নাঘরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। সেনা সদস্যরা চলে যাওয়ার পরে প্রতিবেশীরা ওই কিশোরীকে নিয়ে স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে যায়। পরে কিশোরীটিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়।
মানবাধিকারকর্মী ও আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা বেনারকে বলেন, “ধর্ষণ একটা মারাত্মক অপরাধ। বিশেষ করে যারা বেশি দুঃস্থ আর তাদের দেখভাল করার দায়িত্ব আমাদের। তখন এ অপরাধের মাত্রা আরও কয়েক গুণ। অবশ্যই এর বিচার হতে হবে।”
তিনি বলেন, “আমরা চাই এটা ঘটনার সত্যতা যাচাই হোক। আশা করি, সত্যনিষ্ঠ ও বস্তুনিষ্ঠ তদন্ত হবে এবং বিচার হবে।”
শিপা হাফিজা বলেন, “রোহিঙ্গাদের এ দেশে আশ্রয় দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তারা খুবই অসহায়। তাদের বিষয়ে আমাদের আরো বেশি সতর্ক থাকতে হবে।”
এদিকে গণমাধ্যমে বিষয়টি উঠে আসলেও এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি।
টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (অপারেশন) রকিবুল ইসলাম খান বেনারকে বলেন, “রোহিঙ্গা কিশোরী ধর্ষণ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। অভিযোগ পেলে আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারি।”
টেকনাফের নয়াপাড়া ক্যাম্পের কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ২৯ সেপ্টেম্বরের ঘটনাটি সম্পর্কে তারা শুনেছেন। এ ধরনের ঘটনা অত্যন্ত অনাকাঙ্ক্ষিত বলে উল্লেখ করেন তাঁরা। ভিকটিম কিশোরীর পরিবারও বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রাজি নন বলেও জানান রোহিঙ্গা নেতারা।
নয়াপাড়া ক্যাম্পের নেতা মো. শরীফ বেনারকে বলেন, “২৯ সেপ্টেম্বরের আমাদের ক্যাম্পে যে ঘটনাটি ঘটেছিল সেটি সম্পর্কে আমরা অবহিত। শুধু এটুকু বলতে পারি এ ধরনের ঘটনা একেবারেই কাম্য নয়।”
“আমরা এ দেশে আশ্রয়ের জন্য এসেছি। আবার নতুন করে নির্যাতিত হতে নয়,” বলেন তিনি। ভিকটিমের পরিবার ভীতসন্ত্রস্ত থাকায় পুলিশের কাছে অভিযোগ করেনি বলে তাঁর ধারনা।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে মিয়ানমারের সেনা বাহিনী রাখাইনে নিষ্ঠুর অভিযান চালানো শুরু করে। এময় দেশটির সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগীরা হাজার হাজার রোহিঙ্গাদের হত্যা করে, গ্রামের অসংখ্য ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়, ব্যাপক যৌন সহিংসতা চালায় বলে অভিযোগ্ রয়েছে।
ফলে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। নতুন ও পুরানো মিলেয়ে বাংলাদেশে বর্তমানে ১১ লাখের অধিক রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। এদের অনেকেই দেশটির সেনা বাহিনী ও তাদের সহযোগীদের দ্বারা গণধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করেন।
কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে ১১ লাখের মতো রোহিঙ্গার নিরাপত্তায় বাংলাদেশের পুলিশ, বিজিবি এবং সেনাবাহিনী কাজ করছে।