করোনার মধ্যেই বাংলাদেশে বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ
2020.11.06
ঢাকা

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস মহামারির দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ আশঙ্কার মধ্যেই বেড়েছে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ। অন্যান্য বছর অক্টোবর-নভেম্বর মাস নাগাদ ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে আসলেও এবার এই সময়েও এর প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের হিসাব অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১২ জন। তবে ঢাকার বাইরে কোনো নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়নি।
হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের এক বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৪৬ জন।
কন্ট্রোল রুমের হিসাবে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৬৯৭ জন। এর মধ্যে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৬৪৬ জন।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটে (আইইডিসিআর) ডেঙ্গু সন্দেহে পাঁচ জনের মৃত্যুর তথ্য পাঠানো হয়। আইইডিসিআর দুটি মৃত্যুর তথ্য পর্যালোচনা করে একটি মৃত্যু ডেঙ্গুতে হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৃষ্টি মৌসুম দীর্ঘস্থায়ী হওয়া এবং সে অনুযায়ী এডিস মশা দমনে নগর কর্তৃপক্ষের যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। তবে এই মাসে আর বৃষ্টি না হলে দুই-এক সপ্তাহের মধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে যাবে বলে মনে করেন তাঁরা।
চিকিৎসা নৃবিজ্ঞানী আতিক আহসান বেনারকে বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনগত কারণে এবার বর্ষাকাল দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে। অন্যান্য বছরগুলোর মতো এবারও আগস্ট মাস পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশন এডিস মথ নির্মূলে সক্রিয় ছিল।”
“কারণ, তাদের ধারণা ছিল আগস্ট নাগাদ পর্যন্ত বৃষ্টি কমবে। কিন্তু এবার বৃষ্টি দীর্ঘ সময় থাকায় সিটি কর্পোরেশনের উচিত ছিল তাদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম বাড়ানো। সেটা না করায় এই সময়ে ডেঙ্গু বেড়ে গেছে,” বলেন তিনি।
এডিস মশার জন্য বাতসে ৮০ শতাংশের বেশি আর্দ্রতা লাগে জানিয়ে আতিক হাসান বলেন, বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বর্তমানে ৫০ শতাংশের কাছাকাছি চলে এসেছে।
“এখন বৃষ্টি হওয়ার চান্স কম বলে আগামী ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে যেতে পারে,” বলেন তিনি।
তবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশারের মতে, “ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখন ধীরে ধীরে কমা শুরু করলেও অন্যান্য বছরে এই সময়ে যতটা কমত ততটা কমবে না।”
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় দফার প্রকোপও বাংলাদেশে হবে না উল্লেখ করে এই গবেষক বলেন, “বাংলাদেশে প্রথম ওয়েভই তো থামানো যায়নি। সেটা থামানো হলেই না দ্বিতীয় ওয়েভ আসত।”
তবে আসন্ন শীতে করোনায় আক্রান্তদের মারা যাওয়ার হার বাড়তে পারে বলে মনে করেন তিনি।
কারণ হিসেবে অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, “যাদের হাঁপানি, শ্বাসকষ্টের মতো রোগ আছে শীতে তাঁদের করোনা হলে মৃতুর আশঙ্কা বেশি হবে।”
এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে ডেঙ্গু রোগ বৃদ্ধি পাওয়ায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি যৌথভাবে গত সোমবার থেকে এডিসের লার্ভা ধ্বংস করতে “চিরুনি অভিযান” শুরু করেছে বলে বেনারকে জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. আফসানা আলমগীর খান।
“এছাড়া চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ভালো ব্যাপার হলো ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হলেও রোগীরা সুস্থ হয়ে ফেরত যাচ্ছেন,” বলেন ডা. আফসানা আলমগীর খান।
তিনি বলেন, “কোভিড-১৯ সংকটে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ ও চিকিৎসাসেবা যেন বাধাগ্রস্ত না হয় সে জন্য প্রত্যেক জেলার সিভিল সার্জনকে সকল হাসপাতালে পূর্বে স্থাপিত ‘ডেঙ্গু কর্নার’ পুনরায় সক্রিয় করা এবং জ্বরের রোগীদের কোভিড-১৯ পরীক্ষার পাশাপাশি অবশ্যই ডেঙ্গু জ্বরের পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে।”
উল্লেখ্য, গত বছর বাংলাদেশে এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন, যার মধ্যে মারা যান ১৭৯ জন।
করোনায় আরো ১৫ জনের মৃত্যু
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন চার লাখ ১৭ হাজার ৪৭৫ জন, মৃত্যু হয়েছে ছয় হাজার ৩৬ জনের।
এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৪৬৯ জন ও মারা গেছেন ১৫ জন।
এদিকে শরণার্থী শিবিরগুলোতে এ পর্যন্ত ৩৩৯ জন রোহিঙ্গা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে শুক্রবার বেনারকে জানান কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের প্রধান স্বাস্থ্য সমন্বয়কারী ডা. আবু তোহা এম আর এইচ ভূঁইয়া।
তিনি জানান, এ পর্যন্ত নয়জন শরণার্থী মারা গেছেন করোনাভাইরাসে।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে, এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন চার কোটি ৯১ লাখের বেশি মানুষ, মারা গেছেন ১২ লাখ ৩৯ হাজারের বেশি।
প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন কক্সবাজার থেকে আবদুর রহমান।