কক্সবাজারে করোনাভাইরাসে প্রথম রোহিঙ্গার মৃত্যু
2020.06.02
কক্সবাজার ও ঢাকা

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৭১ বছরের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। এটিই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কোনো রোহিঙ্গার প্রথম মৃত্যু।
গত ৩০ মে রাতে তাঁর মৃত্যু হয় বলে বেনারকে নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের সমন্বয়কারী ডা. আবু তোহা এম আর এইচ ভূঁইয়া।
মঙ্গলবার তিনি বেনারকে বলেন, “জ্বর, শ্বাসকষ্টসহ নানা সমস্যা নিয়ে গত ৩০ মে কুতুপালং নিবন্ধিত ক্যাম্পের একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসেন ওই রোহিঙ্গা বৃদ্ধ।”
“উপসর্গ দেখে চিকিৎসকরা সেদিনই তাঁর নমুনা সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষার জন্য পাঠান। কিন্তু হাসপাতালে আইসোলেশন সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেই রাতেই তিনি মারা যান। পরে তাঁর রিপোর্ট পজেটিভ আসে,” বলেন তিনি।
ডা. তোহা জানান, মঙ্গলবার নতুন একজনসহ এ পর্যন্ত ২৯ রোহিঙ্গা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। সব মিলিয়ে কক্সবাজার জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৮৮৫।
বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হন ৮ মার্চ ও এই রোগে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১৮ মার্চ।
এর তিন মাসের কম সময়ের মধ্যে মঙ্গলবার বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সংখ্যা অর্ধ লাখ এবং মৃত্যুর সংখ্যা সাতশ ছাড়িয়েছে।
নিয়মিত ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ২ হাজার ৯১১ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ায় দেশে এ পর্যন্ত করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫২ হাজার ৪৪৫ জনে।
একই সময়ে আরও ৩৭ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে প্রাণঘাতি এই ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৭০৯ জন।
সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত ১১ হাজার ১২০ জন সুস্থ হয়েছেন এবং তিন লাখ ৩৩ হাজার ৭৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
করোনো সংক্রমণ ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে শুরু হওয়া দুই মাসের বেশি সাধারণ ছুটির পর ৩১ মে থেকে সীমিত পরিসরে অফিস-আদালত, গণপরিবহণ খুলে দেওয়ার পরে আজ সর্বোচ্চ সংক্রমণ এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড করল বাংলাদেশ।
যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে, সোমবার পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৩ লাখ ২৫ হাজারের বেশি মানুষ, মারা গেছেন তিন লাখ ৭৭ হাজারের বেশি।
রোহিঙ্গা শিবিরে আতঙ্ক
শনাক্ত হওয়ার আগে মারা গেলেও করোনার উপসর্গ থাকায় কক্সবাজারে মারা যাওয়া রোহিঙ্গাকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বাস্থ্যবিধি মেনেই দাফন করা হয়েছে বলে জানান ড. তোহা।
পাশাপাশি মৃতের পরিবারের নয় সদস্যকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
রোহিঙ্গা রিফিউজি কমিটির চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল মোস্তফা বেনারকে বলেন, “লোকজন খুব সর্তকভাবে চলার চেষ্টা করছে। তবুও ক্যাম্পগুলোতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যে এক রোহিঙ্গার মৃত্যুর পর আমরা খুবই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি।”
“এ অবস্থায় ক্যাম্পগুলোতে করোনাভাইরাস টেস্ট বাড়ানো দরকার,” বলেন তিনি।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবজারের উখিয়া ও টেকনাফের শরণার্থী শিবিরগুলোতে আশ্রয় নেন। এর আগে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারে অবস্থান করছিল। সব মিলিয়ে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা ঘনবসতিপূর্ণ ক্যাম্পগুলোতে অবস্থান করছে।
কক্সবাজার অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. সামশু দ্দৌজা নয়ন বেনারকে বলেন, “রোহিঙ্গা শিবিরে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার বাড়ছে ঠিক। কিন্তু পরিস্থিতি মোকাবেলায় ক্যাম্পে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।”
তিনি জানান, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতায় করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য ১ হাজার নয়শ শয্যার চিকিৎসা কেন্দ্র তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ছয়শ শয্যার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আরও ছয়শ শয্যার কাজ দ্রুতই শেষ হবে।
“করোনা সংক্রমণের হার কমানোর জন্য আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা লোকজন এবং যাদের মধ্যে করোনার লক্ষণ দেখা দিচ্ছে তাদের যত দ্রুত সম্ভব আলাদা করা হচ্ছে,” বলেন সামশু দ্দৌলা।
এ বিষয়ে ইন্টার সেক্টর কো-অডিনেশান গ্রুপের (আইএসসিজি) মুখপাত্র সৈকত বিশ্বাস বেনারকে বলেন, “করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকে আইএসসিজির স্বাস্থ্য খাতের অংশীদারেরা সরকারকে নানাভাবে সহযোগিতা করছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।”
“ইতিমধ্যে উখিয়া ও কুতুপালংয়ে দুটি সিভিয়ার একিউট রেস্পিরেটরি ইনফেকশন আইসোলেশন অ্যান্ড ট্রিটমেন্ট সেন্টার চালু করা হয়েছে। যেখানে মাঝারি এবং গুরুতর কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া যাবে,” যোগ করেন তিনি।
করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রায় ৮০টি প্রবেশ পথে সাড়ে আট হাজার হাত ধোয়ার স্টেশন চালু করা হয়েছে বলেও জানান সৈকত বিশ্বাস।
ডা. তোহা জানান, সাগর থেকে উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গাসহ আক্রান্ত রোহিঙ্গাদের সংস্পর্শে আসায় এ পর্যন্ত ৮০১ জনকে আইসোলেসান সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে কোনো ধরনের লক্ষণ প্রকাশ না পাওয়ায় ৬২৮ জনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। বাকি ১৭৩জন এখনো বিভিন্ন আইসোলেসান সেন্টারে রয়েছেন।