প্রাকৃতিক দুর্যোগে রোহিঙ্গা সহোদরসহ নিহত ১৪

শরীফ খিয়াম
2019.07.12
ঢাকা
190712_Heavy_rain_flood_1000.jpg ঝড়ো হাওয়ার কবলে পড়া এই মাছ ধরার নৌকাটিকে উদ্ধার করা হয়। ছবিটি কক্সবাজার সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে তোলা। ১১ জুলাই ২০১৯।
[সুনীল বড়ুয়া/বেনারনিউজ]

ঝড়ো হাওয়া, ভারী বর্ষণ ও বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে দুইদিনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ১০ জেলে, দুই রোহিঙ্গা শিশুসহ মোট ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। নদ-নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় ১০ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান শুক্রবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “আগামী কয়েক দিন ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে, তাতে বন্য পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।”

“আগামী দুদিন ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। সোমবার থেকে বৃষ্টির মাত্রা কমলেও তা একেবারে থেমে যাবে না,” বেনারকে বলেন অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান।

দূর্যোগ প্রতিমন্ত্রী বলেন, “দেশের নদ–নদীগুলোর ৬২৮টি ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়েছে, এর মধ্যে ২৬টি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সেসব পয়েন্ট রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়।”

আন্তঃমন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটির জরুরি সভা থেকে বেরিয়ে শুক্রবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। এর কিছুক্ষণ পরই বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশ সচিবালয়ে ‘কন্ট্রোল রুম’ চালু করে মন্ত্রণালয়।

এদিকে ভারী বর্ষণে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রধান শহরগুলোয় তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা, প্লাবিত হয়েছে প্রতিটি এলাকার নিম্নাঞ্চল। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সকাল থেকে বৃষ্টির মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় কার্যত অচল হয়ে পড়ে জনজীবন।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ১২ ঘন্টায় ৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। সবচেয়ে বেশ বৃষ্টিপাত হয়েছে দেশের উত্তর সীমান্তের উপজেলা তেতুঁলিয়ায়। সেখানে ১৯৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

১০ জেলা ঝুঁকিতে

গত ২৪ ঘণ্টায় লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কক্সবাজার এবং নীলফামারী জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এ তথ্য জানিয়ে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, “মাঠ পর্যায়ের সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।”

সরকারি হিসেবে, দুর্গত জেলাগুলোতে দুই কোটি ৯৩ লাখ টাকা, সাড়ে ১৭ হাজার মেট্রিক টন চাল এবং ৫০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে। এছাড়া প্রতি জেলায় দুয়েক দিনের মধ্যে পাঁচশটি করে তাবু পাঠানো হবে।

“ওইসব জেলায় দ্রুত মেডিকেল টিমও পৌঁছে যাবে,” বলেন প্রতিমন্ত্রী।

ত্রাণ সচিব শাহ কামাল সাংবাদিকদের বলেন, “পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ কবলিত প্রতিটি জেলায় দুই হাজার প্যাকেট করে মোট ৫০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে। প্রতিটি প্যাকেটে চিড়া, মুড়ি, বিস্কুট, তেল, আটা, মসুরের ডাল, শিশু খাবারসহ একটি পরিবারের সাত দিনের খাবার রয়েছে।”

“কোনো জেলা প্রশাসক চাহিদা জানালেই ত্রাণের চাল পাঠিয়ে দেওয়া হবে,” বলেন তিনি।

তিন জেলায় ১৪ মৃত্যু

দূর্যোগপূর্ণ আবহওয়ায় বঙ্গোপসাগরে ডুবে নিহত ১০ জেলের মধ্যে সাতজনের পরিচয় জানা গেছে। তাঁদের বাড়ি ভোলার চরফ্যাশনে।

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে কক্সবাজারে সাগর থেকে উপকূলে ভেসে আসা তিন জেলের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ উদ্দিন খন্দকার বেনারকে বলেন “এ নিয়ে গত দুই দিনে ১০ জেলের মৃতদেহ উদ্ধার করা হলো।”

ট্রলারের বেঁচে যাওয়া দুই জেলের একজন মনির মাঝি বেনারকে জানান, তাঁরা মোট ১৫ জন জেলে চরফ্যাশনের শামরাজ ঘাট থেকে গত ৪ জুলাই সাগরে মাছ ধরতে রওনা করেছিলেন। ঝড়ো হাওয়া ও উত্তাল ঢেউয়ের তোড়ে তাঁদের ট্রলারটি উল্টে যায়।

এদিকে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে পাহাড়ি ঢলে উখিয়ার থাইংখালীর হাকিমপাড়ার শরণার্থী শিবিরে পানিতে ডুবে দুই সহোদরের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হচ্ছে; আব্দুর সালামের ছেলে আনোয়ার সাদ (৬) ও আনোয়ার ফয়সাল (৪)।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল খায়ের বেনারকে বলেন, “রাত এগারোটার দিকে দুই ভাইয়ের ভাসমান মরদেহ দেখতে পান স্থানীয়রা। খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিল তারা।”

এ ছাড়া রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলা সদরে কাপ্তাই হ্রদ থেকে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পানিতে ডুবে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।

এর আগে বিজুরাজ চাকমা (৬৫) নামে আরেক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। জেলার বরকল উপজেলার ভূষণছড়া ইউনিয়নের উজানছড়ি এলাকা থেকে নদীর জোয়ারে ভেসে গিয়েছিলেন তিনি।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বেনারকে জানান, গত ৭২ ঘণ্টায় দেশের সবগুলো নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

“তবে এই পানিবৃদ্ধির মূল কারণ অভ্যন্তরীণ বৃষ্টিপাত নয়। আমাদের প্রধান নদীগুলোর পানি মূলত বাড়ে আসাম ও মেঘালয় আসা ঢলের কারণে। ভারতের ওই দুই রাজ্যে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে এবং আসামে ইতিমধ্যে বন্যা শুরু হয়ে গেছে,” বলেন ওই কর্মকর্তা।

কক্সবাজার থেকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন সুনীল বড়ুয়া

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।