আরও ১০০ জনের ব্যাপারে অনাপত্তি দিলো মিয়ানমার
2018.03.26
ঢাকা

নিজ আবাসস্থল রাখাইনে প্রত্যাবাসনের জন্য পাঠানো আট হাজারের বেশি শরণার্থীর মধ্যে দ্বিতীয় দফায় মাত্র ১০০ রোহিঙ্গা গ্রহণের ব্যাপারে অনাপত্তি দিয়েছে মিয়ানমার। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের দেওয়া প্রথম তালিকা থেকে ৪৭৪ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে সেদেশে পুনর্বাসনে অনাপত্তি জানাল দেশটি।
শরণার্থী ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম সোমবার বেনারকে বলেন, “মিয়ানমার সরকার আরও ১০০ জনের মতো রোহিঙ্গার ভেরিফিকেশন ক্লিয়ার করেছে। এর আগে তারা ৩৭৪ জনের ব্যাপারে অনাপত্তি দেয়। আশা করছি তারা বাকিদের ব্যাপারে ও ইতিবাচক হবে।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের জোর করে সেদেশে ফেরত পাঠাবে না। পুনর্বাসন হবে স্বেচ্ছায়।”
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সফররত মিয়ানমার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লে. জেনারেল চিও সোয়ের সঙ্গে সচিবালয়ে দ্বিপক্ষীয় সভায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রথম দফায় ৮ হাজার ৩২ জন রোহিঙ্গার একটি তালিকা হস্তান্তর করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
গত ২৪ মার্চ মিয়ানমারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা সেই তালিকা থেকে ৩৭৪ জন সম্পর্কে অনাপত্তি দিয়েছে। তবে এত কমসংখ্যক রোহিঙ্গার বিষয়ে অনাপত্তি দেওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বায়োমেট্রিক তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১১ লাখ ৮৮ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। এদের মধ্যে সাত লাখের বেশি এসেছে গত বছর আগস্টের পর থেকে। রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ এখনো অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশ জবাব প্রস্তুত করছে
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অনুবিভাগের মহাপরিচালক তারেক মোহাম্মদ বেনারকে বলেন, “তাদের ভেরিফিকেশন লিস্টের বিপরীতে আমরা কি জবাব দেব সে ব্যাপারে আমাদের নিজেদের মধ্যে সভা অনুষ্ঠিত হবে।”
“ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় মিয়ানমার সরকারকে আমাদের মতামত জানাবো। দ্বিতীয় সভা ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। দু’পক্ষের সম্মতিতে সভার তারিখ নির্ধারণ করা হবে,” বলেন তিনি।
তিনি বলেন, “আমরা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর–কে যুক্ত করছি। সংস্থাটির কাজ প্রত্যাবাসন স্বেচ্ছায় হচ্ছে কি না তা দেখা।”
তবে ইউএনএইচসিআর এর সিনিয়র তথ্য অফিসার ক্যারোলিন গ্লুক সোমবার বেনারকে বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে তার সংস্থার কোনো ভূমিকা নেই। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের সাথে তাদের কোনো চুক্তি হয়নি।
ফরম পূরণ জটিল বিষয়
কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম জানান, মিয়ানমার সরকারকে যে আট হাজার রোহিঙ্গার তালিকা দেওয়া হয়েছে তাদের পুনর্বাসন ফরম পূরণ করেছে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিশনারের অফিসের কর্মকর্তারা। তিনি বলেন, এই ফরম পূরণ একটু কঠিন কাজ।
“তবে জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে ফরম পূরণ প্রক্রিয়া সহজ হবে। কারণ, তাদের লোকবল আছে ও তাদের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন দেশে কাজ করেছেন। পুনর্বাসন কাজের এক্সারসাইজ আছে তাদের,” তিনি বলেন।
এদিকে মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত অনুপ কুমার চাকমা বেনারকে বলেন, “মিয়ানমারের কাছে পাঠানো ভেরিফিকেশন ফরম সঠিকভাবে পূরণ না করা হলে অথবা ফরমে কোনো ভুল তথ্য থাকলে এমনকি বানান ভুল হলেও তাদের গ্রহণ করতে রাজি হবে না মিয়ানমার।”
উদাহরণ হিসাবে তিনি বলেন, “রোহিঙ্গাদের একটি গ্রাম জাইল্যাপাড়া। তারা মিয়ানমার সরকারের দেওয়া অফিসিয়াল নাম উচ্চারণ করে না।”
“তাই, যখন ফরম পূরণ করা হয়েছে তখন হয়তো তারা তাদের গ্রামের নাম বা জেলা অথবা পোস্ট অফিসের পুরোনো নাম বলেছে। আর তথ্য সংগ্রহকারীরা সেটা দিয়েই ফরম পূরণ করেছে। বাংলার সাথে মিয়ানমারের ভাষা এতটাই আলাদা যে, কোনো বাঙালির পক্ষে সেটা বোঝা সম্ভব নয়,” বলেন অনুপ চাকমা।
“সুতরাং পাঠানোর আগে আমাদের নিশ্চিত হতে হবে যে ফরমগুলো সঠিকভাবে পূরণ করা হয়েছে কি না। অন্যথায় পুনর্বাসন প্রক্রিয়া জটিলতার মধ্যে পড়তে পারে,” মত দেন তিনি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনারকে বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন নিয়ে বাংলাদেশ মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখবে।
তিনি বলেন, “তারা প্রথমে ৩৭৪ জনকে গ্রহণে অনাপত্তি জানায়। এরপর আরও ১০০ জনকে গ্রহণ করতে রাজি হয়েছে। সুতরাং, আলোচনা যে ফলপ্রসূ হচ্ছে না, তা নয়। আমরা আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান চাই।”