নির্বাচনী উত্তেজনা কাটিয়ে ঢাকা এখন উৎসবের শহর
2019.01.11
ঢাকা
জাতীয় নির্বাচন ঘিরে উত্তেজনা ও আশঙ্কা কাটিয়ে ঢাকায় প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা এবং চলচ্চিত্র উৎসবকে ঘিরে। এর আগে ৫ জানুয়ারি সাত দলের অংশগ্রহণে শুরু হওয়া বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) দেশের ক্রিকেটপ্রেমিদের মধ্যে সৃষ্টি করেছে উৎসাহ–উদ্দীপনা।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সহিংসতার আশঙ্কা ছিল। র্যাব–পুলিশের তৎপরতা ছিল ব্যাপক। আর অনেকেই গিয়েছিলেন ঢাকার বাইরে ভোট দিতে। এসব মিলিয়ে ৩০ ডিসেম্বরের আগেই ফাঁকা হয়ে যায় রাজধানী। নির্বাচনের এক সপ্তাহ পর পর্যন্ত ঢাকার রাস্তায় যানজট চোখে পড়েনি।
তবে বুধবার থেকে পাল্টাতে শুরু করেছে ঢাকার চেহারা। শুক্রবার ছুটির দিনে ঢাকার কিছু এলাকায় ছিল যানজট। জানুয়ারি শেষ হলেই ফেব্রুয়ারিতে আছে অমর একুশে বইমেলা ও জাতীয় কবিতা উৎসব।
রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় বুধবার থেকে শুরু হওয়া বাণিজ্যমেলায় পণ্য কিনতে ঢাকার বাইরে থেকেও এসেছেন অনেক মানুষ। শুক্রবার মেলা সংলগ্ন পুরো এলাকাজুড়ে ছিল যানজট।
থাইল্যান্ড প্যাভিলিয়নে পণ্য কিনতে আসা রেহানা আক্তার বেনারকে বলেন, “প্রতিবছর জানুয়ারি মাসের প্রথম দিন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা শুরু হয়। আমরা সংশয়ে ছিলাম এ বছর মেলা হবে কি না। কারণ ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর পরিস্থিতি কী হয়, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল।”
তিনি বলেন, পরিস্থিতি শান্ত থাকায় তাঁর ছোট বোন সিলেট থেকে পরিবার নিয়ে ঢাকায় এসেছেন বাণিজ্যমেলা থেকে পণ্য কিনতে।
রেহানা বলেন, “বছরে একবারই এক জায়গায় বিভিন্ন দেশের পণ্য কেনা যায়। এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাই না।”
নেপালি নাগরিক যুবরাজ পোখরেল এসেছিলেন বাণিজ্যমেলায় ইউরোপীয় স্টল থেকে চকলেট কিনতে। সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশের মেডিক্যাল কলেজে লেখাপড়া করা নেপালের কয়েকজন শিক্ষার্থী।
পোখরেল বলেন, “এখানকার মানুষ বন্ধুসুলভ। মেলায় এসেছি ইউরোপের চকলেট কিনতে। তা ছাড়া আমরা বাংলাদেশের চামড়ার পণ্য কিনতে চাই।"
বিদেশি ওই নাগরিক জানান, মেলায় কোনও সমস্যা নেই, তবে মানুষের ভিড়ে ঘোরাফেরা করা কঠিন।”
বুধবার বিকালে মাসব্যাপি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
মেলার আয়োজক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যমতে, বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৮টি দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যমেলায় অংশ নিচ্ছে। দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে; ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, ভুটান, পাকিস্তান, চীন, যুক্তরাজ্য, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, হংকং, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, মালদ্বীপ, মরিশাস, রাশিয়া, ইরান ও সুইজারল্যান্ড।
বাণিজ্যমেলা চলবে ফেব্রুয়ারির ৮ তারিখ পর্যন্ত।
৫৮ দেশের ২১৮টি চলচ্চিত্র
সতেরতম আন্তর্জাতিক চলচিত্র উৎসব উপলক্ষে ঢাকার প্রদর্শনীস্থলগুলোতে শুক্রবার ভিড় জমান বিভিন্ন বয়সের দর্শক। ১০ জানুয়ারি জাতীয় যাদুঘর মিলনায়তনে আট দিনব্যাপী উৎসবের উদ্বোধন করেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।
ধানমন্ডির আলিয়াঁস ফ্রঁসেস, যমুনা ফিউচার পার্ক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, কেন্দ্রিয় গণগ্রন্থাগার ও জাতীয় যাদুঘর মিলনায়তনে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত চলচ্চিত্র দেখানো হবে।
যমুনা ফিউচার পার্কের ব্লকবাস্টারে চলচ্চিত্র দেখতে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাওহীদ আহমাদ বেনারকে বলেন, “আন্তর্জাতিক চলচিত্র উৎসব সত্যিই একটি সুযোগ। পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়ে অনেক দেশের চলচ্চিত্র দেখার সুযোগ বছরে একবারই মেলে। যেহেতু পরিবেশ শান্ত এবং ছুটরি দিন, তাই সিনেমা দেখতে এসেছি।”
উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বেনারকে বলেন, “এ বছর সর্বোচ্চ ৫৮টি দেশের ২১৮টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। উৎসবকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।”
প্রতিমন্ত্রী বলেন, “নির্বাচনের আগে বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশ ভ্রমণের ওপর সতর্কতা জারি করে। কিন্তু আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব উপলক্ষে শতাধিক বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশে এসেছেন। এ ছাড়া, বিপিএল টুর্নামেন্টের অনেক বিদেশি খেলোয়াড় ও অতিথি বাংলাদেশে অবস্থান করছেন।”
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় অংশ নিতে অনেক বিদেশি এখন বাংলাদেশে অবস্থান করছেন বলেও জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
বিপিএল ম্যাচ ঘিরে আগ্রহ
শুক্রবার মিরপুর ক্রিকেট স্টেডিয়ামে চলা বিপিএল ম্যাচের টিকেট কিনতে ও খেলা দেখতে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হন মিরপুর এলাকায়। মানুষের ভিড় সামলাতে মোতায়েন করা হয় বাড়তি পুলিশ।
ময়মনসিংহ থেকে এসেছেন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সিয়াম হোসেন। তিনি বেনারকে বলেন, “ঢাকায় এসেছিলাম। ইচ্ছা ছিল মাশরাফির খেলা দেখব। যেহেতু নির্বাচনের পর সবকিছু স্বাভাবিক তাই আজ খেলা দেখার সুযোগ নিলাম।”
দেশ এখন নিরাপদ
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বেনারকে বলেন, “নির্বাচনের আগে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা করা হয়েছিল। আমরা সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সুষ্ঠু নির্বাচন করেছি। দেশের মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে। বাংলাদেশ এখন দেশি-বিদেশি সবার জন্য সমান নিরাপদ।”
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বেনারকে বলেন, “পুলিশের পক্ষ থেকেও নির্বাচনের আগে জঙ্গি হামলার আশঙ্কার কথা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এ ধরনের বক্তব্যে জনগণের মধ্যে শঙ্কা সৃষ্টি হয়।”
তিনি বলেন, “নির্বাচনের পর সবকিছু অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে নানা প্রশ্ন থাকলেও তারা আন্দোলন–সংগ্রাম চায় না।”