কক্সবাজারে গোলাগুলিতে পাঁচ মাদক ব্যবসায়ী নিহত
2020.07.28
ঢাকা ও কক্সবাজার

কক্সবাজারে মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে গোলাগুলির পৃথক দুই ঘটনায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মঙ্গলবার ভোরে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে কক্সবাজার শহরে কবিতা চত্বর ও টেকনাফের হোয়াইক্যং পূর্ব সাতঘড়িয়া পাড়া থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাঁচ ইয়াবা ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার করা হয় বলে দাবি পুলিশের।
“নিহত পাঁচজনই মাদক ব্যবসায়ী। এই ব্যবসার অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে নিজেদের মধ্যে গোলাগুলিতে তাঁরা নিহত হয়েছেন,” বেনারকে বলেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন।
তিনি জানান, দুটি ঘটনাস্থল থেকেই পুলিশ ইয়াবা ও অস্ত্র উদ্ধার করেছে।
তবে নিহতের স্বজনদের দাবি, গতকাল রাতে পুলিশ তাঁদের আটক করে নিয়ে যাবার পর সকালে তাঁদের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।
নিহত ইসমাইলের স্বজন মো. আনছার বেনারকে বলেন, “গতকাল রাতে ইসমাইলসহ চারজনকে আটক হয়েছে বলে খবর পাই। এরপর অনেক রাত পর্যন্ত বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর কাছে খোঁজ নিয়ে তাঁদের কোনো সন্ধান পাইনি।”
“এরপর আজ সকালে তাঁদের মৃত্যুর খবর আসে,” বলেন তিনি।
পুলিশের হিসেব অনুযায়ী, চলতি বছরে ২৮ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলি ও মাদক ব্যবসায়ীদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে গোলাগুলির ঘটনায় কক্সবাজারে মোট ৭৩ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৫২ জন রোহিঙ্গা।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, অপরাধ যে মাত্রারই হোক না কেন, অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বেড়েছে বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ উপপরিচালক নীনা গোস্বামী বেনারকে বলেন, “যেকোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় প্রধান অন্তরায়।”
“লক্ষ করা যায়, বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যার পরে বলা হয় তাঁরা মাদক ব্যবসায়ী বা অন্য অপরাধের সাথে জড়িত ছিলেন। কিন্তু আইনে সোপর্দ করা ছাড়া কারো সম্পর্কে এভাবে বলা যাবে না,” বলেন তিনি।
“ভুলে গেলে চলবে না, বিচারের আগে জীবনের অধিকার কেড়ে নেওয়া সংবিধান লঙ্ঘন,” মন্তব্য করে সকল বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন নীনা গোস্বামী।
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য উল্লেখ করে নীনা জানান, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে এই জুলাই মাসে এ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বন্দুকযুদ্ধে হত্যার ঘটেছে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মোট ১৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়া শুধু জুলাই মাসের ২৬ তারিখ পর্যন্ত কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন অন্তত ৩৬ জন। জুলাই পর্যন্ত পর্যন্ত বন্দুকযুদ্ধে নিহতের মোট পরিমাণ ১৭৯ জন।
এ ছাড়া অপর একটি মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ১৪৬ জন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন।
কক্সবাজারে যা ঘটেছিল
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ বেনারকে জানান, ইয়াবা ব্যবসায়ীরা মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান এনে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা টেকনাফের হোয়াইক্যং খারাংখালি সীমান্তে মজুত রাখে। ভোরে ইয়াবার ভাগাভাগি নিয়ে তাদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
তিনি বলেন, “পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা পুলিশকেও লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ পাল্টা গুলি চালালে পরিস্থিতি শান্ত হয়।”
“পরে ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়ে গুলিবিদ্ধ ওই চারজনকে উদ্ধার করে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন,” বলেন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।
ওসি আরও জানান, ঘটনাস্থল থেকে ৫০ হাজার ইয়াবা, দুটি এলজি ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শুভ্র দেব বেনারকে জানান, “পুলিশ গুলিবিদ্ধ চারজনকে হাসপাতালে আনার আগেই তাঁরা মারা যান। তাঁদের শরীরের বিভিন্ন অংশে গুলির চিহ্ন রয়েছে।”
এদিকে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহাজান কবির বেনারকে বলেন, “ভোর রাতের দিকে কক্সবাজার শহরে কবিতা চত্বর নামক এলাকা থেকে এক যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার উদ্ধার করা হয়েছে।”
ঘটনাস্থল থেকে দেশীয় তৈরি একটি এলজি, একটি তাজা কার্তুজ, দুটি খালি খোসা ও ১০০ পিস ইয়াবাও উদ্ধার করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, “নিহত যুবক মাদক ব্যবসায়ী হতে পারে। তাঁর পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে।”
আরও ৫ রোহিঙ্গা করোনা আক্রান্ত
এদিকে গত সোমবার আরও পাচঁ রোহিঙ্গা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বলে বেনারকে জানিয়েছেন কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের প্রধান স্বাস্থ্য সমন্বয়কারী ডা. আবু তোহা এম আর এইচ ভূঁইয়া।
তিনি জানান, এই নিয়ে করোনায় আক্রান্ত মোট রোহিঙ্গার সংখ্যা ৭১ জন, এই রোগে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ছয় জন রোহিঙ্গা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দুই লাখ ২৯ হাজার ১৮৫ জন। আর মৃত্যু হয়েছে তিন হাজার জনের।
যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে, এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন মোট এক কোটি ৬৫ লাখ ৪০ হাজারের বেশি মানুষ, মারা গেছেন ছয় লাখ ৫৫ হাজারের বেশি।