বিজিবির গুলিতে মাদক পাচারকারী রোহিঙ্গা নারীর মৃত্যু, আটক চার

কামরান রেজা চৌধুরী
2017.04.13
ঢাকা
বিজিবির হাতে আটক মাদক পাচারকারীদের একজন। বিজিবির হাতে আটক মাদক পাচারকারীদের একজন। এপ্রিল ১৩, ২০১৭।
বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ

সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বর্ডার গার্ড, বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের সঙ্গে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত অঞ্চলে সন্দেহভাজন মাদক পাচারকারীদের গোলাগুলির ঘটনায় এক রোহিঙ্গা নারীর মৃত্যু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার ভোরে নাফ নদীতে ঘটে যাওয়া ওই ঘটনায় আরও তিন রোহিঙ্গা নাগরিক এবং একজন বাংলাদেশি আহত অবস্থায় আটক হয়েছেন বলে বেনার নিউজকে জানিয়েছেন টেকনাফ বিজিবি পরিচালক আবু জার আল জাহিদ।

তিনি জানান, নিহত রোহিঙ্গা নারীর নাম মোছাঃ জাহিদা বেগম (৬০)। জাহিদা মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের মংডু থানাধীন উদং গ্রামের অধিবাসী। তাঁর স্বামীর নাম কালু মিয়া।

আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে ২৮ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়েছে।

বিজিবি পরিচালক জাহিদ জানান, বিশ্বস্ত সূত্রে খবর পেয়ে বিজিবির একটি বিশেষ টহল দল টেকনাফের বদরমোকাম অঞ্চলে অবস্থান নেয়। বৃহস্পতিবার আনুমানিক দুইটার দিকে মিয়ানমার থেকে দুটি নৌকা নাফ নাদী দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করে। বিজিবি সদস্যরা নৌকা দুটিকে থামার সংকেত দেয়। সঙ্গে সঙ্গে নৌকাগুলো থেকে বিজিবি সদস্যদের ওপর গুলি বর্ষণ শুরু করে।

এরপর বিজিবি সদস্যরা পাল্টা গুলি চালালে নৌকা দুটোর একটি মিয়ানমারের দিকে চলে যায়। অন্য নৌকাটি দিক পরিবর্তন করতে গিয়ে চরে আটকে যায়। টহল দলের সদস্যরা আটকে যাওয়া নৌকায় মোট পাঁচ জনকে আহত অবস্থায় আটক করে। এর মধ্যে তিনজন মহিলা এবং দুইজন পুরুষ। তাদের কাছ থেকে ২৮ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

আহতদের কক্সবাজার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার জাহিদা বেগমকে মৃত ঘোষণা করেন। অন্যদের কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান পরিচালক জাহিদ।

তাঁদের বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশ ও মাদকদ্রব্য বহনের মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে বলে তিনি জানান।

পরিচালক জাহিদ জানান, আহত চার জনের মধ্যে মো. শফিক (২৭) কক্সবাজার জেলার শাহপরীর দ্বীপ অঞ্চলের বাসিন্দা।

বিজিবি ও পুলিশ সূত্রগুলো জানান, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে মিয়ানমার অংশে অনেক ইয়াবা ট্যাবলেট তৈরির কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। সেখান থেকে বাংলাদেশে অবৈধভাবে ইয়াবা আনা হয়। পরে তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ইয়াবা এক ধরনের যৌন উত্তেজক বড়ি, যা বাংলাদেশে নিষিদ্ধ।

কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরোজুল হক টুটুল বেনার নিউজকে জানান, মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা এবং বাংলাদেশের কিছু নাগরিক মাদক চোরাচালানের সাথে যুক্ত।

টুটুলের ভাষায় “এরা খুবই ভয়ংকর। প্রায়ই তারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের ওপর হামলা চালায়।”

তবে শাহপরীর দ্বীপ অঞ্চলের বাসিন্দা মো. আলমগীর বেনার নিউজকে টেলিফোনে জানান, সীমান্ত চোরাকারবারিদের সঙ্গে পুলিশ সহ অন্যান্য বাহিনীর যোগাযোগ থাকার অভিযোগ রয়েছে।

মূলত: মাদক পাচারকারীরা টেকনাফে একটি বিরাট সমস্যা। এই সমস্যার তীব্রতা অনুভব করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে এসে টেকনাফে ইয়াবা পাচারের বিরুদ্ধে র‌্যালি করে গেছেন।

“তবে চোরাচালানিদের দৌরাত্ম্য কমেনি বরং বেড়েছে। সরকারে উচিত খুব শক্ত হাতে এই চোরাচালানিদের দমন করা। অন্যথায় দেশের যুব সমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে”, বলেন আলমগীর।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।