মিয়ানমার সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে দুই পা হারাল এক বাংলাদেশি
2018.02.05
ঢাকা ও কক্সবাজার

আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও বাংলাদেশকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে সীমান্তে মাইন পোঁতা অব্যাহত রেখেছে মিয়ানমার। তাই দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চিও সোয়ের আসন্ন ঢাকা সফরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের অগ্রগতিসহ সীমান্তে নিরাপত্তা ও ল্যান্ডমাইন স্থাপনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবে বাংলাদেশ।
আগামী ফেব্রুয়ারি ১৫ তারিখ রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিতে চিও সোয়ে ঢাকা আসছেন বলে বেনারকে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা শরীফ হোসেন অপু। বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে ১৬ তারিখ। পরদিন তিনি ঢাকা ত্যাগ করবেন।
স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, শনিবার বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণের ঘটনা মিয়ানমার দলের কাছে তুলে ধরা হবে। কারণ, সীমান্তে পুঁতে রাখা মাইনে বিস্ফোরণে এখনো হতাহতের ঘটনা ঘটছে।
শনিবার মাইনের আঘাতে দু’পা হারিয়েছেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বদিউর রহমান নামে এক বাংলাদেশি।
বড়ছন খোলার বন্যাগিরি এলাকার সীমান্তে ৪২ ও ৪৩ নং পিলারের মাঝামাঝি নো-ম্যানস ল্যান্ডে এ ঘটনা ঘটে বলে নিশ্চিত করেছে জেলা পুলিশ।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম সরওয়ার কামাল বেনারকে বলেন, মিয়ানমারের পুঁতে রাখা স্থলমাইনে এক বাংলাদেশি আহত হওয়ার বিষয়টি সরকারের উচ্চপর্যায়ে জানানো হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বেনারকে বলেন, “মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের বৈঠকের প্রস্তুতি সভা রোববার অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রস্তুতি, সীমান্তে মাদক চোরাচালান, সীমান্তে ল্যান্ডমাইন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করা যায়।”
“মিয়ানমার সীমান্তে স্থলমাইন ব্যবহারের কারণে যত হতাহতের ঘটনা ঘটছে তা আমরা তুলে ধরতে চাই,” বেনারকে বলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক।
মাইনে নিহত ২০, আহত ১১
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে স্থলমাইন বিস্ফোরণে এ পর্যন্ত ১১ জন নিহত ও ২০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক। এদের তিনজন বাংলাদেশি, বাকিরা রোহিঙ্গা।
“আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, সীমান্তে স্থলমাইন পোঁতা নিষিদ্ধ। তারপরও মিয়ানমার তা লঙ্ঘন করে স্থলমাইন পুঁতে রাখছে। ফলে, রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয়রাও স্থলমাইনের ফাঁদে পড়ে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হারাচ্ছেন,” বেনারকে বলেন দিলীপ কুমার বনিক।
আহত বদিউর রহমান নাইক্ষ্যংছড়ি সদরের ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তার বাবার নাম জাগের হোসেন।
নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউপি চেয়ারম্যান তসলিম ইকবাল জানান, শনিবার বেলা ১১টার সময় বদিউর রহমান ওই এলাকায় গরু খুঁজতে গেলে হঠাৎ করে মাইন বিস্ফোরণ হয়। এ সময় তাঁর দুটি পা উড়ে যায়।
স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠান।
সীমান্তে অনেক জায়গায় এখনো স্থলমাইন রয়েছে বলে স্থানীয় লোকজন তাঁকে অবহিত করেছে বলে জানান তসলিম ইকবাল।
পুলিশ ও বিজিবির তথ্য অনুযায়ী, শূন্যরেখায় পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার চাকঢালা বাসিন্দা হাসেম উল্লাহ (৪৪) হাশিম উল্লাহ, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সৈয়দ আহমদ, মোক্তার আহমদ, গোল চেহের বেগম, নূরে আলমসহ অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন এবং আহদের মধ্যে রয়েছেন ইউসুফ নবী (২৮), মো. হাসান (২৫), নূর হোসেন (৯), মো. মামুন (২৫) ও ৪০ দিন বয়সী সোহানা, সাবেকুর নাহার, (২৫) আজিজু হকসহ(১৫) ২০ জনের মতো।
নাইক্ষ্যংছড়িতে বসবাসকারী পুরোনো রোহিঙ্গা মো. ফিরোজ বলেন, স্থলমাইন বিস্ফোরণের সর্বশেষ ঘটনা ঘটেছে গত শনিবার। এর আগে ঘটেছিল গেলো বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর। ওই দিন বিকেলে নাইক্ষ্যংছড়ির চাকঢালা সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকালে ওপারে এক রোহিঙ্গা যুবক প্রাণ হারান।
পাঁচ বাংলাদেশিকে অপহরণ
একইদিন সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কাঞ্জরপাড়া সংলগ্ন নাফনদীতে মাছ শিকারের সময় গুলি বর্ষণ করে পাঁচ জেলেকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)।
ওই সময় বাংলাদেশি এক জেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে পালিয়ে আসেন। তিনি হলেন, টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কাঞ্জর পাড়ার ফকির মোহাম্মদের ছেলে নুরুল ইসলাম।
তবে অপহরণের সাত ঘণ্টা পর (শনিবার) দুপুর আড়াই টার দিকে পাঁচ জেলেকে বিজিবির কাছে ফেরত পাঠায় বিজিপি।
অপহৃত ফেরত আসা জেলেরা হলেন- একই এলাকার আব্দুল গফুরের ছেলে আজিজুল্লাহ, মৃত আব্দুল শুক্কুরের ছেলে ইয়ার মোহাম্মদ, মৃত নুরুল আলমের ছেলে শাহ আলম, আব্বাসের ছেলে মো. রফিক ও আব্দুল জলিলের ছেলে পেটান আলী।
টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এসএম আরিফুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “নাফ নদীতে গুলি বর্ষণ করে বাংলাদেশি পাঁচ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে মিয়ানমার পুলিশ। ঘটনার পরপরই নিন্দা জানিয়ে একটি প্রতিবাদলিপি পাঠানো হয়। পরে বিজিবি-বিজিপি’র সমন্বয়ের মাধ্যমে তাদের ফেরত আনা হয়।”