সীমান্তে মাদক চোরাচালান চক্রের হামলায় আনসার সদস্য নিহত
2017.03.09
ঢাকা

ভারতের সীমান্তবর্তী ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার মুন্সিরহাট হাট ইউনিয়নে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষে মো. মীর নওশাদ আলী (৫২) নামে এক আনসার সদস্য নিহত হয়েছেন।
ওই ঘটনায় জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার সোহেল রানাসহ দুজন আহত হন। ঘটনার সময় দুর্বৃত্তরা মো. সুমন (৩০) নামে এক ব্যক্তিকে মারধরের পর অপহরণ করে। তারা আনসার সদস্যের অস্ত্রটি লুট করে। অভিযোগ রয়েছে, মাদক বিরোধী অভিযানের একজন সোর্স হিসেবে কাজ করছিলেন সুমন।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, সীমান্ত এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীরা কতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে—এ ঘটনা তারই প্রমাণ। কঠোর নজরদারির মাধ্যমে সীমান্তে চোরাচালান বন্ধের পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মাহফুজুল হক মারজান বেনারকে বলেন, “সীমান্তে চোরাচালানের সঙ্গে দুই দেশের জনগণই সম্পৃক্ত। এরা সবাই অপরাধী। দু’দেশের দেশের আইন শৃঙ্খলাবাহিনীকেই এসব চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে সক্রিয় হতে হবে।”
গত বুধবার রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে মাদকবিরোধী অভিযানে যান ফেনী জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক সোহেল রানা। এ সময় তাঁদের ওপর হামলা চালায় স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি ছোড়ে পুলিশ।
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কিসিঞ্জার চাকমা বেনারকে বলেন, “কয়েকজন পুলিশ ও আনসার সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে বুধবার রাতে বদরপুর এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযানের একপর্যায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ওপর অতর্কিতে হামলা চালায় মাদক ব্যবসায়ীরা। এতে আনসারের ল্যান্সনায়েক নওশাদ আলী নিহত হন।
তিনি বলেন, “মাদক ব্যবসায়ীরা নিহত আনসারের অস্ত্রও কেড়ে নেয়। নওশাদকে উদ্ধারে এগিয়ে গেলে দুর্বৃত্তরা ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল রানাকেও কুপিয়ে আহত করে। এ ছাড়া সুমন নামে পুলিশের একজন সোর্সকে মারধর করে জোরপূর্বক ভারতের দিকে নিয়ে যায় তারা।”
ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল আলীম বেনারকে বলেন, “ঘটনাটি নো-ম্যান্স ল্যান্ডে হওয়ায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ নিহত আনসারের লাশ নিয়ে যায়।”
আহত ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল রানা ফেনী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
তিনি বেনারকে বলেন, “অনেক দিন ধরেই বদরপুর সীমান্তের খানাবাড়ী এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে মাদকদ্রব্য ঢুকছিল খবর পেয়েই সেখানে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু আগে থেকেই ভারত সীমান্তে ওত পেতে থাকা মাদক ব্যবসায়ীরা অতর্কিতভাবে গুলি ও ধারালো দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়।”
পরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্থানীয় বিজিবির সঙ্গে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে নওশাদের লাশ ফেরত দেয় বিএসএফ। তবে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে সুমনকে আটক করে ত্রিপুরার কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বৈঠকে বিজিবির পক্ষে ফেনীর ৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নের উপ অধিনায়ক মেজর আশ্রাফ, ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) উক্য সিং, ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কিসিঞ্জার চাকমা, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল আলীম এবং ভারতের পক্ষে ৮৬ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক সুরেন চন্দ্র দাস, উপ অধিনায়ক নীরেশ মনোহর উপস্থিত ছিলেন।
নিখোঁজ সুমনের বিষয়ে ইউএনও কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, “ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী জানিয়েছে, সুমনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।”